সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ক্যাপ্টেন হানাদি হিন্দি

পাইলটের আসনে একজন ধর্মভীরু মুসলিম নারী

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৫, ১২:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

পাইলটের আসনে একজন ধর্মভীরু মুসলিম নারী

আকাশপানে তাকিয়ে কত তরুণ-তরুণী স্বপ্ন বুনে উড়ার, কেউবা বিজয়ের। কিন্তু সমাজের বাঁধাধরা নিয়ম আর নারীর পথরোধ করা সংস্কৃতির ভেতর দাঁড়িয়ে কেউ যদি বলে, ‘আমি একজন মুসলিম নারী, আমি ককপিটে বসতে চাই’—তা নিছক স্বপ্নই থেকে যায় অধিকাংশের জন্য।

তবে ব্যতিক্রম ছিলেন হানাদি জাকারিয়া হিন্দি। সৌদি আরবের এক ধর্মভীরু পরিবারে জন্ম নেওয়া এই নারী প্রমাণ করেছেন—ইসলাম মানে সীমাবদ্ধতা নয়, বরং সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার আলোকিত দিকনির্দেশনা।


বিজ্ঞাপন


হিজাব পরে ককপিটে বসা, নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে আকাশে দায়িত্ব পালন করা এবং বিশ্বমঞ্চে সৌদি নারীদের আত্মবিশ্বাসের পরিচয় দেওয়া—এই তিনটি পরিচয়ে মিশে আছেন ক্যাপ্টেন হানাদি, একজন পেশাদার পাইলট এবং একজন ধর্মভীরু মুসলিম নারী।

মা-বাবার দোয়ায় হানাদির আকাশ জয়

হানাদির গল্প শুরু হয় একটি অসাধারণ পরিবার দিয়ে। মক্কায় জন্ম নেওয়া এই মেয়েটি যখন পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তখন চারদিক থেকে আসে বাধা—‘এটা সম্ভব নয়।’ কিন্তু তার মা-বাবা বলেছিলেন, ‘আমরা চাই আমাদের মেয়ে ইসলাম মেনে আধুনিক শিক্ষায় এগিয়ে যাক।’

আরও পড়ুন: নারীদের যথাযথ সম্মান দিয়েছে ইসলাম


বিজ্ঞাপন


তাদের উৎসাহে হানাদি ভর্তি হন জর্ডানের মিডল ইস্ট অ্যাভিয়েশন একাডেমিতে। মা তাহাজ্জুদের সময় দোয়া করতেন মেয়ের জন্য। হানাদি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুঁজি ছিল আমার মায়ের কান্না আর বাবার সাহস।’

নামের সঙ্গে হিন্দি কেন

ক্যাপ্টেন হানাদি হিন্দি একজন মুসলিম সৌদি নাগরিক। তার পরিবারের পূর্বপুরুষ হয়ত প্রাচীনকালে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে সৌদি আরবে এসেছিলেন বা তাদের বংশসূত্র সেখানে। তাই নামের সঙ্গে হিন্দি রয়েছে, যা পূর্বপুরুষের ভৌগোলিক পরিচয়ের ইঙ্গিত দেয়। মূলত হানাদি সৌদি আরবের স্থানীয় ধর্মভীরু মুসলিম নারী।

সৌদি নারীদের জন্য পথপ্রদর্শক

২০০৫ সালে হানাদি সফলভাবে পাইলট লাইসেন্স অর্জন করেন। সেসময় সৌদি নারীরা গাড়িও চালাতে পারতেন না, বিমানের কথা তো দূরের ব্যাপার! হানাদি ছিলেন দেশটির অন্যতম প্রথম লাইসেন্সধারী নারী পাইলট। পরে তিনি প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন তালালের প্রাইভেট জেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান পাইলট হিসেবে কাজ করেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘আমি হয়তো প্রথমদের একজন, কিন্তু চাই না আমি শেষ হই। আমি চাই, আমার পরেও হাজারো মুসলিম নারী আকাশে উড়ুক।’

hanadi-hindi-3

হিজাব ও ধর্মীয় অনুশাসনকে সম্মানে রূপ দিলেন

হানাদি সবসময় হিজাব পরেই ফ্লাইট পরিচালনা করতেন। ককপিটে ঢোকার আগে বলতেন, ‘বিসমিল্লাহ।’ দায়িত্ব পালনে সততা, নম্রতা ও নৈতিকতার ওপর বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার হিজাব আমাকে পেছনে টানেনি, বরং আমাকে সম্মান দিয়েছে। আমি পাইলট হিসেবে সফল হয়েছি কারণ আমি আমার ঈমান ও আত্মমর্যাদা ধরে রেখেছি।’

আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যের প্রথম মুসলিম নারী আইনমন্ত্রী ফিলিস্তিনপন্থী শাবানা 

মুসলিম নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা

হানাদি এখন শুধু একজন সফল পাইলটই নন, বরং সৌদি আর বিশ্ব মুসলিম নারীদের জন্য একটি জীবন্ত অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন—ধর্ম মানে দমিয়ে রাখা নয়, বরং আলোকিত করে দেওয়া। তার জীবনের গল্প প্রতিটি মা-বাবার জন্য শিক্ষা, প্রতিটি মেয়ের জন্য সাহস।

হানাদি হিন্দির জীবন আমাদের শিখিয়ে দেয়—মা বাবার দোয়া, ইসলামি মূল্যবোধ আর অধ্যবসায় থাকলে আকাশও সীমানা হতে পারে না। যে মেয়েটিকে একসময় সমাজ থামিয়ে দিতে চেয়েছিল, সেই মেয়েই আজ আকাশে মুসলিম নারীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন আত্মবিশ্বাস ও ঈমানের ডানায় ভর করে।

তার প্রতিটি ফ্লাইট যেন একেকটি বার্তা বহন করে—‘আকাশে উড়ার আগে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো, মা-বাবার দোয়া নিও, আর হিজাবকে গর্ব মনে করো।’

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর