জাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং ফরজ ইবাদত। এটি কেবল আর্থিক কর্তব্য নয়, বরং একটি পরিপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা ও ন্যায়-বিচার ব্যবস্থা। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জাকাতের গুরুত্ব, ফরজিয়াত এবং সুফল বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
জাকাতের ফরজিয়াত ও গুরুত্ব
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সালাত কায়েম করো, জাকাত আদায় করো।’ (সুরা বাকারা: ১১০)
হাদিসেও ইসলামের মূল স্তম্ভগুলোর মধ্যে জাকাতকে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। ১. এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া- আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল। ২. সালাত কায়েম করা। ৩. জাকাত আদায় করা। ৪ হজ করা। ৫. রমজানের রোজা রাখা। (সহিহ বুখারি: ৮)
আরও পড়ুন: জাকাত দেওয়ার খাতগুলো কী, কখন ফরজ হয়?
জাকাতের ব্যক্তিগত ও সামাজিক সুফল
১. আধ্যাত্মিক সুফল
ঈমানের দলিল: সালাত হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি; ‘সদকা (জাকাত) হলো দলিল।’ (সহিহ মুসলিম: ৪২২)
অর্থাৎ জাকাত মুমিনের দৃঢ় ঈমানের প্রমাণ।
আত্মশুদ্ধি: ‘আপনি তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যাতে আপনি তা দ্বারা তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে পারেন।’ (সুরা তাওবা: ১০৩)
অর্থাৎ জাকাত মুক্তি দেয় কৃপণতা, ধন-লোভ ও দুনিয়ার আসক্তি থেকে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি: সালাত প্রতিষ্ঠাকারী, জাকাত প্রদানকারী এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান আনয়নকারী, তাদেরকে অচিরেই আমরা মহা পুরস্কার দেব। (সুরা নিসা: ১৬২)
আরও পড়ুন: কত ভরি স্বর্ণ থাকলে জাকাত দিতে হবে ২০২৫
২. অর্থনৈতিক সুফল
দারিদ্র্য বিমোচন: জাকাত অভাবগ্রস্তদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে। (সহিহ বুখারি: ১৩৯৫)
সম্পদের বরকত: জাকাত অর্থের পবিত্রতা নিশ্চিত করে এবং বরকত বৃদ্ধি করে। (সুরা সাবা: ৩৯) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দান করো, তাহলে তোমাদেরকে (সম্পদে) বৃদ্ধি দেওয়া হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৪৬৮৯)
অর্থনৈতিক প্রবাহ: ধনীদের সম্পদে দরিদ্রদের অধিকার নিশ্চিত হয়। (সহিহ মুসলিম: ২২৮০)
৩. সামাজিক সুফল
সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা: জাকাত ধনী-দরিদ্রের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সামাজিক সমতা সৃষ্টি করে। (সুরা মাআরিজ: ২৪-২৫)
সামাজিক নিরাপত্তা: দরিদ্রদের জন্য আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা। (সহিহ মুসলিম: ৪৮৬৮)
ঐক্য: মুমিনদের মধ্যে দয়া, সমবেদনা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়। (সহিহ বুখারি: ৬০১১)
আরও পড়ুন: জাকাতের সব টাকা একজনকে দেওয়া যাবে?
জাকাত না দেওয়ার পরিণতি
‘যারা সোনা-রূপা জমা করে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন।’ (সুরা আত-তাওবা: ৩৪-৩৫)
‘যে ব্যক্তি জাকাত আদায় করে না, কেয়ামতের দিন তার সম্পদ সাপের রূপ ধারণ করে তাকে কামড়াবে।’ (সহিহ বুখারি: ১৪০৩)
জাকাত আদায়ের প্রতিদান
‘যারা সালাত আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে, আমি তাদের মহাপুরস্কার দেব।’ (সুরা নিসা: ১৬২)
আরও পড়ুন: নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে কী বুঝায়
বাস্তবায়নের পরামর্শ
১. নিসাব পরিমাণ সম্পদের হিসাব রাখা।
২. জাকাতের হার (২.৫%) সঠিকভাবে গণনা করা।
৩. যোগ্য গ্রহীতাকে জাকাত বণ্টন করা।
৪. বার্ষিকভাবে নির্দিষ্ট সময়ে জাকাত আদায় করা।
জাকাত কেবল আর্থিক দান নয়; এটি আধ্যাত্মিক উন্নয়ন, সামাজিক সমতা ও অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে, সম্পদের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সুযোগ দেয়। আসুন, আমরা সঠিকভাবে জাকাত আদায় করি এবং ব্যক্তি, সমাজ ও আধ্যাত্মিক জীবনে পূর্ণাঙ্গ কল্যাণ অর্জন করি।

