রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সবসময় ইস্তেগফার করলে ১৫ নেয়ামত লাভ হয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

সবসময় ইস্তেগফার করলে ১৫ নেয়ামত লাভ হয়

ইস্তেগফার বা ক্ষমাপ্রার্থনা ইসলামের একটি মহামূল্যবান আমল। এটি শুধু আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধিই আনে না, বরং দুনিয়াবি জীবনেও নানাবিধ বরকত বয়ে আনে। নিম্নে কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইস্তেগফারের ১৫টি ফজিলত উপস্থাপন করা হলো।

১. গুনাহ মাফ হয়

দলিল: ‘আর কেউ যদি মন্দ কাজ করে অথবা নিজের উপর জুলুম করে, তারপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায়, তবে সে আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।’ (সুরা নিসা: ১১০)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার গুনাহ মাফের সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করতে ভালোবাসেন।

২. বিপদ-আপদ দূর হয়

দলিল: ‘আর আল্লাহ এমন নন যে, আপনি তাদের মধ্যে থাকবেন অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন।’ (সুরা আনফাল: ৩৩)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার আল্লাহর শাস্তি ও গজব থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম।

৩. রিজিকে প্রাচুর্য আসে  

দলিল: ‘আর আমি বলেছিলাম, তোমরা তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা চাও। নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের প্রতি আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।’ (সুরা নূহ: ১০–১১)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এতে দুনিয়ায় প্রাচুর্য আসে।

আরও পড়ুন: যেসব আমলে হালাল রিজিকের দরজা খুলে যায়

৪. সন্তানের কল্যাণ

দলিল: ‘তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করবেন।’ (সুরা নূহ: ১২)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার সন্তানদের জন্য নেয়ামত ডেকে আনে।

৫. আত্মিক শুদ্ধি লাভ

দলিল: ‘নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি সফল, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে।’ (সুরা শামস: ৯)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফারের মাধ্যমেই নিজেকে পরিশুদ্ধ করা সম্ভব এবং তা অন্তরকে আলোকিত করে।

৬. পারিবারিক শান্তি

দলিল: ‘যে ব্যক্তি অধিক ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তার প্রতিটি চিন্তার মুক্তি দিবেন, প্রতিটি সংকটের পথ খুলে দিবেন এবং অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে তাকে রিজিক দিবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৮)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার পারিবারিক অশান্তি ও উদ্বেগ দূর করে।

৭. আল্লাহর সন্তুষ্টি

দলিল: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা: ২২২)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের অন্যতম পথ।

আরও পড়ুন: আল্লাহ কারো প্রতি সন্তুষ্ট হলে যে আলামত প্রকাশ পায়

৮. দুশ্চিন্তা দূরীকরণ

দলিল: ‘যে ব্যক্তি অধিক ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তার প্রতিটি চিন্তার মুক্তি দিবেন, প্রতিটি সংকটের পথ খুলে দিবেন এবং অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে তাকে রিজিক দিবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৮)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার মানসিক শান্তি এনে দেয় এবং মনকে ভারমুক্ত করে।

৯. বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক নেয়ামত

দলিল: ‘তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।’ (সুরা নূহ: ১১)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার বর্ষণ, ফসল ও পরিবেশগত বরকতের কারণ।

১০. সম্পদে বরকত

দলিল: ‘তিনি তোমাদের ধন-সম্পদে বরকত দিবেন।’ (সুরা নূহ: ১২)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার সম্পদে স্থায়িত্ব আনে।

আরও পড়ুন: ভালো উপার্জনের পরও বরকত না থাকার কারণ

১১. সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধি

দলিল: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেন।’ (সহিহ মুসলিম)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার আল্লাহর কাছে বিনয় প্রকাশের এক মহান চিহ্ন এবং এতে বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

১২. গজব থেকে রক্ষা

দলিল: ‘আর আল্লাহ এমন নন যে, আপনি তাদের মধ্যে থাকবেন অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন।’ (সুরা আনফাল: ৩৩)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার ব্যক্তি ও জাতিগত গজব থেকে রক্ষা করে।

১৩. দোয়া কবুলের মাধ্যম

দলিল:  ‘তুমি তোমার রবের প্রশংসা তসবি পাঠ করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী।’ (সুরা নসর: ৩)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার করলে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়ে।

১৪. হৃদয়ের পবিত্রতা

দলিল: ‘ ‘বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহের কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তখন তার অন্তর পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। (তিরমিজি: ৩৩৩৪)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার অন্তরের মরিচা ও কঠোরতা দূর করে।

১৫. জান্নাত লাভ

দলিল: ‘যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে ইস্তেগফার (সাইয়িদুল ইস্তেগফার) পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়া পড়ে নেবে আর সে ভোর হওয়ার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতি হবে। (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)
ব্যাখ্যা: ইস্তেগফার জান্নাত লাভের পথ তৈরি করে।

শেষ কথা

ইস্তেগফার মুমিনের জীবনের একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। আসুন, আমরা নিয়মিত এই আমলটি করার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ অর্জন করি। ইস্তেগফারের এই দোয়াটি পাঠ করি— ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি’ (আমি সেই মহান সত্তার কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক, আমি তাঁর কাছেই তাওবা করছি।)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নিয়মিত ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর