বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। আবহাওয়াবিদরা সতর্কতা জারি করছেন। এ অবস্থায় নিরাপত্তা ও সতর্কতা গ্রহণের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মীয় দিক থেকেও কিছু আমল করার প্রতি উৎসাহিত করে, যা আত্মিক প্রশান্তি ও আল্লাহর সাহায্য অর্জনে সহায়ক।
সতর্কতা ও প্রস্তুতি
ইসলাম আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা ও প্রস্তুতি গ্রহণের শিক্ষা দেয়। ধ্বংস ও ক্ষতির হাত থেকে আত্মরক্ষার তাগিদ দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে ফেল না।’ (সুরা বাকারা: ১৯৫) দুর্যোগে পীড়িত হওয়ার আশংকা থাকলে প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হবে। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করল, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কীভাবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব? আমার উটনীটি ছেড়ে দিয়ে নাকি বেঁধে রেখে?’ রাসুল (স.) বললেন, ‘প্রথমে তোমার উটনীটি বাঁধ, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর।’ (তিরমিজি: ২৫১৭)
এই হাদিসের শিক্ষা হলো- প্রথমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এরপর তাওয়াক্কুল করতে হবে। তাই যেকোনো দুর্যোগে নিজের ও পশুপাখির জীবন রক্ষা এবং সম্পদ রক্ষার প্রয়োজনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
তওবা ও ইস্তিগফারের তাগিদ
ইসলামে দুর্যোগ ও বিপদাপদকে আত্মসমালোচনার উপলক্ষ হিসেবে দেখা হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন- ‘আমি কোনো জনপদকে ধ্বংস করি না যতক্ষণ না তার বাসিন্দারা অত্যাচারী হয়।।’ (সুরা কাসাস: ৫৯)
এই আয়াতই বলে দিচ্ছে- বিপদের সময় নিজের গুনাহের জন্য তওবা ও ইস্তিগফার করা গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: তাওবা করতে দেরি না করার উপকার
নফল নামাজ ও দোয়ার গুরুত্ব
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করা মোস্তাহাব আমল। হাদিসে রয়েছে— ‘সালাতই মুমিনের শক্তির উৎস।’ এছাড়া বিশেষ দোয়া হিসেবে পড়া যেতে পারে— اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ وَجَمِيعِ سَخَطِكَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাওয়ালি নি‘মাতিকা, ওয়া তাহাওউলি আফিয়াতিকা, ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা, ওয়া জামিয়ি সাখাতিকা।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার নিয়ামত চলে যাওয়া থেকে, আপনার অনুকম্পার পরিবর্তন, আকস্মিক শাস্তি এবং আপনার সব ক্রোধ থেকে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ: ১৫৪৫)
দান- সদকা গজব প্রতিরোধ করে
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা অধিক হারে সদকা করো। কেননা বালা-মুসিবত সদকাকে অতিক্রম করতে পারে না।’ (বায়হাকি: ৮০৮৩)
তাই এ সময় গরিব-দুঃস্থদের সাহায্যে এগিয়ে আসাও হতে পারে এক অনন্য আমল।
আরও পড়ুন: দান-সদকার যেসব প্রতিদান আল্লাহ দুনিয়াতেই দিয়ে দেন
ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর ভরসা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক: ৩)
সুতরাং ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ ও আস্থাশীল থাকা প্রয়োজন।
একে অপরকে সাহায্য করা
ইসলামে সামাজিক সহায়তা ও ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব অনেক। যাদের সাহায্যের প্রয়োজন, তাদের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘এক মুসলিম আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু প্রস্তুতি নয়, বরং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মহান আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়াই হতে পারে বিপদ থেকে মুক্তির অন্যতম পথ।

