সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘লাব্বাইকে’ মুখর হওয়ার অপেক্ষায় আরাফাতের ময়দান

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০২৫, ১০:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

arafah
১৫ লক্ষাধিক হাজি জড়ো হবেন আরাফাতের ময়দানে। (ফাইল ছবি)

পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। মক্কার অদূরে তাঁবুর শহর খ্যাত মিনায় অবস্থান নিয়েছেন লাখ লাখ হাজি। তারা সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন আছেন। রাত পোহালেই তারা রওয়ানা করবেন আরাফাতের ময়দানে। সেখানেই পালিত হবে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) পবিত্র আরাফাতের ময়দানে জড়ো হবেন লাখ লাখ হাজি। সেখানে মসজিদে নামিরায় খুতবা দেবেন হজের ইমাম। এই ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। এজন্য আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকেই হজের দিন বলা হয়।


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার ‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে আরাফাত প্রান্তর। দুই খণ্ড সাদা কাপড় (পুরুষের ইহরাম) শরীরে জড়িয়ে একত্রিত হবে আরাফার ময়দানে। সবার মুখেই একই ধ্বনি ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’- ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির।’‘লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক’ ‘হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই।’ ‘ইন্নাল হামদা ওয়াননিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ ‘সব প্রশংসা ও নেয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার, তোমার কোনো শরিক নেই’।

আরও পড়ুন

আরাফার দিন দোয়া করার উত্তম সময়, যে দোয়া পড়তে ভুলবেন না

এবার বিশ্বের নানা প্রান্তের ১৪ লাখ ৭০ হাজার হজযাত্রী হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। স্থানীয় হজযাত্রী মিলে এই সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৯৫৮ জন। 

Hajj2


বিজ্ঞাপন


হজ পালন নির্বিঘ্ন করতে কড়া নিরাপত্তাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি সরকার। ধর্মীয় বিষয়ক প্রেসিডেন্সি রোববার (২৫ মে) ঘোষণা করেছে যে, এ বছর হজে আরাফার দিনের ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করবেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শেখ সালেহ বিন হুমাইদ।

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক রাজকীয় ফরমানে তাকে আরাফাহর দিনে খুতবা দেওয়ার অনুমোদন দেন। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার পরপর এই ভাষণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। হজের খুতবা একযোগে ৩৪টি ভাষায় অনূদিত হবে।

৯ জিলহজ বৃহস্পতিবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান করে হাজিরা চলে যাবেন মুজদালিফায়। সেখানে রাতযাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন।

১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরে আসবেন। মিনায় এসে বড় শয়তানকে পাথর মারা, দমে শোকর বা কোরবানি দেওয়া ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেঁটে মক্কায় গিয়ে কাবা শরিফ তওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সায়ি করবেন।

আরও পড়ুন

নিজের ভাষায় হজের খুতবা শুনবেন যেভাবে

সেখান থেকে তারা আবার মিনায় ফিরবেন। পরে মিনায় ১১ ও ১২ জিলহজ থেকে তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ি তওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

এদিকে এবার এমন সময় হজ পালিত হচ্ছে যখন সৌদি আরবের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির উপরে। এজন্য হিটস্ট্রোকসহ অন্যান্য তাপজনিত শারীরিক সমস্যা এড়াতে হজ পালনকারীদের সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সরাসরি সূর্যালোক এড়িয়ে ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থান করার পরামর্শ দিয়েছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।

Hajj3

গত বছর প্রচণ্ড গরমে ১ হাজার ৩০১ জন হাজির মৃত্যু হয়েছিল। এ বছর সেই ভয়াবহতা এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ছায়াযুক্ত এলাকা তৈরিসহ নানা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

আরও পড়ুন

চলতি মৌসুমে হজের খুতবা দেবেন যিনি

গত বছরের প্রাণঘাতী গরমের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে তাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে, এবার কাজ করছে ৪০টিরও বেশি সরকারি সংস্থা এবং আড়াই লাখ কর্মকর্তা। সৌদি হজমন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়া জানান, এবারে ছায়াযুক্ত জায়গা ৫০ হাজার বর্গমিটার (১২ একর) বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৪০০টির বেশি শীতলীকরণ ইউনিট এবং দ্রুত চিকিৎসা সহায়তার জন্য অতিরিক্ত হাজার হাজার মেডিকেল কর্মী মোতায়েন থাকবে।

এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে এবার হজ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হয়েছে ড্রোন ক্যামেরা ও বিশাল তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবস্থা। বিশাল জনসমাগমের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে এ প্রযুক্তি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

গত বছরের মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন অনিবন্ধিত হাজি। তাদের জন্য পর্যাপ্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু বা বাসের ব্যবস্থা ছিল না। এবার অনিবন্ধিত হাজীদের ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। চলছে টেক্সট মেসেজ সতর্কতা, ড্রোন নজরদারি এবং নিয়মিত অভিযান।

জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর