সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সুন্নত পড়ার সময় জামাত শুরু হলে করণীয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২৫, ০২:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

সুন্নত পড়ার সময় জামাত শুরু হলে করণীয়

নামাজ মুসলমানের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ফরজ নামাজের পাশাপাশি সুন্নত নামাজও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা রাসুলুল্লাহ (স.) আদায় করতেন এবং সাহাবিদের আদায় করতে উৎসাহিত করেছেন। তবে কখনো কখনো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যখন কেউ মসজিদে এসে সুন্নত নামাজ শুরু করেন, আর ততক্ষণে ইমাম জামাত শুরু করে দেন। তখন অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান—এই সুন্নত শেষ করবেন, নাকি জামাতে শরিক হবেন?

এমন পরিস্থিতিতে করণীয় কী—এ বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহ কী বলে, তা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো।


বিজ্ঞাপন


 ১. জোহরের চার রাকাত সুন্নতের সময় জামাত শুরু হলে করণীয়

জোহরের ফরজের আগে চার রাকাত নামাজ সুন্নতে মোয়াক্কাদা। এই নামাজ ফরজের আগে পড়া জরুরি। তবে, কেউ এই চার রাকাত নামাজ পড়ার সময় জামাত শুরু হলে দুই রাকাত পরে সালাম ফিরিয়ে জামাতে শরিক হওয়া উত্তম। কিন্তু তৃতীয় রাকাতের সময় জামাত শুরু হলে পুরো চার রাকাত সম্পূর্ণ করবেন। (আলমুহিতুল বুরহানি: ২/২৪৫; বাদায়েউস সানায়ে: ১/৬৪১; শরহুল মুনইয়া: ২৪৩ পৃ; রদ্দুল মুহতার: ২/৫৩; হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি: ২৪৫ পৃ)

২. ফজরের সুন্নত অবস্থায় জামাত শুরু হলে করণীয়

ফজরের দুই রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন নামাজ। হাদিসে এসেছে- ‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা কিছু রয়েছে, তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম: ৭২৫) অন্য হাদিসে নবীজি বলেছেন- ‘তোমরা ফজরের সুন্নত ছেড়ে দিও না, যদিও সৈন্যবাহিনী তোমাদের তাড়া দেয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ৯২৫৩) 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ফজরের সুন্নত নামাজের কাজা আদায়ের সময়সীমা

তাই ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এমনকি জামাত চলা অবস্থায়ও যদি এক রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন জামাতে শরিক হওয়ার আগে ফজরের সুন্নত পড়া উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আবু দারদা (রা.)-এর মতো বিশিষ্ট সাহাবিরা ফজরের জামাত শুরু হলেও ফজরের সুন্নত পড়ে নিতেন। তবে, দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বেন না; বরং জামাতে শরিক হয়ে যাবেন এবং সূর্যোদয়ের পর তা পড়ে নেবেন। জামাত শুরু হলে মসজিদে সুন্নত পড়ার কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন- কাতারের সাথে মিলিয়ে সুন্নত পড়া যাবে না, মসজিদের বারান্দায় বা কাতার থেকে দূরে মসজিদের এক কোণে বা কোনো পিলারের আড়ালে সুন্নত পড়বে। আর জামাত থেকে পেছনে পৃথক হয়ে সুন্নত পড়ার মতো জায়গা না থাকলে সুন্নত পড়া যাবে না। এক্ষেত্রে জামাতে শরিক হয়ে যাবে। (জামিউস সগির: ৯০; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/৬১; বাদায়েউস সানায়ে: ১/৬৪০; তাতারখানিয়া: ২/৩০৮; আলবাহরুর রায়েক: ২/৭৩; হিন্দিয়া: ১/১২০; মাবসুত, সারাখসি: ১/১৬৭; ফাতহুল কাদির: ১/৪১৬)

৩. আছর, এশার সুন্নত বা তাহিয়্যাতুল অজু আদায়ের সময় যা করবেন

আছর ও এশার ফরজ নামাজের আগে যে সুন্নত পড়া হয় তা নফল বা সুন্নতে জায়দা। দুখলুল মসজিদ বা তাহিয়্যাতুল অজুও নফল নামাজ। এসব নামাজ ফজর বা জোহরের সুন্নতের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং পড়লে সওয়াব, না পড়লে গুনাহ নেই। এই নামাজ পড়া অবস্থায় জামাত শুরু হলে (দ্রুত সালাম ফিরিয়ে বা সালাম ছাড়াই) ভেঙে দিয়ে জামাতে শরিক হওয়া উত্তম। (ফতোয়া লাজনা দায়িমাহ: ৭৩৪৭/৭, পৃ: ৩১৩-৩১৪)

মোটকথা, ইসলামে ফরজ নামাজের গুরুত্ব সর্বোচ্চ। তাই জামাত শুরু হয়ে গেলে সুন্নত বা নফল নামাজ চালিয়ে যাওয়া নয়, বরং দ্রুত জামাতে শরিক হওয়া দলিলভিত্তিক পদক্ষেপ। জোহরের আগে চার রাকাত সুন্নতের ক্ষেত্রে যদি দুই রাকাত সম্পন্ন হয়ে যায়, তাহলে সালাম ফিরিয়ে জামাতে অংশ নেওয়া ভালো। ফজরের দুই রাকাত সুন্নত অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায়, জামাত শুরু হলেও যদি এক রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে বারান্দা বা কাতার থেকে দূরে সুন্নত পড়ে জামাতে শরিক হওয়া উত্তম। আর আছর, এশা বা অন্যান্য নফল নামাজের ক্ষেত্রে ইকামত হলে তা ছেড়ে দিয়ে তৎক্ষণাৎ জামাতে শরিক হওয়াই সুন্নাহসম্মত। নবীজি (স.) এর সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের আমল অনুসারে, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে জামাতে শরিক হওয়াকে। কারণ, জামাতের নামাজ একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি ফজিলতপূর্ণ। (সহিহ মুসলিম: ৬৫০)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর