সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করার অফুরন্ত পুরস্কার

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করার অফুরন্ত পুরস্কার

সন্তানকে নামাজ শেখানো ও অভ্যস্ত করানো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ এবং এক বিশাল নেয়ামতের দ্বার। কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইসমাইল (আ.)-এর প্রশংসা করে বলেছেন,‘সে তার পরিবারকে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল আল্লাহর প্রিয় বান্দা।’ (সুরা মরিয়ম: ৫৫) ইবনে কাসির (রা.) ব্যাখ্যা করেন, ইসমাইল (আ.)-এর মর্যাদা এসেছে আল্লাহর আনুগত্যে দৃঢ়তা এবং পরিবারকে ঈমান ও আমল শেখানোর কারণে। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে এবং পরিবারের লোকদের আগুন থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা তাহরিম: ৬) অর্থাৎ পরিবারকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ শেখানো নিজের এবং পরিবারের পরকালীন মুক্তির একমাত্র পথ।

ধাপে ধাপে নামাজ শেখানোর সুন্নতি পদ্ধতি

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে পৌঁছলেই নামাজের নির্দেশ দাও, আর ১০ বছর হলে এর জন্য দণ্ড দাও। আর তাদের শোয়ার জায়গা আলাদা করে দাও।’ (আবু দাউদ: ৪৯৫, মুসনাদে আহমদ: ২/১৮০)  অর্থাৎ সাত বছর হলো শেখানোর সময়, দশ বছর হলো কৈশোরে আত্মসমর্পণের পর্যায়। এই ধাপে শিশুকে নামাজের প্রতি অভ্যস্ত করার জোরালো নির্দেশনা।

পারিবারিক ইবাদতের ফজিলত

সন্তানকে নামাজ শেখানো ও নিজের পারিবারিক ইবাদতের দিক নির্দেশনা দেওয়া বিশেষ রহমত লাভের পথ। রাসুলুল্লাহ (স.) দোয়া করেছেন, ‘আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে দয়া করুন, যে রাতে উঠে নিজেও সালাত আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও জাগায় এবং সেও সালাত আদায় করে। সে উঠতে না চাইলে তার মুখমণ্ডল পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ এমন নারীর প্রতিও অনুগ্রহ করুন, যে রাতে উঠে নিজে সালাত আদায় করে এবং তার স্বামীকেও জাগায়। সে উঠতে না চাইলে তার মুখন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ: ১৪৫০) অন্য হাদিসমতে, ‘রাতের বেলায় স্বীয় স্ত্রীকে সজাগ করে উভয়ে দু’ দু’ রাকত সালাত আদায় করলে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণকারী ও স্মরণকাণীর তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়।’ (আবু দাউদ: ১৩০৯)

আরও পড়ুন: স্বামী-স্ত্রী জামাতে নামাজ পড়লে ইকামত কে দেবে?


বিজ্ঞাপন


মৃত্যুর পরও সন্তানের নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে বাবা-মায়ের সওয়াব অব্যাহত থাকে। হাদিসে এসেছে, ‘মৃত্যুর পর বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়; তখন বলা হয়, তোমার সন্তান তোমার জন্য দোয়া করেছে।’ (আদাবুল মুফরদ: ৩৬) এছাড়া, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, মৃত্যুর পর তিনটি আমল ছাড়া সব বন্ধ হয়ে যায়: সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান, এবং নেক সন্তানের দোয়া। (মুসলিম: ১৬৩১)

সতর্কতা ও দায়িত্ব

রাসুলুল্লাহ (স.) সতর্ক করেছেন, ‘প্রত্যেককে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর ঘর ও সন্তানদের তত্ত্বাবধায়িকা; সে তাদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল।’ (বুখারি: ৮৯৩, ৫১৮৮)। পরিবারের ইবাদত ও নৈতিকতার অবহেলা সরাসরি জবাবদিহির বিষয়।

বাবা-মায়ের করণীয়

বাবা-মায়ের প্রথম কাজ হলো নিজে আদর্শবান হওয়া। সন্তান অনুকরণ করে শেখে; তাই নামাজের আদর্শ শিশুদের জন্য মূল শিক্ষা। ধৈর্য ও নিয়মানুবর্তিতা বজায় রেখে ধাপে ধাপে শেখানো উচিত। সাত বছর বয়সে নির্দেশনা দেওয়া, দশ বছর বয়সে তাগিদ ও নিয়মিত অভ্যাস, কৈশোরে আত্মসমর্পণ ও স্বচ্ছন্দে নামাজ আদায়ে উৎসাহিত করা।

সন্তানকে নামাজি করা শুধুমাত্র দায়িত্ব নয়; এটি চিরস্থায়ী বিনিয়োগ। এটি দুনিয়ায় পারিবারিক শান্তি, সম্মান ও বরকত দেয়, আখেরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি নিশ্চিত করে এবং মৃত্যুর পরও অব্যাহত সওয়াবের সুযোগ দেয়। আল্লাহর কাছে এটি রহমত ও সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। তাই বাবা-মা আজ থেকেই সন্তানকে নামাজ শেখানো শুরু করুন, ধৈর্য ধরে পথ দেখান এবং নিয়মিত দোয়া করুন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর