ইসলামে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব (অবশ্যক)। তবে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন— কতটুকু সম্পদের মালিক হলে কোরবানি ওয়াজিব হয়? বিশেষত যাদের কাছে আছে ৫ ভরি স্বর্ণ, তারা জানতে চান, কেবল এতটুকু স্বর্ণ থাকলেই কি কোরবানি করতে হবে? আসুন, এ বিষয়ে শরিয়তের বিধান জেনে নিই।
কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত
ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী, কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত পূরণ হতে হয়। যেমন— মুসলিম হতে হবে, বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হতে হবে, মুকিম (অস্থায়ী ভ্রমণকারী নয়) হতে হবে এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে
নিসাব পরিমাণ সম্পদ কী
নিসাব নির্ধারণ করা হয় রূপা বা সোনার ভিত্তিতে। সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব সম্পদ মিলে সাড়ে ৫২ ভরি রুপার সমমূল্যের হলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। এই নিসাব জাকাতের মতো বর্ষপূরণ হওয়া জরুরি নয়, বরং ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে এই সম্পদের মালিক হলে তাকে কোরবানি দিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, সরাসরি স্বর্ণ বা রুপা থাকা শর্ত নয়, বরং সমমূল্যের প্রয়োজনের অতিরিক্ত নগদ অর্থ বা বাড়ি বা ব্যবসায়িক পণ্য বা অন্যান্য আসবাবপত্র কোরবানির নিসাবের অন্তর্ভুক্ত। (তাবয়িনুল হাকায়িক, পৃষ্ঠা: ১০, খণ্ড: ৬) ব্যবসার নিয়তে জমি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, কাপড়-চোপড়, অলংকার, নির্মাণ সামগ্রী, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়ার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি কিনলে তা বাণিজ্য-দ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং এসবের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। (সূত্র: মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭১০৩-৭১০৪)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: কোরবানির নিসাব যেভাবে হিসাব করবেন
অতএব, কোরবানির দিনগুলোতে প্রয়োজনিতিরিক্ত সব সম্পদ মিলে সাড়ে ৫২ তোলা রূপার সমমূল্যের হলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। সাড়ে ৫২ তোলার সমমূল্যের না হলে তাকে কোরবানি দিতে শরিয়ত বাধ্য করে না।
তাহলে ৫ ভরি সোনা থাকলে কী হবে?
৫ ভরি সোনা নিসাবের মান পূরণ করে না। সুতরাং আপনার কাছে যদি শুধু ৫ ভরি স্বর্ণ থাকে এবং এর বাইরে নগদ টাকা, ব্যবসার মাল, সেভিংস, জমি বা সম্পদ না থাকে, তাহলে আপনার উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। যেমন, একজন নারীর কাছে শুধু ৫ ভরি গহনা আছে, কোনো নগদ অর্থ বা আয় নেই, তার ওপর কোরবানি ফরজ হবে না। কিন্তু ৫ ভরি সোনার সঙ্গে যদি ৫০,০০০ টাকা সঞ্চয়ে থাকে, তখন সম্পদের মোট মূল্য হিসাব করে দেখা হবে সাড়ে ৫২ ভরি রূপার সমমূল্যের হচ্ছে কি না। সাড়ে ৫২ ভরি রূপার সমমূল্যের হলেই তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।
তবে কি নফল কোরবানি করা যাবে?
হ্যাঁ, যদি ইচ্ছা থাকে, নফল কোরবানি করা যাবে এবং এতে বড় সওয়াব রয়েছে। যদিও ওয়াজিব নয়, তবুও এটি নফল ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।
আরও পড়ুন: কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হয়?
জরুরি মাসয়ালা
কারো ওপর কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার পর যদি নগদ অর্থ দিয়ে কোরবানির পশু ক্রয় করতে না পারে, তাহলে ঋণ করে হলেও কোরবানি দিতে হবে। পরে তা আদায় করে দেবে। যদি এটিও সম্ভব না হয় এবং কোরবানির দিনগুলো অতিবাহিত হয়ে যায়, তাহলে পরবর্তীতে একটি মধ্যমপন্থী বকরির মূল্য কোরবানির নিয়তে সদকা করে দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ৪৫৩-৯/৪৫২; দুররুল মুখতার: ৯/৪৬৩)
পরিশেষে বলা যায়, শুধু ৫ ভরি স্বর্ণ থাকলে এবং এছাড়া অন্য সম্পদ না থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হয় না। তবে সঙ্গে অন্য সম্পদ বা নগদ অর্থ থাকলে হিসাব করে দেখা জরুরি। কোরবানি এমন এক ইবাদত যা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। তাই নিজের আর্থিক অবস্থা সঠিকভাবে বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যথাসময়ে সঠিকভাবে কোরবানির হুকুম পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

