মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিধবা নতুন বিয়ে করলে আগের স্বামীর মিরাস পাবে?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

বিধবা নতুন বিয়ে করলে আগের স্বামীর মিরাস পাবে?

নারী ও পুরুষ উভয়ের মর্যাদা ও অধিকার সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করেছে ইসলাম। বিশেষ করে উত্তরাধিকার (মিরাস) বিষয়টি পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যাতে কারো হক নষ্ট না হয়। কিন্তু সমাজের অনেক স্থানে এখনো কিছু জাহেলি চিন্তা ও কুসংস্কার টিকে আছে, যার ফলে বিশেষ করে বিধবাদের প্রতি অবিচার করা হয়। তাদের মিরাস থেকে বঞ্চিত করা হয় কিংবা পুনর্বিবাহকে লজ্জার বিষয় হিসেবে দেখা হয়। অথচ ইসলাম এই দুই ক্ষেত্রেই স্পষ্ট ও ন্যায়নিষ্ঠ নির্দেশনা দিয়েছে।

ইসলামে নারীর মিরাসের অধিকার

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন- ‘মা-বাবা ও নিকটতর আত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং মা-বাবা ও নিকটতর আত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে। তা অল্পই হোক বা বেশি, এক নির্ধারিত অংশ।’ (সুরা নিসা: ৭)

এই আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, নারীও উত্তরাধিকারের নির্ধারিত অংশের হকদার। স্বামীর মৃত্যুর সময় যদি স্ত্রী জীবিত থাকেন, তবে তিনি স্বামীর সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ পাবেন; তা অল্প হোক বা বেশি। এই অধিকার কেবল মৃত্যুর মুহূর্তে জীবিত থাকা সাপেক্ষে নির্ধারিত হয়। পরবর্তীতে তিনি অন্যত্র বিয়ে করলেও তার মিরাস প্রাপ্তির ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না।

আরও পড়ুন: বিধবা নারীকে বিয়ে করার সওয়াব

ভুল ধারণা: ‘অন্যত্র বিবাহ করলে মিরাস নেই’

আমাদের সমাজে কারো কারো ধারণা, স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী যদি অন্যত্র বিয়ে করেন, তাহলে তিনি পূর্বের স্বামীর মিরাস পাওয়ার অধিকার হারান। এটি একেবারেই ভিত্তিহীন ও জাহেলি চিন্তা। ইসলামে এমন কোনো শর্ত নেই।

বাস্তবতা হলো: স্বামীর মৃত্যুর সময় স্ত্রী জীবিত থাকলেই তিনি স্বামীর সম্পদের হকদার হয়ে যান। তার পরবর্তী বিয়ে, স্থানান্তর বা জীবনধারার কোনো পরিবর্তনই সেই হকের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না। তাই কোনো নারীকে কেবলমাত্র পুনর্বিবাহের কারণে মিরাস থেকে বঞ্চিত করা হলে তা হবে বড় ধরনের কবিরা গুনাহ; একদিকে তার হক আত্মসাৎ করা, অন্যদিকে শরিয়তের বিকৃতি সাধন।

ইসলামি দৃষ্টিতে বিধবার পুনর্বিবাহ

ইসলামে বিধবার পুনর্বিবাহ নিষিদ্ধ নয়; বরং এটি উৎসাহিত একটি কাজ। কোরআন-হাদিসে বিধবাদের ইদ্দত পালনের পর বৈধভাবে পুনর্বিবাহের সুস্পষ্ট অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) নিজেও বিধবাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন এবং সাহাবিদের তা করতে উৎসাহিত করেছেন।

আরও পড়ুন: স্বামী মারা গেলে নাকফুল খুলে ফেলা কি জরুরি?

তবে দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজে এখনো বিধবার বিয়েকে সামাজিকভাবে অসম্মানজনক মনে করা হয়, যা সম্পূর্ণ জাহেলি রীতি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন এক জুলুম- অন্যদের বিয়ের কারণে বিধবাকে পূর্ব স্বামীর মিরাস থেকে বঞ্চিত করা। এটি কোরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট বিধান অমান্য করার শামিল।

অভিভাবকদের করণীয়

যাদের তত্ত্বাবধানে কোনো বিধবা নারী আছেন, তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো- বাস্তব কোনো ওজর না থাকলে তার পুনর্বিবাহের ব্যবস্থা করা। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই কোনো ওজর নয়। এর মাধ্যমে যেমন একজন নারীর নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত হয়, তেমনি এতে এক মৃত সুন্নতকে জীবিত করার বিশাল সওয়াবও রয়েছে।

মোটকথা, বিধবা নারীর মিরাসের অধিকার ও পুনর্বিবাহের অনুমতি-দুটিই ইসলামের স্পষ্ট ও দৃঢ় বিধান। এগুলো অস্বীকার করা বা পরিবর্তনের চেষ্টা করা বড় গুনাহ এবং শরিয়তের অবমাননা। মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো- নারীর প্রাপ্য হক যথাযথভাবে আদায় করা, কুসংস্কার পরিহার করা এবং সমাজে ইসলামের ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করা। ‘যে ব্যক্তি অন্যের হক অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, সে কেয়ামতের দিন আগুনের অংশ পাবে।’ (সহিহ বুখারি) আল্লাহ আমাদের সবাইকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ইসলামের বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দিন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর