আল্লাহর রহমত বা অনুগ্রহ থেকে কেউ বঞ্চিত হয় না। সবার ওপর সর্বাবস্থায় আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। আসলে তিনি দয়া-অনুগ্রহ না করে পারেন না। কারণ বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলা নিজের ওপর রহমতকে অবধারিত করে নিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- وَ اِذَا جَآءَكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيٰتِنَا فَقُلْ سَلٰمٌ عَلَيْكُمْ كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلٰي نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ اَنَّهٗ مَنْ عَمِلَ مِنْكُمْ سُوْٓءًۢا بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنْۢ بَعْدِهٖ وَ اَصْلَحَ فَاَنَّهٗ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‘যারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান রাখে, তারা যখন তোমার কাছে আসে, (তখন তাদেরকে) বলো, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের প্রতিপালক নিজের ওপর রহমতকে অবধারিত করে নিয়েছেন; তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অজ্ঞতাবশত কোনো মন্দ কাজ করে, তারপর তাওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে, তবে আল্লাহ তো অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আনআম: ৫৪)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: মানুষকে ক্ষমা করলে আল্লাহ যে পুরস্কার দেবেন
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক রহমতকে নিজের ওপর অবধারিত করে নিয়েছেন।’ অর্থাৎ ভালো-খারাপ সবাইকে তিনি রহমত করেন। নেয়ামত দান করতে থাকেন। মুসলিমের প্রতি যেমন তাঁর অনুগ্রহ রয়েছে, অবিশ্বাসীদের প্রতিও তাঁর অনুগ্রহ রয়েছে। যারা তাঁর বিধান পালেন অনুগত তারা যেমন তাঁর রহমত পান, অবাধ্যদেরও রহমত থেকে বঞ্চিত করা হয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন- قَالَ عَذَابِيْۤ اُصِيْبُ بِهٖ مَنْ اَشَآءُ ‘আর আমার দয়া, সে তো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত।’ (সুরা আরাফ: ১৫৬)
আল্লাহর রহমতের কারণেই বড় বড় পাপের শাস্তি থেকে দুনিয়াতে রেহাই দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- وَ لَوْ لَا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ وَ رَحْمَتُهٗ فِي الدُّنْيَا وَ الْاٰخِرَةِ لَمَسَّكُمْ فِيْ مَاۤ اَفَضْتُمْ فِيْهِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ ‘দুনিয়া ও আখেরাতে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না হলে তোমরা যে বিষয়ে জড়িয়ে পড়েছিলে তজ্জন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করত কঠিন শাস্তি। (সুরা নুর: ১৪)
বিজ্ঞাপন
আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ দুনিয়াতে যেমন বিদ্যমান, আখেরাতে আরও বেশি আকারে বিদ্যমান থাকবে। তিনি সেদিন তাঁর মাগফিরাত ও রহমতের সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটাবেন। তাঁর প্রতি বিশ্বাসী মুমিনদের ব্যাপকভাবে ক্ষমা করবেন। এজন্যই আল্লাহ তাআলার অন্যতম প্রধান গুণবাচক নাম, আর-রহমান (দয়াবান) এবং আর-রহিম (পরম দয়ালু)। আল্লাহ তাআলা কত পদ্ধতিতে বান্দাকে রহমত করেন এবং করবেন তা পবিত্র কোরআনের শতাধিক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। হাদিস শরিফেও আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে অনেক আলোচনা রয়েছে।
এক হাদিসে রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন- لَمَّا قَضَى اللهُ الْخَلْقَ، كَتَبَ فِي كِتَابِهِ، فَهُوَ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ: إِنَّ رَحْمَتِي سَبَقَتْ غَضَبِي ‘আল্লাহ যখন সবকিছু সৃষ্টি করেন, তখন তিনি একটি কিতাবে লেখেন, ‘আমার অনুগ্রহ আমার ক্রোধের ওপরে’। সেই কিতাবটি আরশে তাঁর কাছে রয়েছে। (সহিহ বুখারি: ৩১৯৪, ৭৪০৪; সহিহ মুসলিম: ২৭৫১)
তিনি আরও ইরশাদ করেন- إِنَّ اللهَ خَلَقَ الرَّحْمَةَ يَوْمَ خَلَقَهَا مِائَةَ رَحْمَةٍ، فَأَمْسَكَ عِنْدَهُ تِسْعًا وَتِسْعِينَ رَحْمَةً، وَأَرْسَلَ فِي خَلْقِهِ كُلِّهِمْ رَحْمَةً وَاحِدَةً ‘আল্লাহ এক শ ভাগ রহমত সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে নিরানব্বই ভাগ নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। আর এক ভাগ দয়া তাঁর সকল সৃষ্টির মাঝে ভাগ করে দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি: ৬৪৬৯; সহিহ মুসলিম: ২৭৫২, ২৭৫২)
আরও পড়ুন: ৪ আলামতে বুঝবেন আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসেন
পৃথিবীর শুরু থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সকল সৃষ্টিজীব সকলক্ষেত্রে যত দয়া ও অনুগ্রহের পরিচয় দিয়েছে এবং দেবে, এসবকিছুই সেই এক ভাগের অন্তর্ভুক্ত। বাকি ৯৯ ভাগ আল্লাহ তাআলার কাছে। মহান সত্তা সেই ৯৯ ভাগ দয়া ও অনুগ্রহের ধারক এবং এর প্রকাশ তিনি সকলক্ষেত্রে ঘটিয়ে থাকেন।
আল্লাহ তাআলা চান, আমাদের স্বভাবে তাঁর অনুগ্রহের গুণ ছড়িয়ে পড়ুক। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন- الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمنُ، ارْحَمُوا مَنْ فِي الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ -‘অনুগ্রহকারীদের ওপরে আল্লাহও অনুগ্রহ করেন। তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি অনুগ্রহ করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন (আল্লাহ) তিনিও তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন।’ (তিরমিজি: ১৯২৪; আবু দাউদ: ৪৯৪১)
কোনো বান্দা যখন অপর বান্দার প্রতি দয়া করে, আল্লাহ তাআলা খুশি হন। এজন্য আমাদের প্রত্যেকের জন্য জরুরি- দয়া ও অনুগ্রহের বৈশিষ্ট্য অর্জন করা। এতে আল্লাহ বান্দার প্রতি আরো বেশি রহমত বর্ষণ করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

