মানুষের গুনাহ হবে—এটি খুব স্বাভাবিক। কিন্তু গুনাহের পর সময়ক্ষেপণ করা উচিত নয়। এতে অন্তর কঠিন হয়ে যায়। তাই দ্রুত ক্ষমা চেয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আমাদের অনেকে ক্ষমা চাইতে দেরি করে ফেলি। কারও ক্ষেত্রে ক্ষমাপ্রার্থনার আগেই মৃত্যু চলে আসে, যা কখনও মুমিনের কাম্য নয়।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহের কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাওবা করে তখন তার অন্তর পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তাআলা যা বর্ণনা করেছেন- ‘কখনই না, বরং তাদের অপকর্মসমূহ তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়েছে’ (সুরা মুতাফফিফিন: ১৪) (তিরমিজি: ৩৩৩৪; ইবনে মাজাহ: ৪২৪৪; মেশকাত: ২৩৪২; সহিহুল জামে: ১৬৭০)
বিজ্ঞাপন
আর যাদের অন্তর কঠিন ও আল্লাহর ভয়শূন্য, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা হুঁশিয়ারি করেন, ‘দুর্ভোগ ওই লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর। তারা সুস্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে।’ (সুরা জুমার: ২২)
অতীত পাপকাজে অনুশোচিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে ওই পাপকাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার প্রতিজ্ঞা করার নামই তাওবা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো- বিশুদ্ধ তওবা; সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা তাহরিম: ৮)
আরও পড়ুন: তাওবা করার সঠিক নিয়ম
তাই আল্লাহভীতি জাগ্রত করতে হবে। আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে বিলম্ব না করে তাওবা করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব মানুষের তাওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তাওবা করে। এরাই তারা, যাদের তাওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলো; সে বলে, আমি এখন তাওবা করছি। এবং তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফের অবস্থায়। এরা তারাই, যাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তির ব্যবস্থা।’ (সুরা নিসা: ১৭-১৮)
বিজ্ঞাপন
অতএব গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তাওবা করা উচিত। আমরা অনেকে মনে করি, আমরা পাপের সাগরে ডুবে গেছি, আল্লাহ আমাদের হয়তো ক্ষমা করবেন না; এগুলো ভুল ধারণা। তিনি দয়ার সাগর। বান্দার এক বিন্দু অনুশোচনার অশ্রু তিনি সহ্য করতে পারেন না। তাই এক ফোঁটা অশ্রু দিয়েই তিনি বান্দার জীবনের সকল গুনাহ ধুয়ে সাফ করে দেন। জাহান্নামকে চিরতরে হারাম করে দেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে লোক কাঁদে, তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার ওলানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তাআলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না (আল্লাহ তাআলার পথের পথিক জাহান্নামে যাবে না)। (তিরমিজি: ১৬৩৩)
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হও, আল্লাহ তাআলা তার বান্দার তাওবাতে এরচেয়েও বেশি খুশি হন।’ (বুখারি: ৬৭০৯)
আরও পড়ুন: তাওবা কবুলের জন্য যে দোয়াগুলো পড়বেন
যখনই কোনো অন্যায় হয়ে যায়, তখন অবিলম্বে তাওবা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদেরই তাওবা কবুল করেন, যারা না জেনে মন্দ কাজ করে, তারপর অচিরেই তাওবা করে। এদেরই তওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা: ১৭)
কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি গুনাহ করার পর তাওবা করে, আবারও গুনাহ করে। আবার তাওবা করে আবার গুনাহ করে। অর্থাৎ তার প্রবল ইচ্ছা পাপ থেকে দূরে থাকার; কিন্তু শয়তানের কারণে সে বারবার ব্যর্থ হয় তাহলে তার কর্তব্য হলো সর্বদা তওবা-ইস্তেগফার করতে থাকা, সেইসঙ্গে আল্লাহর কাছে এ ব্যাপারে সাহায্য চাওয়া।
কোনো অবস্থাতেই সঙ্কোচবোধ না করা যে, আমি তো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছি, আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি আর কখনও এই কাজ করব না কিন্তু কথা রাখতে পারিনি, তাহলে কোন মুখে আল্লাহর কাছে আবার ক্ষমা চাইব। এই কথা ভেবে কখনও তাওবা থেকে বিরত থাকা যাবে না। তবে আবারও গুনাহ না করার দৃঢ় শপথ ও লজ্জিত হতে হবে। কারণ, তিনি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই। ক্ষমা তো তাঁর কাছেই চাইতে হবে। দয়াবান আল্লাহ বলেন—
‘আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে আছে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তারা তার পুনরাবৃত্তি করে না।’ (সুরা ইমরান: ১৩৫)
তাই আসুন, কৃত গুনাহের জন্য দ্রুত তাওবা করে নিজেকে পবিত্র করি। কোনো অবস্থাতেই তাওবা করতে দেরি না করে ফেলি। আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে নিজেকে মুক্ত করি। জাহান্নামের পথ ছেড়ে জান্নাতের পথে চলি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

