মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ তাকে নিজ কুদরতি হাতে সৃষ্টি করেছেন, বিবেক ও বিচারবুদ্ধি দান করেছেন এবং সমগ্র সৃষ্টিজগতকে তার করায়ত্ত্বে দিয়েছেন। কিন্তু এই মহান মর্যাদা ও দায়িত্ব যখন মানুষ ভুলে যায়, যখন অন্যায়, অত্যাচার ও অহংকারে মত্ত হয়, তখনই সে নিজ হাতে নিজের জন্য দুর্ভোগ ও বিপর্যয় ডেকে আনে। আজকের বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া পরিবেশগত বিপর্যয়, সামাজিক অবক্ষয় ও ব্যক্তিগত দুর্দশার মূলে খোঁজ করলে এই সত্যই উন্মোচিত হয়।
প্রকৃতি ও সমাজের বিপর্যয়: মানুষেরই কৃতকর্মের ফল
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন- ‘মানুষের অর্জিত কর্মের কারণে স্থল ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে।’ (সুরা রুম: ৪১)
এই আয়াতটি বর্তমান সময়ের বন্যা, খরা, দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সংকটের মৌলিক কারণ নির্দেশ করে। আল্লাহ আরও বলেন- ‘তোমাদের উপর যে বিপদই আপতিত হয়, তা তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল। আর আল্লাহ অনেক কিছু ক্ষমাও করে দেন।’ (সুরা শুরা: ৩০)
এটি একটি গভীর জীবনবাস্তবতা যে, আমাদের ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত পাপাচারই দুনিয়া ও আখেরাতের কষ্টের বীজ বপণ করে।
আরও পড়ুন: গুনাহ ছেড়ে সুন্দর জীবনের ৮ রাস্তা
বিজ্ঞাপন
অন্যের ক্ষতি করা মানে নিজের ক্ষতি ডেকে আনা
রাসুলুল্লাহ (স.) সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করেছেন- ‘যে অপরের ক্ষতি করে, আল্লাহ তার ক্ষতি করেন। যে অযৌক্তিকভাবে কারো বিরোধিতা করে, আল্লাহ তার বিরোধী হন।’ (আবু দাউদ: ৩৬৩৫)
এই হাদিসের আলোকে প্রতিটি অত্যাচার, প্রতারণা, সম্পদ হরণ বা সম্মানহানি কেবল পার্থিব সমস্যা নয়; বরং এর পরিণতি আল্লাহর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে প্রকাশ পায়।
মুমিনদের কষ্ট দেয়া স্পষ্ট পাপের বোঝা
আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে সতর্ক করেন- ‘যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদেরকে তারা কোনো পাপ না করেও কষ্ট দেয়, তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব: ৫৮)
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার, মিথ্যা গুজব ছড়ানো বা ঈমানদার মানুষের সম্মানহানির চেষ্টা এই আয়াতের আলোকে অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ।
আরও পড়ুন: ১৪ পাপের শাস্তি দুনিয়ায় দেওয়া হয়
সফলতার একমাত্র পথ আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য
মুমিনদের প্রকৃত পরিচয় হলো আনুগত্য। আল্লাহ বলেন- ‘মুমিনদের কথা তো এই যে, যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দিকে তাদের ডাকা হয় যাতে তিনি তাদের মধ্যে ফায়সালা করেন, তখন তারা বলে- আমরা শুনলাম ও মানলাম।’ (সুরা নুর: ৫১)
এই আনুগত্যের প্রতিদান অতুলনীয়
‘যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, তিনি তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা স্থায়ী হবে।’ (সুরা নিসা: ১৩)
চূড়ান্ত সতর্কবার্তা: মন্দ কর্মের মন্দ ফল অবধারিত
আল্লাহর বাণী স্পষ্ট- ‘অতঃপর তাদের মন্দ কর্মের মন্দ ফল তাদের উপর আপতিত হলো। আর এদের মধ্যে যারা জুলুম করে, তাদের উপরও তাদের মন্দ কর্মের মন্দ ফল শীঘ্রই আপতিত হবে।’ (সুরা জুমার: ৫১)
আমাদের হাতেই পছন্দের চাবিকাঠি
জীবনের প্রতিটি ক্রসরোডে আমাদের একটি নির্বাচন করতে হয় যে, হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের মাধ্যমে হেদায়াত, শান্তি ও চিরস্থায়ী সাফল্যের পথ, নয়তো নিজ খেয়ালখুশি ও বিদ্রোহের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের বিপর্যয় নিজেই আমন্ত্রণ জানানো। ‘বলুন, আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তার উপর যা অর্পিত হয়েছে তার দায়িত্ব তার উপর, আর তোমাদের উপর যা অর্পিত হয়েছে তার দায়িত্ব তোমাদের উপর।’ (সুরা নুর: ৫৪)
আজকের প্রতিটি কর্ম, প্রতিটি চিন্তা ও প্রতিটি সম্পর্ক আগামীকালের ভিত্তি তৈরি করছে। বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজ হাতে নিজের ধ্বংস না ডেকে মহান স্রষ্টার দেওয়া পথে চলার মাধ্যমে প্রকৃত শান্তি ও সাফল্যের অধিকারী হয়।

