শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দাফনের পর কবরে দাঁড়িয়ে তালকিন করা সুন্নত নাকি বিদআত?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

দাফনের পর কবরে দাঁড়িয়ে তালকিন করা সুন্নত নাকি বিদআত?

দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর বহু এলাকায় দেখা যায়, কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ মৃতের নাম উচ্চারণ করে তিনবার ডাকে—‘ইয়া ফুলান ইবনে ফুলান’ (হে অমুকের সন্তান অমুক)। তারপর বলা হয়- ‘তুমি যে অবস্থায় ছিলে তা হলো- তোমার রব আল্লাহ, তোমার দ্বীন ইসলাম, তোমার নবী মুহাম্মদ (স.)...’ এ বিষয়ে দাবি করা হয় যে, ফেরেশতারা (মুনকার-নাকির) বলবেন- ‘তাকে আর কী জিজ্ঞাসা করব, সব তো শেখানো হয়ে গেছে।’ এভাবে কবরস্থ ব্যক্তি নাকি সওয়াল জবাব থেকে মুক্তি পেয়ে যায়।

প্রশ্ন হলো—এই আমল কি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত? নাকি বিদআত?


বিজ্ঞাপন


তালকিন বলতে আসলে কী বোঝায়?

আরবি ‘তালকিন’ অর্থ শেখানো, স্মরণ করানো, বুঝানো। মূলত মৃত্যুপথযাত্রীকে কালেমা স্মরণ করিয়ে দেওয়া তালকিন হিসেবে সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। দাফনের পর কবরে দাঁড়িয়ে প্রশ্নোত্তর শেখানোর মতো তালকিনের কোনো সহিহ ভিত্তি ইসলামে নেই।

আরও পড়ুন: কবরে কাঁচা ডাল পুঁতে দেওয়া কি শরিয়তসম্মত?

হাদিস বিশারদদের মতামত

‘তালকিন’ সংক্রান্ত হাদিসটি মুহাদ্দিসদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কিত। অধিকাংশ হাদিসবিশারদ একে দুর্বল (ضعيف) বা বানোয়াট (موضوع) বলেছেন। ফলে একে ভিত্তি করে আমল করাকে তারা বিদআত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ফুকাহায়ে কেরামের মতে, এই তালকিন শরিয়তসম্মত নয়। সহিহ হাদিস দ্বারা এটি প্রমাণিত না হওয়ায় এ ধরনের কাজ পরিহার করাই উত্তম। (ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া (পৃষ্ঠা ২৪; জাওয়াহিরুল ফতোয়া (কিরমানি, পৃষ্ঠা ১২৩), ইমদাদুল আহকাম: ১/২০৯)

তাহলে দাফনের পর কী করা সুন্নত

১. মৃতের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করা: উসমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন– নবীজি (স.) যখন কোনো মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করতেন তখন তিনি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করো এবং সে যেন (প্রশ্নের জবাবে) সুদৃঢ় থাকতে পারে সে দোয়া কর। কেননা এখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৩২১৩)

২. আস্তে আস্তে মাটি ঢালা ও কিছু সময় অবস্থান করা: আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন– আমি যখন মৃত্যুবরণ করব তখন যেন কোনো বিলাপকারী অথবা আগুন আমার জানাজার সাথে না থাকে। আমাকে যখন দাফন করবে তখন আস্তে আস্তে মাটি ঢালবে এবং দাফন সেরে একটি উট জবাই করে তার গোশত বণ্টন করা পরিমাণ সময় আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে। যেন তোমাদের উপস্থিতিতে আমি আতঙ্কমুক্ত অবস্থায় আমার প্রতিপালকের ফেরেশতাদেরকে ভেবে চিন্তে জবাব দিতে পারি। (সহিহ মুসলিম: ১২১)

আরও পড়ুন: কবর বা আলমে বরজখ কেমন জগত?

৩. সুরা বাকারার শুরু ও শেষের আয়াতগুলো পড়া: আবদুর রহমান ইবনুল আলা রহ. বলেন– আমার পিতা আলা ইবনুল লাজলাজ (রা.) আমাকে বলেন, হে আমার প্রিয় পুত্র, যখন আমি মৃত্যুবরণ করব তখন আমার জন্য লাহদ (বুগলি কবর) খনন করবে। আমাকে কবরে রাখার সময় বলবে– ‘বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ’ অতঃপর আমার কবরে আস্তে আস্তে মাটি ঢালবে। এরপর আমার মাথার পাশে সুরা বাকারার শুরু ও শেষ অংশ পড়বে। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে এমনই বলতে শুনেছি। (আল মুজামুল কাবির, তবারানি: ১৯/২২০)

অতএব, প্রচলিত রীতি পরিহার করে দাফনের পর কবরের পাশে অবস্থান করে শুধু সুন্নাহসম্মত আমলগুলোই করতে হবে। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন। আমিন।

(ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া, পৃ. ২৪; জাওয়াহিরুল ফতোয়া, কিরমানি, পৃ. ১২৩; শরহুল বেকায়াহ, ইবনে মালাক: ১/৫০৩; জামেউর রুমুজ: ১/২৭৮; মিরকাতুল মাফাতিহ: ৪/৭৪; ইমদাদুল আহকাম: ১/২০৯)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর