সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কোরবানির চামড়ার আসল হকদার কে? জানুন শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জুন ২০২৫, ১১:৩৭ এএম

শেয়ার করুন:

কোরবানির চামড়ার আসল হকদার কে? জানুন শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি

ঈদুল আজহার সময় পশু কোরবানি দেওয়ার পাশাপাশি অনেকেই এই প্রশ্নের সম্মুখীন হন—‘এই পশুর চামড়ার প্রকৃত হকদার কে?’ কেউ নিজের কাছে রেখে দেন, কেউ বিক্রি করে দেন, আবার অনেকে দান করে থাকেন মসজিদ-মাদ্রাসায়। ইসলামি শরিয়ত এ বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। চামড়া শুধু একটি অর্থনৈতিক সম্পদ নয়, বরং ইবাদতের অংশ। এর ব্যবস্থাপনাতেও রয়েছে সওয়াব কিংবা গুনাহের প্রশ্ন। চলুন দেখে নিই শরিয়তের আলোকে কারা এই চামড়ার প্রকৃত হকদার এবং কীভাবে এটি ব্যবহার করা জায়েজ।

১. চামড়া বিক্রি করা যাবে কি?

 মূল্য সদকা করার নিয়তেই কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করা যাবে। এক্ষেত্রে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েজ ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক, বিক্রি করে দিলে পুরো অর্থই সদকা করে দেওয়া জরুরি। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩০১; কাজিখান: ৩/৩৫৪)

আরও পড়ুন: পশুর চামড়া খাওয়া কি জায়েজ? 

২. চামড়ার আসল হকদার কারা?

কোরবানির চামড়া বা চামড়ার অর্থ পাওয়ার হকদার হলো জাকাত ও ফিতরার উপযুক্ত ব্যক্তিরা। এক্ষেত্রে দরিদ্র তালিবে ইলমকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া যাবে। ইলমে দ্বীনের দরিদ্র শিক্ষার্থীকে জাকাত, ফিতরা ও কোরবানির চামড়ার মূল্য প্রদানে বেশি সওয়াব আছে। কেননা কোরআনে বর্ণিত জাকাত-দান-সদকার একটি খাত হলো—ফি সাবিলিল্লাহ। জিহাদরত মুজাহিদ, হজের সফরে থাকা দরিদ্র ও ইলমে দ্বীন অর্জনকারী দরিদ্ররা এই খাতের অন্তর্ভুক্ত। (দুররুল মুখতার: ৩৪৩, হেদায়া: ১/১৮৫, রুহুল মাআনি: ৬/৩১৩)


বিজ্ঞাপন


৩. কসাইকে চামড়া দেওয়া যাবে কি?

না, চামড়া কসাইয়ের পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া নিষিদ্ধ। কসাইয়ের মজুরি আলাদা অর্থে দিতে হবে। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (স.) আমাকে তার কোরবানির পশু জবাই করতে, পশুর গোশত, চামড়া ও নাড়িভুঁড়ি সদকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এগুলোর কোনো কিছু কসাইকে দিতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি: ১৭১৭; মুসলিম: ১৩১৭)

আরও পড়ুন: ভুঁড়ি খাওয়া কি জায়েজ?

৪. নিজের ব্যবহারে চামড়া রাখা যাবে কি?

হ্যাঁ, কোরবানিদাতা চাইলে চামড়া নিজের কাছে রেখে জায়নামাজ, পাটি, জুতা ইত্যাদি তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এতে শরিয়ত বাধা দেয়নি। চামড়া দিয়ে নিজে উপকৃত হওয়া জায়েজ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা কোরবানির পশুর চামড়া দ্বারা উপকৃত হও; তবে বিক্রি করে দিও না।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ খণ্ড: ৪ পৃ-২৯) 

সংক্ষেপে কোরবানির চামড়ার শরয়ি বিধান

নিজে ব্যবহার বৈধ, বিক্রি করা যাবে, তবে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। গরিবরাই চামড়ার হকদার। এক্ষেত্রে গরিব তালিবে ইলমদের অগ্রাধিকার বেশি। ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠান—সবাইকে শরিয়তের নির্দেশ মেনে চামড়ার সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা উচিত।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর