সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হজে গিয়ে শপিং : ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

হজে গিয়ে শপিং : ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি

হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম এবং আল্লাহর ঘরে আত্মসমর্পণের মহৎ ইবাদত। কিন্তু দেখা যায়, অনেক হাজি এই পবিত্র সফরকে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম এবং শপিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করে ফেলেন। এতে ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুতি ঘটে। এই প্রতিবেদনটি হজের সময় শপিংয়ের শরিয়ত সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি ও বিধান তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।

হজের সময় শপিংয়ের বর্তমান বাস্তবতা

মক্কা ও মদিনার আশপাশে আজকাল অসংখ্য শপিং মল, দোকানপাট ও ব্র্যান্ড আউটলেট গড়ে উঠেছে। এমনকি কিছু চালক মুসল্লিদের বিনামূল্যে দূরবর্তী শপিং মলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন, যাতে তারা সেখানে বেশি সময় কাটাতে পারেন। এর ফলে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববিতে ইবাদতের গুরুত্ব কমে যায় এবং মনোযোগ বিচ্যুত হয়। অনেকে শপিংয়ে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় করেন, যা হজের মূল উদ্দেশ্য তথা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও আত্মশুদ্ধি—থেকে সরিয়ে নেয়।

শরিয়তে মসজিদের মর্যাদা ও বাজারের অবস্থা

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় স্থান হল মসজিদ এবং সবচেয়ে অপছন্দনীয় স্থান হল বাজার।’ এই হাদিস নির্দেশ করে- ইবাদতের জায়গায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা উচিত, আর বাজার ও শপিং মলকে অপ্রয়োজনীয় স্থান হিসেবে দেখা উচিত। 

আরও পড়ুন: হজের পবিত্র সফরে সালাফদের হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতা


বিজ্ঞাপন


হজের সময় অপ্রয়োজনীয় কাজের ক্ষতি

নবীজি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করে এবং কোনো পাপ দ্বারা নিজেকে দাগিয়ে না ফেলে, সে যেন নবজাত শিশুর মত পবিত্র হয়ে ফিরে আসে।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) তাছাড়া অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। (সুরা ইসরা: ২৭) 
অতএব, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বা অর্থ অপচয় শরিয়ত পরিপন্থী। শপিংয়ে বেশি সময় কাটানো তাওয়াফ, নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের সময় কমিয়ে দেয়। উপরন্তু হাদিসের মূলভাষ্য অনুযায়ী এ কারণে হজ কবুল না হওয়ারও সম্ভাবনা থেকে যায়।

শপিংয়ের সীমা : ফিকহি নির্দেশনা

হজ বা ওমরা সফরে জরুরি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা যায় যেমন ওষুধ, পোশাক, খাবার ইত্যাদি। তবে, কেনাকাটা যেন ইবাদতের সময় ও মনোযোগ বিঘ্নিত না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং 
নিজেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে সবসময়। অপচয় ও অতিরিক্ত ব্যয় থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

আরও পড়ুন: হজে গিয়ে যেসব কাজ করার চিন্তাও করবেন না

ইবাদতে একাগ্রতা ও তাকওয়া যেন নষ্ট না হয়

অপ্রয়োজনীয় কাজ ইবাদতে একাগ্রতা, মনোযোগ ও তাকওয়া নষ্ট করে। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এসবের বিকল্প নেই। এগুলো ইবাদতের গুণগত মান বাড়ায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম। একাগ্রতা মানে সম্পূর্ণ আল্লাহর জন্য নিবেদিত ইবাদত। এটি অন্তরের বিষয়। আবুদ দারদা (রা.) বলতেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে নিফাকমার্কা একাগ্রতা থেকে আশ্রয় চাই।’ প্রশ্ন করা হলো, ‘নিফাকমার্কা একাগ্রতা কী?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘তুমি দেখবে বাহ্যিকভাবে শরীর একাগ্র ও বিনম্র কিন্তু অন্তর থাকবে আল্লাহ থেকে অনেক দূরে।’ আর তাকওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ ‘আল্লাহ শুধুমাত্র পরহেজগারদের থেকে ইবাদত কবুল করেন।’ (সুরা মায়েদা: ২৭)

বর্তমান ভোগবাদী সমাজে হজের সঙ্গে শপিং একধরনের প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ইসলামি শিক্ষার পরিপন্থী। আমাদের উচিত এই মহৎ ইবাদতকে সম্পূর্ণ নিবেদিত মনোযোগ দিয়ে পালন করা। সময় ও অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে হজকে প্রকৃত ইবাদত ও তাকওয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করা। হজ যেন শুধু পর্যটন বা কেনাকাটার সফরে রূপান্তরিত না হয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির সফরে পরিণত হয়—এটাই হওয়া উচিত আমাদের মূল লক্ষ্য।

আপনার হজের সফর হোক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিবেদিত ও সফল। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর