আল্লাহ তাআলার দয়া ও রহমত অসীম, সীমাহীন ও সর্বব্যাপী। তিনি দয়ার আধার, করুণার উৎস। তাঁর অনুগ্রহ ছাড়া সৃষ্টিজগতের অস্তিত্ব কল্পনাই করা যায় না। মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ থেকে শুরু করে আসমান-জমিন— সবকিছুই আল্লাহর রহমতের ফলশ্রুতি। তিনি দুনিয়াতে প্রত্যেক সৃষ্টির জন্য দয়া বিস্তার করেছেন; মুমিন-কাফের নির্বিশেষে সবাই তাঁর দয়ার ছায়ায় বেঁচে আছে। আবার আখেরাতে তাঁর রহমত হবে বিশেষভাবে মুমিনদের জন্য বরকতের খনি।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে একাধিকবার আল্লাহ তাঁর এই অপার অনুগ্রহ ও রহমতের কথা উল্লেখ করেছেন, যাতে মানুষ তাঁর দয়া স্মরণ করে কৃতজ্ঞ হয় এবং আশা হারিয়ে না ফেলে। আল্লাহর দয়া ছাড়া সৃষ্টিজগত টিকে থাকতে পারত না।
বিজ্ঞাপন
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এরপরও তোমরা মুখ ফিরালে! অতঃপর তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং অনুকম্পা না থাকলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হতে।’ (সুরা বাকারা: ৬৪) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।’ (সুরা বাকারা: ২৪৩)
‘...কিন্তু আল্লাহ সৃষ্টিকুলের প্রতি অনুগ্রহশীল।’ (সুরা বাকারা: ২৫১) ‘বলুন, আসমানে আর জমিনে যা আছে তা কার? বলুন, আল্লাহরই। দয়া করা তিনি তাঁর জন্য কর্তব্য স্থির করে নিয়েছেন…’ (সুরা আলে ইমরান: ১২) ‘আমার দয়া—তা তো প্রত্যেক বস্তুকে ঘিরে রয়েছে।’ (সুরা আরাফ: ১৫৬) ‘পথভ্রষ্টরা ছাড়া কে তার রবের রহমত থেকে নিরাশ হয়?’ (সুরা হিজর: ৫৬)
আরও পড়ুন: আল্লাহ যে কারণে ভালো-খারাপ সবাইকে রহমত করেন
দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর রহমতের প্রকাশ
আল্লাহর রহমত দুনিয়া ও আখেরাত—উভয় জগতেই প্রবলভাবে প্রকাশিত হবে। কেউই তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত নয়। আল্লাহ নিজের ওপর রহমতকে অবধারিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান রাখে, তারা যখন তোমার কাছে আসে, (তখন তাদেরকে) বলুন, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।’ তোমাদের প্রতিপালক নিজের ওপর রহমতকে অবধারিত করে নিয়েছেন; তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অজ্ঞতাবশত কোনো মন্দ কাজ করে, তারপর তাওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে, তবে আল্লাহ তো অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আনআম: ৫৪)
এমনকি বড় বড় পাপের শাস্তি থেকেও দুনিয়াতে রেহাই পাওয়া আল্লাহর রহমতের ফল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দুনিয়া ও আখেরাতে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না হলে তোমরা যে বিষয়ে জড়িয়ে পড়েছিলে, তজ্জন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করত কঠিন শাস্তি।’ (সুরা নূর: ১৪)
আখেরাতে আল্লাহ তাঁর ক্ষমা ও রহমতের পূর্ণতা প্রদর্শন করবেন। এজন্যই তাঁর গুণবাচক নামগুলোর মধ্যে রয়েছে আর-রহমান (পরম দয়ালু) ও আর-রহিম (অতিশয় দয়াবান)। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আল্লাহ যখন সৃষ্টি কাজ সম্পন্ন করলেন, তখন তিনি একটি কিতাবে লিখলেন, যা তাঁর নিকট আরশের ওপর রয়েছে- ‘নিশ্চয় আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল।’ (সহিহ বুখারি: ৩১৯৪, ৭৪০৪; সহিহ মুসলিম: ২৭৫১)
আরও পড়ুন: মানুষকে ক্ষমা করলে আল্লাহ যে পুরস্কার দেবেন
আরও বর্ণিত আছে- ‘আল্লাহ তাআলা একশ’ ভাগ রহমত সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে নিরানব্বই ভাগ তিনি নিজ কাছে রেখে দিয়েছেন, আর এক ভাগ রহমত সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে বণ্টন করেছেন।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪৬৯; সহিহ মুসলিম: ২৭৫২)
দুনিয়া ও আখেরাতের সব সৃষ্ট জীবের মধ্যে যে দয়া ও অনুগ্রহ দেখা যায়, তা ওই এক ভাগ রহমতের প্রতিফলন মাত্র। অবশিষ্ট ৯৯ ভাগ রহমত কেয়ামতের দিন আল্লাহ মুমিনদের জন্য সংরক্ষণ করেছেন। রহমতের পূর্ণতা আখেরাতে মুমিনদের জন্য অপেক্ষা করছে।
মানুষকে দয়ালু হওয়ার আহ্বান
আল্লাহ চান তাঁর বান্দারা দয়াশীল হোক। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যারা দয়া করে, দয়াময় আল্লাহও তাদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া করো, তাহলে আকাশের মালিকও (আল্লাহ) তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (সুনানে তিরমিজী: ১৯২৪; সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৪১)
আরও পড়ুন: ৪ আলামতে বুঝবেন আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসেন
কোনো বান্দা যখন অপর বান্দার প্রতি সদয় হয়, তখন আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। তাই আমাদের উচিত দয়া ও অনুগ্রহের গুণ অর্জন করা, যাতে আল্লাহর অসীম রহমত আমাদের উপর বর্ষিত হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর রহমত লাভের মতো আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।

