সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫, ঢাকা

নতুন বছরে নতুন গিলাফে আবৃত হচ্ছে কাবা শরিফ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

নতুন বছরে নতুন গিলাফে আবৃত হচ্ছে কাবা শরিফ

পবিত্র কাবা শরিফের নতুন গিলাফ হস্তান্তর করা হয়েছে। চলতি হিজরি বছরের প্রথম রাতে অর্থাৎ ১ মহররম ১৪৪৭ হিজরিতে কাবা ঘরের গিলাফ পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের পক্ষ থেকে কাবার চাবিবাহক পরিবারের কাছে নতুন গিলাফ হস্তান্তর করা হয়েছে।

রোববার (৮ জুন) রাতে মক্কা অঞ্চলের ডেপুটি গভর্নর ও কেন্দ্রীয় হজ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান প্রিন্স সৌদ বিন মিশাল বিন আবদুল আজিজ আনুষ্ঠানিকভাবে কাবার গিলাফ হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সৌদির হজ ও উমরা বিষয়ক মন্ত্রী ড. তওফিক আল-রাবিয়া এবং কাবার ডেপুটি চাবিবাহক আবদুল মালিক বিন তাহা আল-শায়বি। অনুষ্ঠানে গিলাফ হস্তান্তর বিষয়ক চুক্তিপত্রে তারা স্বাক্ষর করেন।


বিজ্ঞাপন


গিলাফ পরিবর্তনের সময়সূচিতে পরিবর্তন

ইসলামের প্রথম যুগ থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন ধরে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ (আরাফাত দিবস) কাবার গিলাফ পরিবর্তনের প্রথা প্রচলিত ছিল। তবে ২০২২ সালে সৌদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, হিজরি নববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে গিলাফ পরিবর্তনের সময় ১ মহররম রাত নির্ধারণ করা হবে। সেই থেকে প্রতিবছর মহররমের প্রথম রাতে গিলাফ পরিবর্তন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

আরও পড়ুন: কাবা শরিফ সম্পর্কে অবাক করা কিছু ঐতিহাসিক তথ্য

গিলাফ তৈরির বিবরণ

কাবার গিলাফ ‘কিসওয়া’ নামেও পরিচিত। এটি মূলত চারটি কাপড়ের বড় টুকরা এবং দরজার একটি অংশ দিয়ে তৈরি হয়। গিলাফের দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার এবং মোট আয়তন ৬৫৮ বর্গমিটার। এটি তৈরি করতে প্রায় ৬৭০ কেজি কালো রেশম, ২১ ক্যারেটের ১২০ কেজি স্বর্ণ ও ১০০ কেজি রুপার সুতা ব্যবহার করা হয়। স্বর্ণ ও রুপার সুতা দিয়ে গিলাফে পবিত্র কোরআনের আয়াত ও আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম (আস্‌মাউল হুসনা) লেখা হয়।

পুরো গিলাফ তৈরিতে সময় লাগে ছয় থেকে আট মাস। বিশ্বের বৃহত্তম সেলাই মেশিনে ৪৭টি কাপড়ের টুকরা একত্রে সেলাই করা হয় এবং নিচের দিকে তামার রিং দিয়ে স্থির করা হয়। অনেক সূক্ষ্ম কারুকার্য এখনও হাতে সম্পন্ন করা হয়।

এই গিলাফ তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ২৫ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৫ কোটি টাকারও বেশি। ওজন প্রায় ৮৫০ কেজি হওয়ায় এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কাপড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আরও পড়ুন: তীব্র গরমেও হারামাইনের চত্বর শীতল কেন?

কোথায় তৈরি হয় গিলাফ?

গিলাফটি তৈরি হয় মক্কার 'উম্মুল জাওদ' নামক স্থানে অবস্থিত “দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা’স কিসওয়া”-তে। এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯২৮ সালে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজের নির্দেশে স্থাপিত হয়। ২০১৭ সালে বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের নির্দেশে এটি আধুনিকায়ন ও পুনঃনামকরণ করা হয়। এখানে প্রায় ১৫৯ জন দক্ষ কারিগর সারাবছর গিলাফ তৈরির কাজে নিয়োজিত থাকেন।

কাবার গিলাফ পরিবর্তন: একটি ঐতিহাসিক আমল

গিলাফ পরিবর্তন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, পবিত্রতা এবং নববর্ষকে নতুন প্রতিজ্ঞায় শুরু করার প্রতীক। এটি বিশ্ব মুসলিমদের হৃদয়ে এক বিশেষ আবেগ ও শ্রদ্ধার স্থান দখল করে রেখেছে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর