রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফুরাত নদীর মহাসংকট, হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে বর্তমান বাস্তবতা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

ফুরাত নদীর মহাসংকট, হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে বর্তমান বাস্তবতা

প্রাচীন সভ্যতার প্রাণশক্তি আজ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। মেসোপটেমিয়ার ৫,০০০ বছরের ইতিহাসবাহী ফুরাত নদী (Euphrates) আজ চোখের সামনে শুকিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গত দুই দশকে নদীটির পানিপ্রবাহ ৬০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। এই সংকট শুধু পরিবেশগত নয়, বরং শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তব রূপ, যা কেয়ামতের আলামতের অংশ বলেই গণ্য হয়।

নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী: হাদিস কী বলছে?

রাসুলুল্লাহ (স.) ১৪০০ বছর আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন— ‘অচিরেই ফুরাত নদীতে স্বর্ণের খনি উম্মোচিত হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সে সময় বেঁচে থাকবে, সে যেন তার থেকে কোনো অংশ না নেয়। (বুখারি: ৭১১৯)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কেয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না ফুরাত নদীতে একটি স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ পাবে। মানুষ তা নিয়ে যুদ্ধে জড়াবে এবং প্রত্যেক দলের শতকরা ৯৯ জন মারা পড়বে। (সহিহ মুসলিম: ৭৪৫৪)

আরও পড়ুন: ফোরাত থেকে যখন স্বর্ণের খনি বের হবে

হাদিসের ব্যাখ্যা: সময়ের সন্ধিক্ষণ

ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘সোনার পাহাড়’ বলতে আক্ষরিক অর্থে সোনা হতে পারে, আবার মূল্যবান সম্পদ (তেল, গ্যাস ইত্যাদি) বোঝানো হতে পারে।


বিজ্ঞাপন


ইমাম নববি (রহ.) ব্যাখ্যা করেছেন, এটি কেয়ামতের ছোট নিদর্শনের একটি।

ড. জাকির নায়েক এবং অন্যান্য ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই হাদিস ‘তেল ও পানির জন্য সংঘাত’ নির্দেশ করতে পারে।

বিজ্ঞান যা বলছে: ফুরাত কেন শুকিয়ে যাচ্ছে?

১. তুরস্কের বাঁধ প্রকল্প (GAP)
তুরস্কের ‘সাউথইস্টার্ন আনাতোলিয়া প্রজেক্ট’ (GAP) আওতায় নির্মিত ২২টি বাঁধ ফুরাতের পানিপ্রবাহের ৬০% আটকে দিয়েছে। এর ফলে ইরাক ও সিরিয়ায় পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। (সূত্র: UN Report, ২০২৩)

২. জলবায়ু পরিবর্তন
ফুরাত অববাহিকায় তাপমাত্রা বেড়েছে গড়ে ১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টিপাত কমেছে এবং বাষ্পীভবন বেড়েছে। (সূত্র: NASA, ২০২২)

৩. অপরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা
ইরাকে ফ্লাড ইরিগেশন ব্যবহারে প্রতিবছর ১২ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি অপচয় হয়। (সূত্র: World Bank)

আরও পড়ুন: আরবের মরুভূমিতে বন্যা সম্পর্কে হাদিসে যা আছে

যুদ্ধের আশঙ্কা: পানি ঘিরে বর্তমান উত্তেজনা

  • তুরস্ক-সিরিয়া-ইরাক একে অপরকে পানিবঞ্চনার অভিযোগ করছে। তুরস্কের ইলিসু বাঁধ ফুরাতের ৪০% পানি আটকে রেখেছে।
  • ২০২৩ সালে ইরাকজুড়ে ১৭টি অঞ্চলে পানি নিয়ে বিক্ষোভ হয়।
  • ISIS ও অন্যান্য মিলিশিয়া গ্রুপ পানি সরবরাহকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ২০২২ সালে রাক্কা অঞ্চলে বাঁধ ধ্বংস। (সূত্র: Al Jazeera, Washington Post)

ভবিষ্যৎ ঝুঁকি: বাস্তব হুমকি সামনে

  • ২০৪০ সালের মধ্যে ফুরাত নদী পুরোপুরি শুকিয়ে যেতে পারে।
  • অন্তত ৫ কোটি মানুষ পানি সংকটে পড়বে।
  • স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘জলযুদ্ধ’ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা ৭২%।’ (Stanford Environmental Security Report, 2023)

আরও পড়ুন: কেয়ামতের যেসব আলামত পৃথিবীতে বিদ্যমান

ইসলামি সমাধান কী হতে পারে?

১. পানি সংরক্ষণ: ‘নদীর তীরেও ওজুতে পানির অপচয় করো না।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২৫)

২. ন্যায়ভিত্তিক বণ্টন: ‘তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না।’ (সুরা আরাফ: ৫৬)

৩. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: জাতিসংঘের ‘UN Water Convention’-এর মতো চুক্তির মাধ্যমে তুরস্ক-সিরিয়া-ইরাকের মধ্যে পানি চুক্তি জরুরি।

মুমিনের করণীয় কী?

মুফতি ইসমাইল মেনক বলেন— ‘এটি শুধু পরিবেশগত সংকট নয়, বরং ঈমানের একটি পরীক্ষা।’ এই পরীক্ষায় আমাদের দায়িত্ব হলো- পানি সাশ্রয়ী অভ্যাস গড়া, ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে পানি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো, সম্পদের লোভ থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং নবীজির হাদিস প্রচার করা- ‘যে ব্যক্তি এই সম্পদের কাছে থাকবে, সে যেন তা থেকে কিছু না নেয়।’ আল্লাহ আমাদের ইসলামি নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্র: সহিহ বুখারি ও মুসলিম, UN Water Report 2023, NASA Climate Data, Stanford Conflict Forecast 2023

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর