সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জিলহজ মাসের কিছু ভিত্তিহীন আমল

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৫, ১২:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

জিলহজ মাসের কিছু ভিত্তিহীন আমল

জিলহজ মাস ইসলামি বর্ষপঞ্জির অন্যতম ফজিলতপূর্ণ মাস। এটি হজ, কোরবানি ও আরাফার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সময়কাল। পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদিসে এ মাসের ফজিলত সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ ফজিলতপূর্ণ মাসকে ঘিরে অনেক জাল ও ভিত্তিহীন আমল সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ ইবাদতের নামে ভিত্তিহীন আমল চালু করা শরিয়তবিরোধী কাজ।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে জিলহজ মাসের সত্যিকার ফজিলত

আল্লাহ তাআলা বলেন- وَالْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ (সুরা ফজর: ১-২) তাফসিরবিদদের মতে, এখানে দশ রজনী বলতে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন বোঝানো হয়েছে। (তাফসির ইবনে কাসির: ৪/৪৩৯)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘আল্লাহর নিকট নেক আমলের জন্য বছরের এমন কোনো দিন নেই, যা জিলহজের দশ দিনের চেয়ে অধিক প্রিয়।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪৩৮)

আরাফার দিনের রোজা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, আরাফার দিনের রোজা পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

আরও পড়ুন: জিলহজের প্রথম ১০ দিনের ফজিলতপূর্ণ ১০ আমল


বিজ্ঞাপন


ভিত্তিহীন ও জাল আমলের উদাহরণ

  • জিলকদ মাসে রোজা রাখলে ‘প্রতি মুহূর্তে হজের সওয়াব’, ‘সোমবার রোজা রাখলে এক হাজার বছরের ইবাদতের সওয়াব’—এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই।
  • আরাফার রাতে নির্দিষ্ট রাকাতে নামাজ, প্রতি রাকাতে বহুবার সুরা ইখলাস পাঠ ইত্যাদি বানোয়াট আমল।
  • জিলহজের প্রথম ৯ দিনের প্রতিটির রোজায় আলাদা ফজিলত (যেমন— প্রথম দিন রোজা রাখলে দুই হাজার বছরের জিহাদের সওয়াব)—এগুলো জাল।

জিলহজের ভিত্তিহীন আমল নিয়ে ইসলামি স্কলারদের বক্তব্য

ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহ) বলেন, ‘যে হাদিসগুলোতে অতিরঞ্জিত ফজিলত পাওয়া যায়, অথচ সহিহ সূত্র নেই, সেগুলো পরিত্যাগ করাই উচিত।’ (আল-মানারুল মুনিফ) ইমাম নববি (রহ) বলেন, ‘ইবাদতের ব্যাপারে জাল হাদিস গ্রহণ করা হারাম এবং কবিরা গুনাহ।’ (মুকাদ্দিমা, শরহ মুসলিম) আল্লামা আব্দুল হাই লখনবি (রহ.) বলেন, ‘বরকতময় দিনগুলোতে নির্দিষ্ট রাকাত ও পদ্ধতির কোনো নামাজ সহিহ হাদিসে নেই। এসব বানানো।’ (আলআসারুল মারফুআহ, পৃ: ৮)

হাদিস বিশারদ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘এই বর্ণনাগুলো যদি জাল না হয়, তবে দুনিয়ায় আর কোনো জাল হাদিস নেই।’ (লিসানুল মিজান: ৭/৪০৫)

আরও পড়ুন: জিলহজ মাসের ৯ রোজা 

জিলহজের মাসনুন আমল

  • জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা (বিশেষ করে ৯ তারিখ)। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২; আবু দাউদ: ২৪২৫)
  • অধিক জিকির, তাসবিহ, তাহলিল, তাকবির, কোরআন তিলাওয়াত। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ৩৪৭৪)
  • কোরবানি করা। (সুরা কাউসার: ২
  • হজ পালন। (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)
  • কোরবানির নিয়ত থাকলে জিলহজের চাঁদ ওঠার পর কোরবানি পর্যন্ত নখ ও চুল না কাটা। (মুসলিম: ৪৯৫৯, আবু দাউদ: ২৭৮২) 

শেষ কথা, জিলহজ ও জিলকদ মাস সম্মানিত ঠিকই, তবে ইবাদতের ক্ষেত্রে জাল ও বানোয়াট বর্ণনার অনুসরণ আত্মার ওপর জুলুম। আল্লাহ তাআলা বলেন- فَلَا تَظْلِمُوْا فِیْهِنَّ أَنْفُسَكُمْ ‘সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন জুলুম করো না।’ (সুরা তাওবা: ৩৬)

তাই আসুন, আমরা দলিলভিত্তিক সহিহ আমল করি এবং জাল-বানোয়াট হাদিস থেকে দূরে থাকি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহিহ দলিলভিত্তিক আমলের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর