মহররম মাসের ১০ তারিখ (আশুরা) ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে যেমন মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায় ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, তেমনি কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাও এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল। অনেকেই আশুরার দিনে বিশেষ কিছু দোয়া ও আমল করতে চান। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র কোরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আমলই করা উচিত। এখানে আমরা আশুরার দিনের সহিহ দোয়া ও আমলগুলো উপস্থাপন করছি।
১. আশুরার রোজার নিয়ত বা দোয়া
নিয়ত মূলত অন্তরের বিষয়। তবে মুখে উচ্চারণ করলে নিয়ত দৃঢ় হয়। আশুরার রোজার নিয়ত এভাবে করতে পারেন- نَوَيْتُ صَوْمَ غَدٍ عَنْ أَدَاءِ سُنَّةِ عَاشُورَاءَ لِلّهِ تَعَالَى উচ্চারণ: ‘নাওয়াইতু সাওমা গাদিন আন আদায়ি সুন্নাতি আশুরা লিল্লাহি তা'আলা।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর জন্য আগামীকাল আশুরার সুন্নত রোজা রাখার নিয়ত করলাম।’
ইফতারের দোয়া
اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার দেওয়া রিজিক দিয়ে ইফতার করছি।’
বিজ্ঞাপন
আশুরার রোজা ২টি রাখা উত্তম
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখো এবং ইহুদিদের বিরোধিতা করো—এর আগে বা পরে এক দিন অতিরিক্ত রাখো।’ (মুসনাদে আহমদ: ২১৫৫)
২. ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া (ইস্তেগফার)
আশুরার দিনে বেশি বেশি ইস্তেগফার করা উত্তম। কোরআনে বর্ণিত এই দোয়াটি করতে পারেন- رَبَّنَا فَاغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوۡبَنَا وَ كَفِّرۡ عَنَّا سَیِّاٰتِنَا وَ تَوَفَّنَا مَعَ الۡاَبۡرَارِ উচ্চারণ: ‘রব্বানা ফাগফির লানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সাইয়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব! আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন, আমাদের পাপগুলো মোচন করুন এবং আমাদেরকে নেককারদের সাথে মৃত্যু দিন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৯৩)
অথবা হাদিস থেকে সাইয়িদুল ইস্তেগফার পড়তে পারেন- اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ... উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা, খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা...।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার রব, তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ এবং আমি তোমার বান্দা...।’ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সাইয়িদুল ইস্তেগফার পড়বে, তার গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)
৩. মুক্তি ও কল্যাণের দোয়া
আশুরা মুক্তির দিন, তাই এই দোয়াটি পড়তে পারেন- رَبَّنَاۤ اَفۡرِغۡ عَلَیۡنَا صَبۡرًا وَّ ثَبِّتۡ اَقۡدَامَنَا وَ انۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡكٰفِرِیۡنَ উচ্চারণ: রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সবরাও ওয়া সাব্বিত আকদামানা ওয়ানছুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দিন, আমাদের পা স্থির রাখুন এবং আমাদেরকে কাফের জাতির বিরুদ্ধে সাহায্য করুন’। (সূরা বাকারা: ২৫০)
৪. নবী পরিবারের জন্য দোয়া
কারবালার শাহাদাতের স্মরণে নবীজি (স.)-এর পরিবারের জন্য দোয়া করুন- اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (স.) ও তাঁর পরিবারকে রহমত দান করুন।’
আশুরার দিন নবী পরিবারের কথা স্মরণ করে দরুদ পাঠ করা ঈমানদারদের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। ইমাম শাফেয়ি ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর মতে, নবীজি (স.)-এর ওপর দরুদ পাঠের সময় তাঁর পরিবারের ওপর দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব। হানাফি মাজহাবের ইমামদের মতে সুন্নত। (আল মাওসুয়া আল ফিকহিয়্যাহ: ১/১০৬)
আরও পড়ুন: হাদিসে বর্ণিত ছোট ১০ দরুদ
৫. দান-সদকা ও দোয়া
আশুরার দিনে দান করলে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যায়। দান করার পর এই দোয়া করতে পারেন- اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ صَدَقَةً مَقْبُولَةً عِنْدَكَ ‘আল্লাহুম্মাজআলহু সাদাকাতান মাকবুলাতান ইনদাকা।’ অর্থ: ‘‘হে আল্লাহ! এই দানকে আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য করুন।’ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন-‘দান করলে সম্পদ কখনো কমে না।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৮৮)
সতর্কতা
আশুরার দিন মাতম করা, বুক চাপড়ানো, বিশেষ নামাজ পড়া, মাজলিসের আয়োজন করা, রক্তাক্ত হওয়া-এসব ইসলামি শরিয়তের পরিপন্থি কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘যে আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।’ (সহিহ বুখারি: ২৬৯৭)
শেষ কথা, আশুরা একটি মহান দিন, তাই সুন্নাহ অনুসরণ করুন এবং বিদআত থেকে দূরে থাকুন এবং এই দোয়াটি পড়ুন- اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنَّا صَالِحَ الْأَعْمَالِ ‘আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন্না সালিহাল আমাল’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের নেক আমলগুলো কবুল করুন।’ আমিন।