শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিলাসিতা যেভাবে মুসলমানের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৩:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

বিলাসিতা যেভাবে মুসলমানের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে

ইসলামে সংযম ও পরিমিতিবোধের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা খাও, পান করো কিন্তু অপচয় করো না’ (সুরা আরাফ: ৩১)। অথচ বর্তমান যুগে বিলাসিতা এমনভাবে আমাদের গ্রাস করেছে, তা সরাসরি আমাদের ইবাদত, চরিত্র ও সমাজ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই প্রতিবেদনে আমরা কোরআন-সুন্নাহর আলোকে দেখব বিলাসিতা কীভাবে ঈমানী জীবনে বাধা সৃষ্টি করে এবং এর থেকে মুক্তির উপায় কী।

বিলাসিতার ইসলামি সংজ্ঞা

বিলাসিতা বলতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয়, ভোগ ও আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপনকে বোঝায়। ইসলামে বিলাসিতাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তির ইসলাম কবুল করার সৌভাগ্য হয়েছে, যাকে প্রয়োজন পরিমাণ রিজিক দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাআলা তাকে যে সম্পদ দিয়েছেন এর ওপর পরিতৃপ্ত হওয়ার শক্তি দিয়েছেন, সে-ই (জীবনে) সফলতা লাভ করেছে।’ (মুসলিম: ২৩১৬)

বর্তমানে বিলাসিতার সাধারণ কিছু রূপ হলো- প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক-পরিচ্ছদ ও অলংকার সংগ্রহ, প্রতি মৌসুমে নতুন মডেলের গাড়ি বা গ্যাজেট কেনা এবং অহেতুক বিলাসবহুল ভ্রমণ ও বিনোদনে মত্ত থাকা

ধর্মীয় জীবনে বিলাসিতার প্রভাব

১. ইবাদতে অলসতা: বিলাসী জীবন মানুষকে ইবাদত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ফজরের নামাজ ঘুমে মিস হওয়া বা কোরআন তেলাওয়াতের সময় না পাওয়ার মূল কারণ হলো রাতজাগা বিনোদন।


বিজ্ঞাপন


২. কৃতজ্ঞতার অভাব: বিলাসী ব্যক্তি কখনই তৃপ্ত হতে পারে না। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ স্বভাবতই লোভী’। (সুরা মাআরিজ: ১৯)

৩. সমাজে বৈষম্য: যখন কেউ গরিবদের কথা ভুলে বিলাসিতায় মত্ত হয়, তখন সমাজে বৈষম্য বাড়ে। ইসলাম বলে- বিলাসিতায় খরচ না করে দান-সদকা করাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। রাসুল (স.) সতর্ক করেছেন- ‘কে কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে, সেই হিসাব কেয়ামতের দিন দিতে হবে।’ (তিরমিজি: ২৪১৬)

আরও পড়ুন: অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো মহান ইবাদত

পরকালীন পরিণতি

পবিত্র কোরআনে সতর্ক করা হয়েছে- ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা মাত্র।’ (সুরা কাহাফ: ৪৬)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন- ‘আর বাম পাশের দল। কতই না হতভাগ্য তারা! তারা থাকবে উত্তপ্ত বায়ু ও ফুটন্ত পানির মধ্যে। যা শীতল নয় বা আরামদায়ক নয়। ইতিপূর্বে তারা ছিল ভোগ-বিলাসে মত্ত।’ (সুরা ওয়াকিয়া: ৪১-৪৫)

বিলাসিতা থেকে মুক্তির উপায়

১. প্রয়োজন ও চাহিদার পার্থক্য: ইসলাম প্রয়োজন পূরণের অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু চাহিদার পিছে ছোটাকে নিরুৎসাহিত করেছে। হাদিসে এসেছে— ‘যে ব্যক্তি তার সব চিন্তাকে আখেরাতের চিন্তায় কেন্দ্রীভূত করেছে, আল্লাহ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অন্যদিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে, সে যেকোনো উন্মুক্ত মাঠে ধ্বংস হোক, তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। (ইবনে মাজাহ: ২৫৭)

২. জাকাত ও সদকার অভ্যাস: সম্পদের ২.৫% জাকাত প্রদান বিলাসিতা কমায় এবং গরিবের হক আদায় করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের এ মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে তারা নিবিষ্ট মনে শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে, যথাযথভাবে সালাত আদায় করবে, জাকাত প্রদান করবে, আর এটাই হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দীন।’ (সুরা বাইয়্যিনাহ: ৫)

আরও পড়ুন: যেসব সম্পদের জাকাত দেওয়া ফরজ

৩. নবীজির জীবনাদর্শ: রাসুল (স.) সাধারণ পাত্রে খেতেন, সাধারণ পোশাক পরতেন। সবকিছুই ছিল সাধারণ। তাঁর জীবনী আমাদের জন্য অনুসরণীয়। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘রাসুল (স.) একটি চাটাইয়ের ওপর শুয়ে ছিলেন। চাটাইয়ের ওপর কিছুই ছিল না। তাঁর মাথার নিচে ছিল খেজুরের ছালভর্তি চামড়ার বালিশ। আমি তাঁর শরীরে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেললাম। তিনি বলেন, কাঁদছ কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কায়সার ও কিসরা ভোগ-বিলাসে মত্ত অথচ আপনি আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে তাদের জন্য পার্থিব জীবন ও আমাদের জন্য পরকাল।’ (সহিহ বুখারি: ৪৯১৩)

৪. সময় ব্যবস্থাপনা: সোশ্যাল মিডিয়া ও বিনোদনে সময় ব্যয় না করে ইবাদত ও জ্ঞানার্জনে সময় দেওয়া উচিত। সবকিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত। পবিত্র কোরআনের ভাষায়- ‘বলে দাও, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব জাহানের রব আল্লাহর জন্য।’ (সুরা আনআম: ১৬২

শেষ কথা, ইসলামি জীবনদর্শনে বিলাসিতার স্থান নেই। আমাদের উচিত নবীজির সরল জীবনাদর্শ অনুসরণ করে, প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়া। মনে রাখতে হবে, প্রকৃত মুমিন সে-ই যে সংযমী ও পরিমিতিবোধ সম্পন্ন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর