সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কোরবানি করার আগে শিশু ইসমাইলকে যা বলেছিলেন ইবরাহিম (আ.)

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২৫, ০৭:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

কোরবানি করার আগে শিশু ইসমাইলকে যা বলেছিলেন ইবরাহিম (আ.)

হজরত ইবরাহিম (আ.) ছিলেন উচ্চমর্যাদাবান একজন নবী। প্রায় ৯০ বছর তাঁর কোনো সন্তান হয়নি। তাঁর স্ত্রী হাজেরা (আ.)-এর বয়স তখন ৮০ ছুঁইছুঁই। সন্তানশূন্যতার হাহাকার থেকে জীবনসন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন- رَبِّ هَبْ لِيْ مِنَ الصّٰلِحِيْنَ ‘হে আমার রব! আমাকে নেক সন্তান দান করুন।’ (সুরা সাফফাত: ১০০)

তাঁর দোয়া কবুল হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁকে এক আলোকিত সন্তান দান করেন। যাঁর নাম রাখা হয় ইসমাইল। সন্তান পেয়ে বাবা ইবরাহিম (আ.) খুব খুশি হন এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। কিন্তু নবীদের ওপর আল্লাহর পরীক্ষা কঠিন। শিশু সন্তানকে নিয়ে একাধিক পরীক্ষার সম্মুখীন হন হজরত ইবরাহিম (আ.)। 


বিজ্ঞাপন


একটি পরীক্ষা হলো- সেই কলিজার টুকরা সন্তানকেই কোরবানি করে দেওয়া। ইসমাইল (আ.) যখন বেড়ে ওঠা শুরু করেন, বাবার সঙ্গে ছোটাছুটি করার বয়সে উপনীত হন, তখন বাবা স্বপ্নে দেখেন, তিনি কলিজার টুকরোকে জবাই করছেন। যদিও এটা স্বপ্ন ছিল; কিন্তু নবীদের স্বপ্ন ওহি হয়ে থাকে; তাই ইবরাহিম (আ.) একে আল্লাহ তাআলার আদেশ সাব্যস্ত করেন। 

আরও পড়ুন: আগের যুগে কোরবানি কবুল হলে মানুষ বুঝতে পারত

স্বপ্নের কথা তিনি একমাত্র সন্তানকেই জানিয়েছিলেন। শিশু ইসমাইল বাবার কথা শুনে ভয়হীন ও দ্বিধাহীনভাবে বললেন, আপনি আল্লাহর আদেশ পালন করুন, আমি সবর করব ইনশাআল্লাহ। 

বিষয়টি পবিত্র কোরআনে উঠে এসেছে এভাবে— يٰبُنَيَّ اِنِّيْۤ اَرٰي فِي الْمَنَامِ اَنِّيْۤ اَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَا ذَا تَرٰي قَالَ يٰۤاَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِيْۤ اِنْ شَآءَ اللهُ مِنَ الصّٰبِرِيْنَ  فَلَمَّاۤ اَسْلَمَا وَتَلَّهٗ لِلْجَبِيْنِ ‘হে আমরা বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি, তোমাকে জবেহ করছি। তাই তুমি চিন্তা করে দেখ, তোমার অভিমত কী? সে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা করে ফেলুন। আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল পাবেন। অতঃপর যখন তারা উভয়ে আদেশ মান্য করল এবং পিতা পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিল। (সুরা সাফফাত: ১০২-১০৩)


বিজ্ঞাপন


নবী ইবরাহিম (আ.) ও সন্তান ইসমাইল (আ.) দুজনেই আল্লাহর এই কঠিন আদেশ পালনে প্রস্তুত ছিলেন। কেউ আদরের সন্তান হারাচ্ছেন, আর কেউ নিজে জবাই হয়ে যাচ্ছেন, এর চেয়েও বড় ছিল আল্লাহর আদেশ পালন। হজরত ইবরাহিম (আ.) ছেলেকে শোয়ালেন। গলায় ছুরি চালাবেন—এমন অবস্থায় আল্লাহ তাআলা ইসমাইলকে সরিয়ে ওখানে একটি জন্তু দিয়ে দিলেন। এভাবে নবী ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর পরীক্ষায় পাস করলেন।

আরও পড়ুন: যেসব কারণে একাকী কোরবানি করা উত্তম

পবিত্র কোরআনে বিষয়টি এভাবে এসেছে- ‘অতঃপর যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তার পুত্রকে উপুড় করে শায়িত করল, তখন আমি ডেকে বললাম, ‘হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে দেখালে। নিশ্চয় আমি এভাবে সৎকর্মপরায়ণদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আর আমি তার পরিবর্তে জবেহযোগ্য এক মহান জন্তু দিয়ে তাকে মুক্ত করে নিলাম। আর এ বিষয়টি পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম। ইবরাহিমের প্রতি সালাম (শান্তি)।’ (সুরা সাফফাত: ১০৩-১০৯)

পৃথিবীর প্রথম কোরবানি আদমপুত্র হাবিল ও কাবিল করলেও মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর ১০ জিলহজ যে কোরবানি দিয়ে থাকেন, এর প্রচলন আসছে হজরত ইবরাহিম (আ.) থেকে। যা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন এভাবে- ‘আর এ (কোরবানির) বিষয়টি পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম। (সুরা সাফফাত: ১০৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানো কোরবানি নয়, বরং পশুকে জবাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনের পশু ও আমিত্বকে জবাই করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর