ফোরাত দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি নদী। ফোরাতের তীরঘেঁষা প্রধান শহরগুলোর মধ্যে আছে সিরিয়ার রাক্কা ও দাইর আজ জর, ইরাকের রামাদি, কারবালা, হিল্লাহ ও নাজাফ। আঞ্চলিক রাজনীতির কারণে ফোরাত যেমন আলোচনার কেন্দ্রে, তেমনি ধর্মীয় কারণেও ফোরাত একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম।
ফোরাত নিয়ে রাসুল (স.) খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, অচিরেই (একটা সময় এমন আসবে) ফোরাত নদীতে স্বর্ণের খনি উম্মোচিত হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সে সময় বেঁচে থাকবে, সে যেন তার থেকে কোনো অংশ গ্রহণ না করে। (বুখারি: ৭১১৯)
বিজ্ঞাপন
সহিহ মুসলিম বর্ণনায় এসেছে, ‘কেয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না ফোরাত নদীতে একটি স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ পাবে। মানুষ তা নিয়ে যুদ্ধে জড়াবে এবং প্রত্যেক দলের শতকরা ৯৯ জন মারা পড়বে। তাদের প্রত্যেকের কামনা থাকবে হায়! বেঁচে যাওয়া মানুষটি যদি আমিই হতাম! (সহিহ মুসলিম: ৭৪৫৪)
হাদিসের ব্যাখ্যায় শাইখুল ইসলাম তাকি উসমানি বলেন, ‘ফোরাত নদীতে স্বর্ণের পাহাড় উম্মোচিত হবে’—এর দুটি অর্থ হতে পারে। এক) নদীটির জায়গায় একটি পাহাড় উঠবে, যার ভেতর স্বর্ণের খনি থাকবে। দুই) নদীতে স্বর্ণের খনি থাকবে। তবে পাহাড়ের সঙ্গে তুলনার উদ্দেশ্য হলো স্বর্ণের পরিমাণ অনেক বেশি হবে।’ (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম, খণ্ড ১২, পৃষ্ঠা-২২৮)
ফোরাত নদী দুই হাজার ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর অববাহিকার আয়তন প্রায় চার লাখ ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মোট অববাহিকার মাত্র ৩০ শতাংশ তুরস্কে অবস্থিত হলেও ৯০ শতাংশ পানির উৎস হলো তুরস্কের উচ্চভূমি।
ফোরাত নদী তুরস্কে উৎপত্তি লাভ করে সিরিয়া ও ইরাকের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দজলা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে এবং পারস্য উপসাগরে গিয়ে পতিত হয়েছে। ফোরাত ও দজলা নদীর পানি ব্যবহার করেই প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল। প্রাচীন সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় এবং আসিরীয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল এই নদীকে ব্যবহার করেই।