সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ওয়াজিব কোরবানি আদায়ে নারীদের অবহেলা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ জুন ২০২৫, ০২:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

ওয়াজিব কোরবানি আদায়ে নারীদের অবহেলা

ঈদুল আজহার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কোরবানি। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানি আদায় শুধুমাত্র পুরুষদের দায়িত্ব নয়; বরং যাদের কোরবানির শর্ত পূরণ হয়, পুরুষ বা নারী যেই হোক, তাদের ওপর স্বতন্ত্রভাবে কোরবানি ওয়াজিব হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, নারীদের একটি বড় অংশ ওয়াজিব কোরবানি থেকে অবহেলা করছেন, যা শরিয়তের দৃষ্টিতে বড় গুনাহের কাজ।

কাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব?

ফিকাহবিদদের মতে, এমন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়, যার কাছে নির্দিষ্ট নিসাব পরিমাণ সম্পদ ঈদুল আজহার দিনগুলোতে (১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে) বিদ্যমান থাকে। নিসাবের পরিমাণ সম্পদ বলতে শুধু সাড়ে ৫২ ভরি স্বর্ণ বোঝায় না, বরং সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা তার সমমূল্যের প্রয়োজনের অতিরিক্ত নগদ অর্থ/সম্পদ হলো নিসাব পরিমাণ সম্পদ। এই পরিমাণ সম্পদের মালিকদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। (ফতোয়ায়ে শামি: ৯/৪৫৩; খোলাসাতুল ফতোয়া: ৩/৩০৯; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/১৯৬)

নারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব

বাস্তবে দেখা যায়, অনেক শিক্ষিত নারীরও কোরবানির নিসাবের বিষয়ে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। ফলে অনেক নিসাবধারী গৃহবধূ, চাকরিজীবী নারী কিংবা স্বর্ণালংকারধারী নারীরা ঈদুল আজহায় কোরবানির ইবাদত থেকে বিরত থাকেন। কেউ কেউ মনে করেন, স্বামীর কোরবানি তাদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট। অথচ শরিয়তে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তির কোরবানি অন্য ব্যক্তির পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয় না। 

আরও পড়ুন: যৌথ পরিবারে কোরবানি, সচরাচর ভুল ও সঠিক নিয়ম


বিজ্ঞাপন


আল্লাহ তাআলার নির্দেশ

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন— ‘তুমি তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো।’ (সুরা কাউসার: ২)

এ আয়াত পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই নির্দেশনা বহন করে। হাদিসেও যারা কোরবানি করে না তাদের ধিক্কার দেওয়া হয়েছে এভাবে— ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩১২৩)

করণীয়

নারীদের কোরবানির বিষয়টি নিয়ে ইসলামি চর্চা ও আলোচনা বাড়াতে হবে।
স্বামীরা স্ত্রীদের কোরবানি ওয়াজিব কি না, তা বুঝতে সহায়তা করবেন।
যদি কোরবানি ওয়াজিব হয়, তবে নারীরা নিজে বা অন্যকে দিয়ে সেই কোরবানি আদায় করবেন।

আরও পড়ুন: কোরবানির গোশত বণ্টনে যে ভুল করা যাবে না

স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর কোরবানি

স্বামী, পিতা বা পুরুষ অভিভাবকের উচিত নারীর কোরবানির ব্যবস্থা করে দেওয়া। কারণ, অনেক নারীর পক্ষে কোরবানির ব্যবস্থাপনা অনেক কষ্টের হয়। এমনকি নারী আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান না হলেও পুরুষ অভিভাবক নিজের কোরবানির পাশাপাশি নারীর পক্ষ থেকে কোরবানি করতে পারেন। এটি সুন্নাহ।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত,... ‘আমরা যখন মিনায় ছিলাম, তখন আমার কাছে গরুর গোশত নিয়ে আসা হলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কী? লোকজন জবাবে বলল, রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কোরবানি করেছেন।’ (বুখারি, কোরবানি অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: মুসাফির ও নারীর কুরবানি: ৫২২৮)

কোরবানি যথাসময়ে না দিলে করণীয়

ওয়াজিব কোরবানি যথাসময়ে (৩ দিনের মধ্যে) দিতে না পারা ব্যক্তি কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তার ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে কোরবানি দেওয়া হয়নি তাহলে ওই পশু জীবিত সদকা করে দিতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৪; ফতোয়ায়ে কাজিখান: ৩/৩৪৫)

যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০২; আদ্দুররুল মুখতার; ৬/৩২০-৩২১)

শেষ কথা, ইসলাম নারীদের শুধু পর্দা বা নামাজে সীমাবদ্ধ রাখেনি; বরং নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাদের উপর ইবাদত ফরজ বা ওয়াজিব হয়। কোরবানি তার অন্যতম এক নিদর্শন। তাই নারীদের কোরবানি থেকে অবহেলা করা উচিত নয়। বরং সচেতন হয়ে আল্লাহর এই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে নাজাতের পথ সুগম করতে হবে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর