রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইবরাহিম (আ.)-এর স্ত্রী সারার চমকপ্রদ ঘটনা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ মে ২০২৫, ০৭:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ইবরাহিম (আ.)-এর স্ত্রী সারার চমকপ্রদ ঘটনা

হজরত সারা (আ.) ছিলেন হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর প্রথম স্ত্রী। তিনি ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ সুন্দরীদের একজন। যখন ইবরাহিম (আ.)-এর তাওহিদের দাওয়াত কেউ গ্রহণ করছিল না, তখন তিনি হিজরত করার সিদ্ধান্ত নেন। স্ত্রীকে নিয়ে হিজরত করছিলেন। পথিমধ্যে তৎকালীন অত্যাচারী বাদশাহ খবর পায় যে, ইবরাহিম নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে এক সুন্দরী মহিলা যাচ্ছেন। ওই বাদশাহর স্বভাব ছিল যেকোনো সুন্দরী মহিলার ইজ্জত লুণ্ঠন করা।

এ জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সে লোক নিয়োগ করে রেখেছিল। যাদের কাজই ছিল- বিভিন্ন স্থান থেকে সুন্দরীদের ধরে এনে তার কাছে সোপর্দ করা। সে যুগে উক্ত বাদশাহর কবল থেকে রেহাই পাওয়া সুন্দরী নারীদের জন্য দূরহ ব্যাপার ছিল।


বিজ্ঞাপন


পথ চলতে চলতে যখন ইবরাহিম (আ.) বাবিলের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মিশরের সিমান্তে প্রবেশ করলেন, তখনই ওই অঞ্চলের বাদশা ‘সাদেফ বিন সাদেফ’ মতান্তরে ‘সেনান বিন উলওয়ান’ অথবা ‘ওমর বিন ইমরউল কাইছ’ এর বাহিনী হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করল- আপনার সঙ্গে এই মহিলা কে? ইবরাহিম (আ.) জানতেন, কোনো মহিলার সাথে তার আপন ভাই বা পিতা থাকলে তাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় না। তাই তিনি জবাব দিলেন, এ আমার বোন (অর্থাৎ ধর্মীয় বোন)। কিন্তু এ কথা বলেও রেহাই মেলেনি। শেষ পর্যন্ত তারা হজরত সারা (আ.)-কে নিয়ে বাদশার হাতে অর্পণ করল।

আরও পড়ুন: মুসা (আ.)-এর থাপ্পড়ে আজরাইলের চোখ বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা

ঘটনাটি সহিহ বুখারিসহ অনেক হাদিসগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ইবরাহিম (আ.) সারাকে সঙ্গে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ  করলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বললেন, এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হলো যে, ইবরাহিম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে (আমাদের এখানে) প্রবেশ করেছে। সে তখন তাঁর নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে ইবরাহিম, তোমার সঙ্গে এ নারী কে? তিনি (ইবরাহিম আ.) বললেন, আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট এসে বললেন, তুমি আমার কথা মিথ্যা মনে করো না। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। আল্লাহর শপথ! দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ব্যতীত আর কেউ মুমিন নেই। সুতরাং আমি ও তুমি দ্বীনি ভাই বোন। এরপর ইবরাহিম (আ.) (বাদশাহর নির্দেশে) সারাকে বাদশাহর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাঁর দিকে অগ্রসর হলো। সারা অজু করে সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং দোয়া করলেন- اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ آمَنْتُ بِكَ وَبِرَسُولِكَ وَأَحْصَنْتُ فَرْجِي إِلاَّ عَلَى زَوْجِي فَلاَ تُسَلِّطْ عَلَيَّ هَذَا الْكَافِرَ ‘হে আল্লাহ, আম তোমার ওপর এবং তোমার রাসুলের ওপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ব্যতীত সকল হতে আমার লজ্জাস্থানের হেফাজত করেছি। তুমি এই কাফিরকে আমার ওপর ক্ষমতা দিও না।’

তখন বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগলো। তখন সারা বললেন, আয় আল্লাহ! এ যদি মারা যায় তবে লোকে বলবে, স্ত্রীলোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেল। এভাবে দু’বার বা তিনবারের পর বাদশাহ (তার খাদেমদের) বলল, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহিমের নিকট ফিরিয়ে দাও এবং তার (সারার) জন্য হাজেরাকে হাদিয়াস্বরূপ দান করো। সারা (রা.) ইবরাহিম (আ.)-এর নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনি জানেন কি, আল্লাহ তাআলা কাফিরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক বাঁদী হাদিয়া হিসেবে দিয়েছে। (সহিহ বুখারি: ২২১৭)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: হজরত ইবরাহিমের যে প্রশ্ন শুনে বাদশাহ লা-জওয়াব

অন্য বর্ণনামতে, হজরত সারা ইবরাহিম (আ.)-এর কাছ থেকে চলে যাওয়ার পর ইবরাহিম (আ.) নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর সারা যখন তার কাছে প্রবেশ করলেন তখন রাজা তাকে ধরার জন্য হাত বাড়াল, তখনই সে আল্লাহর ক্রোধে পাকড়াও হলো। অন্য বর্ণনায় রয়েছে- তার দম বন্ধ হয়ে গেল, এমনকি জমিনে পা মারতে লাগল। অত্যাচারী (অবস্থা বেগতিক দেখে সারাকে) বলল, আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করো, আমি তোমার ক্ষতি করব না। তখন সারা (তার জন্য) আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। ফলে সে মুক্তি পেল। অতঃপর সে দ্বিতীয়বার তাঁকে ধরার জন্য হাত বাড়াল। তখন সে আগের মতো কিংবা আরো কঠিনভাবে পাকড়াও হলো। এবারও সে বলল, আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করো, আমি তোমার কোনো অকল্যাণ করব না। অতএব সারা আবারও আল্লাহর কাছে দোয়অ করলেন। ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল। তখন সে রাজা তার একজন দারোয়ানকে ডেকে বলল, তোমরা তো আমার কাছে কোনো মানুষকে আননি; বরং তোমরা আমার কাছে এনেছ একজন শয়তানকে। এরপর সে সারার সেবার জন্য হাজেরা (নামে একটি রমণী)-কে দান করল। অতঃপর সারা ইবরাহিম (আ.) -এর কাছে ফিরে আসলেন, তখনো তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। (সালাতের মধ্যেই) হাতের ইশারায় সারাকে প্রশ্ন করলেন, ঘটনা কী হলো? সারা বললেন, আল্লাহ তাআলা কাফিরের চক্রান্ত তারই বক্ষে পাল্টা নিক্ষেপ (নস্যাৎ) করেছেন। আর সে আমার সেবার জন্য হাজেরাকে দান করেছে। আবু হুরায়রা (রা.) হাদিসটি বর্ণনা করে বললেন, হে আকাশের পানির সন্তান! অর্থাৎ হে আরববাসীগণ! এই হাজেরাই তোমাদের আদি মাতা। (মুসলিম, মেশকাত: ৫৭০৪)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর