বর্তমান ডিজিটাল যুগে খবর ছড়ানো যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি বেড়েছে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের ছড়াছড়ি। অনেক সময় দেখা যায়, যাচাই না করেই আমরা কোনো পোস্ট, ভিডিও কিংবা বক্তব্য শেয়ার করে দিই। ইসলামি দৃষ্টিতে এটি শুধু গাফেলতির পরিচয় নয়, বরং মিথ্যার মতোই গুনাহের কাজ। ইসলামে সত্যবাদিতার গুরুত্ব অপরিসীম এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো তথ্য প্রচারকে সরাসরি মিথ্যার শামিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ! যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি তোমাদের কাছে সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই করে নিও, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতি না করে ফেলো, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে পড়ো।’ (সুরা হুজরাত: ৬)
বিজ্ঞাপন
এই আয়াতে আল্লাহ মুসলমানদের সংবাদ যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ যাচাই ছাড়া খবর ছড়ালে কোনো নির্দোষ গোষ্ঠী বা ব্যক্তির সম্মানহানি বা ক্ষতি হতে পারে, যা পরবর্তীতে অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কারো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে, যাচাই না করেই তা প্রচার করে।’ (সহিহ মুসলিম: ৫; সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯২)
এই হাদিসে স্পষ্ট করা হয়েছে, যাচাইহীন প্রচার নিজেই একটি মিথ্যার রূপ, এবং এটি একজন মুসলিমের ব্যক্তিত্বকে কলুষিত করে।
মেরাজের রাতে মিথ্যাবাদীর যে শাস্তি দেখেছেন নবীজি
মেরাজের রাতে রাসুল (স.) এক ব্যক্তিকে দেখেন, যার চোয়ালে লোহার হুক ঢুকিয়ে ঘাড় পর্যন্ত টেনে নেওয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলে জবাব দেওয়া হয়, ‘এ ব্যক্তি ছিল একজন মিথ্যাবাদী। সে একটি মিথ্যা বলত এবং তা এতদূর ছড়িয়ে পড়ত যে, তা দিগন্ত পর্যন্ত পৌঁছে যেত। কেয়ামত পর্যন্ত এভাবেই তার শাস্তি চলতে থাকবে।’ (সহিহ বুখারি: ১৩৮৬)
এই বর্ণনায় স্পষ্ট বোঝা যায়, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো শুধু দুনিয়ার গুনাহ নয়, বরং আখেরাতে চরম শাস্তির কারণ।
আরও পড়ুন: মৃত্যু সংবাদ প্রচারের বিশেষ ফজিলত আছে কি?
দ্বীনি বিষয়ে ভুল তথ্য ভয়াবহ গুনাহ
দ্বীন সম্পর্কিত ভুল তথ্য বা হাদিস শেয়ার করা সবচেয়ে মারাত্মক। রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজের স্থান নিশ্চিত করে নেয়।’ (সহিহ বুখারি: ১০৭)
আজকাল সামাজিক মাধ্যমে হাদিস বা ইসলামি বক্তব্য শেয়ার করার প্রবণতা বাড়লেও, দুঃখজনকভাবে অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলোর উৎস নির্ভরযোগ্য নয়। এটি এক ধরণের বড় দায়, যার ফলাফল হতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত।
ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়- সত্য বলা, সত্য প্রচার করা এবং মিথ্যা থেকে বিরত থাকা। তাই যাচাই না করে তথ্য প্রচার করা ইসলামি নীতিমালার পরিপন্থী। আসুন যাচাই-বাছাই ছাড়া কিছুই শেয়ার না করি। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার আগে দায়িত্বশীল হই। কোরআন ও হাদিসের আলোকে সত্যবাদী জীবন গড়ি। আমিন।

