ইসলামি ক্যালেন্ডারের শেষ মাস জিলহজ। এই মাস ইবাদত, তাকওয়া, কোরবানি ও আত্মত্যাগের মাস। কোরবানির আগে জিলহজের প্রথম দশ দিনকে হাদিসে বছরের শ্রেষ্ঠতম দিন বলা হয়েছে। এ সময় ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য বড় ফজিলতের কাজ। তাহলে এই বরকতময় মাসটি কীভাবে শুরু করা উচিত? চলুন জেনে নিই।
১. চাঁদ দেখা: মাস শুরুর সুন্নত আমল
জিলহজ মাসের সূচনা চাঁদ দেখার মাধ্যমে হয় এবং এটি একটি সুন্নত আমল। প্রত্যেক হিজরি ক্যালেন্ডারের হিসাব রাখা, মাসের শুরুতে নতুন চাঁদ উঠেছে কি না দেখা, খবর রাখা মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তারা আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলুন, তা মানুষের ও হজের জন্য সময় নির্ধারক। (সুরা বাকারা: ১৮৯)
নবীজি (স.) নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়তেন। জিলহজ, রমজান, শাওয়ালসহ আরবি যে কোনো মাসের নতুন চাঁদ দেখে এ দোয়াটি পড়া নবীজির সুন্নত- اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالْإِسْلَامِ رَبِّي وَرَبُّكَ اللَّهُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহূ আলায়না বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি রাব্বী ওয়া রাব্বুকাল্লাহু’। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদ নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় করুন। (হে চাঁদ!) আমার রব ও তোমার রব এক আল্লাহ। (সুনানে তিরমিজি: ৩৪৫১)
জিলহজের নতুন চাঁদ দেখে নবীজির (স.) অনুসরণে উপরোক্ত দোয়া আমরাও পড়তে পারি।
বিজ্ঞাপন
২. নিয়ত শুদ্ধ করা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা
এই মাসে ইবাদতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা, অন্তরে নিয়ত করা যেন এ দশ দিনকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে পারি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা বলো, নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু—সবই আল্লাহর জন্য।’ (সুরা আনআম: ১৬২)
৩. তাওবা ও ইস্তিগফার দিয়ে শুরু
জিলহজের সূচনা হোক আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে। বেশি বেশি তাওবা করা ও এই দোয়া করা উচিত- رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগ ফিরলী ওয়াল ওয়ালিদাইয়া ওয়ালিল মু’মিনীনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব, রোজ কেয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন’। (সুরা ইবরাহিম: ৪১)
আরও পড়ুন: আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় ৪ জিকির
৪. তাহলিল, তাহমিদ, তাকবিরের আমল শুরু করা
নবী (স.) বলেছেন- ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের দশ দিনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোনো দিন নেই। তোমরা এ দিনগুলোতে বেশি বেশি ‘তাহলিল’ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), ‘তাকবির’ (আল্লাহু আকবার) এবং ‘তাহমিদ’ (আলহামদুলিল্লাহ) পাঠ করো।’ (মুসনাদে আহমদ: ৫৪৪৬)
৫. চুল-নখ না কাটা : কোরবানির সুন্নত আমল
যারা কোরবানি করবেন, তাদের জন্য জিলহজ মাস শুরু হলে কোরবানি করা পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটা সুন্নত। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোরবানি দিতে চায়, সে যেন জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি দেওয়া পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।’ (সহিহ মুসলিম: ১৯৭৭)
আরও পড়ুন: জিলহজে চুল-নখ না কাটা সুন্নত, মোস্তাহাব নাকি আবশ্যক?
৬. কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়ার গুরুত্ব
জিলহজের এই বরকতময় দিনগুলো কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ, দোয়া ও জিকিরে কাটানো অত্যন্ত ফজিলতের কাজ। রাসুল (স.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ তিলাওয়াত করে, সে একটি নেকি পায়, আর প্রতিটি নেকির মূল্য ১০ গুণ।’ (তিরমিজি: ২৯১০)
৭. নফল রোজার নিয়ত করা (যেমন ৯ জিলহজে আরাফা রোজা)
আরাফার দিন রোজা রাখা মহান ফজিলতের কাজ। নবীজি (স.) বলেন- ‘আরাফার রোজা পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
শেষ কথা, জিলহজ মাসের সূচনাই হোক তাওবা, ইবাদত, তাকওয়া ও নিয়তের বিশুদ্ধতার মাধ্যমে। এই মাসের প্রতিটি দিন মূল্যবান, প্রতিটি মুহূর্তই সওয়াবের ভাণ্ডার। তাই প্রথম দিন থেকেই পরিকল্পিতভাবে আমল শুরু করাই এক জন মুমিনের পরিচয়।

