রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জান্নাতে শিশুদের যেভাবে লালন-পালন করা হয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

জান্নাতে শিশুদের যেভাবে লালন-পালন করা হয়

ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, শিশুরা মারা গেলে জান্নাতে যায় এবং সেখানে বিশেষ মর্যাদা পায়। কেয়ামতের দিন তাদের মা-বাবার কাছে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত তারা বিশেষ যত্নের সঙ্গে লালিত পালিত হয়। তারা সবসময় ফূর্তির মধ্যে থাকে। তাদের খেলাধুলার জন্য বিশেষ খেলনা থাকে। হজরত ইবরাহিম আ. ও সারাহ (আ.) তাদের দেখাশুনা করেন।

জান্নাতে শিশুদের অবস্থান

রাসুলুল্লাহ (স.) নিজের স্বপ্নের বর্ণনায় বলেন— ‘আমরা চলতে চলতে একটা সবুজ শ্যামল বাগানে এসে পৌঁছলাম, যেখানে বসন্তের বিচিত্র রকম ফুলের সমাহার। সে বাগানের মাঝে দীর্ঘকায় একজন পুরুষকে দেখলাম। তবে তাঁর মাথা যেন আমি দেখতেই পাচ্ছিলাম না। তাঁর চতুর্পাশে এত বিপুল সংখ্যক বালক-বালিকা দেখলাম যে, এত বেশি আর কখনও আমি দেখিনি। আমি ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করলাম, উনি কে? আমাকে বলা হলো, উনি ইবরাহিম (আ.) আর তাঁর আশপাশের বালক-বালিকারা হলো ওইসব শিশু, যারা ফিতরাতের (শৈশবের নিষ্পাপ অবস্থা) ওপর মৃত্যুবরণ করেছে।’ (বুখারি: ৪২৯)

আরও পড়ুন: অমুসলিম শিশুরাও যে কারণে জান্নাতে যাবে

জান্নাতে শিশুদের খেলাধুলা

হাদিসে এসেছে- أَوْلَادُ الْمُسْلِمِينَ فِي جَنَّةِ عَدْنٍ، يُرَبِّيهِمْ إِبْرَاهِيمُ وَسَارَةُ ‘মুসলিমদের শিশুরা জান্নাতুল আদনে থাকবে, তাদের ইবরাহিম ও সারাহ লালন-পালন করবেন।’ ‘তারা জান্নাতে রূপা ও ইয়াকুত পাথরের খেলনা নিয়ে খেলবে।’ (আবু দাউদ; মুসনাদে আহমদ) অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মুমিনদের শিশুরা জান্নাতের একটি পাহাড়ে থাকবে, যেখানে ইবরাহিম (আ.) ও সারাহ (আ.) তাদের দেখভাল করবেন।’ (মুসনাদ আহমদ) 


বিজ্ঞাপন


জান্নাতে শিশুদের খাবার

বিভিন্ন হাদিস অনুযায়ী, জান্নাতে শিশুদের জন্য প্রস্তুত থাকবে: পুষ্টিকর দুধ ও মধু, বিভিন্ন স্বাদের ফলমূল, পছন্দমতো মাছ-মাংস ইত্যাদি, যা ইবরাহিম (আ.)-এর বিশেষ তত্ত্বাবধানে পরিবেশন করা হবে- إِنَّ إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَأْخُذُ أَطْفَالَ أَهْلِ الْجَنَّةِ بِيَدِهِ فَيُطْعِمُهُمْ ‘ইবরাহিম (আ.) জান্নাতের শিশুদের হাতে হাত রেখে খাওয়াবেন।’ (ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল তার মুসনাদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন) ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন- أَطْفَالُ أَهْلِ الْجَنَّةِ يَأْكُلُونَ وَيَشْرَبُونَ فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ ‘জান্নাতের শিশুরা স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে আহার ও পান করবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)

তারা সুপারিশকারী হবে

নবী (স.) বলেছেন- إِنَّ أَطْفَالَنَا دَعَامِيصُ أَهْلِ الْجَنَّةِ ‘আমাদের শিশুরা জান্নাতবাসীদের জন্য সুপারিশকারী হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৬৩৫, সুনানে তিরমিজি: ১৯১২)
অন্য হাদিসের বর্ণনায় يَشْفَعُ الْوَلَدُ لِأَبَوَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘কেয়ামতের দিন সন্তান তার পিতামাতার জন্য সুপারিশ করবে।’ (মুসনাদ আহমদ: ১০২৩৪, সহিহ ইবনে হিব্বান: ২৯৬০)
আরেক হাদিসে এসেছে, ‘শিশু (অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী) মুসলিম সন্তানেরা জান্নাতের ‘শিশু খাদেম’ হবে। তারা তাদের মাতা-পিতাকে পেলে কাপড় ধরে টেনে জান্নাতে না নেওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না।’ (মেশকাত: ১৭৫২)

আরও পড়ুন: মেয়েশিশু যেভাবে আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে

দুই সন্তান মারা গেলে জান্নাত

নবী (স.) বলেছেন- ‘যে নারীর তিনটি শিশু মারা যাবে, তার জন্য ওই শিশুরা জাহান্নাম থেকে পর্দাস্বরূপ হবে। এক নারী বলল, আর দুটি মারা গেলে? তিনি বললেন, দুটি মারা গেলেও। (তারা তার মায়ের জন্য জাহান্নাম থেকে পর্দা হবে।) (বুখারি: ১০, মুসলিম: ২৬৩৩)

হাদিসের আলোকে শিশুরা মারা গেলে তারা জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা পায় এবং পিতামাতার জন্য সুপারিশকারী হিসেবে কাজ করে। এই বিশ্বাস মুমিনদের জন্য সান্ত্বনা ও আশার বাণী বয়ে আনে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর