দাড়ি রাখা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং পুরুষত্বের স্বকীয়তা। আল্লাহ তাআলা পুরুষকে দাড়ি দিয়ে নারী জাতি থেকে আলাদা করেছেন। এটি নবী-রাসুলগণের সুন্নত, মুমিনের অলংকার এবং প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আল্লাহর দান।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশসমূহকে সম্মান করে, নিশ্চয়ই সেটি হৃদয় নিঃসৃত আল্লাহভীতির প্রকাশ।’ (সুরা হজ: ৩২) ‘আর রাসুল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।’ (সুরা হাশর: ৭) ‘অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা সাবধান হোক যে, ফেতনা তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের উপর আপতিত হবে।’ (সুরা নুর: ৬৩)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘গোঁফ খাটো করো এবং দাড়ি লম্বা করো।’ (সহিহ বুখারি: ৫৮৯৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: দাড়ি পুরুষের সৌন্দর্য
ইসলামি শরিয়তে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব এবং দাড়ি মুণ্ডন করা বা শেভ করা হারাম। কেননা কোনো বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নির্দেশ সেই বিধান ওয়াজিব হওয়ার দলিল। হাদিসে এসেছে, ‘মোচ উত্তমরূপে কাটো এবং দাড়ি লম্বা করো। অগ্নি পূজারীদের বিরোধিতা করো।’ (সহিহ বুখারি: ২/৮৭৫; সহিহ মুসলিম: ১/১২৯; রদ্দুল মুহতার: ১/১০০; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৫৮)
দাড়ির সংজ্ঞা
দুই চোয়ালের দাঁতবিশিষ্ট হাড়ের ওপর গজানো পশম এবং কান ও চোখের মধ্যবর্তী স্থানে গজানো সারিবদ্ধ পশমই হলো দাড়ি। কোনো কোনো ইসলামি আইনবিদের মতে, ঠোঁটের নিচের অংশে গজানো পশম ও নাকের উভয় দিক সংলগ্ন গালের ওপর গজানো ও থুতনির নিচের নরম অংশে গজানো পশমও দাড়ির অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এসব পশম কাটা বা উপড়ানো অনুচিত। (রদ্দুল মুহতার: ১/১০০, ৫/৩৭৩; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৫৮)
বিজ্ঞাপন
দাড়ি রাখার ফজিলত
১. নবুয়তের সুন্নাত অনুসরণ: সকল নবী-রাসুল দাড়ি রেখেছেন।
২. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশসমূহকে সম্মান করে, নিশ্চয়ই সেটি হৃদয় নিঃসৃত আল্লাহভীতির প্রকাশ।’ (সুরা হজ: ৩২)
৩. মুমিনের বৈশিষ্ট্য ও অলংকার
৪. প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য
৫. মুশরিকদের বিরোধিতা
আরও পড়ুন: দাড়িবিহীন ব্যক্তির পেছনে নামাজ পড়া যাবে কি?
দাড়ি না রাখার ক্ষতি
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘যে আমাদের সাথে সাদৃশ্য রাখবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ বুখারি: ৩৫০)
সমসাময়িক ভুল ধারণার নিরসন
ভুল ১: ‘দাড়ি রাখা শুধু সুন্নত’: বড় মাজহাবগুলো ও রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী ওয়াজিব।
ভুল ২: ‘চাকরি বা স্ত্রীর খুশির জন্য কাটা যাবে’: বাস্তবে এ ধরণের অজুহাত দাঁড় করানোর অনুমোদন কোরআন-হাদিসে নেই।
ভুল ৩: ‘পাতলা হলে রাখার দরকার নেই’: এটিও ভুল কথা। বাস্তবে যতটুকু আছে, ততটুকুই রাখা ওয়াজিব।
আরও পড়ুন: পানি গোঁফে লাগলে কি হারাম হয়ে যায়?
বাস্তব জীবনে বাস্তবায়নের পরামর্শ
১. দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি দরকার। সমাজের দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে দাঁড়ি রাখুন।
২. ধীরে ধীরে শুরু করুন।
৩. পরিবারকে কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা ব্যবহার করে সতর্ক করুন।
৪. দোয়া ও ইস্তিগফার করুন- ‘হে আল্লাহ! আমাকে সুন্নত মেনে চলার তাওফিক দিন।’
৫. দাড়িদার বন্ধু বানান। এটি আপনাকে দাড়ি রাখতে অনুপ্রাণিত করবে।
মূলত, দাড়ি রাখা বাহ্যিক কোনো বিষয় নয়; বরং এটি ঈমানের প্রকাশ, নবুয়তের সুন্নত অনুসরণের নিদর্শন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপায়। দাড়ি রেখে আমরা মুশরিকদের থেকে আলাদা থাকি এবং ইসলামের স্বকীয়তা বজায় রাখি। হে আল্লাহ! মুসলিম উম্মাহকে নবী-রাসুল ও সাহাবিদের সুন্নত অনুসরণের তাওফিক দিন। সমাজের বাঁকা দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ইসলামি বিধানের অনুগত হওয়ার তাওফিক দিন। পারিবারিকভাবে বিশুদ্ধ ইসলাম চর্চার তাওফিক দিন। আমিন।

