শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া সাধারণ ও স্বাভাবিক অবস্থায় গর্ভনিরোধ, গর্ভপাত ও ভ্রূণ হত্যা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। কেননা তাতে আল্লাহ তাআলার মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে বাধা সৃষ্টি করা হয়। এছাড়াও ভ্রূণহত্যা মানব মর্যাদার পরিপন্থী। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি মানব সন্তানকে সম্মানিত করেছি...। (সুরা বনি ইসরাইল: ৭০)
তবে শরিয়ত অনুমোদিত কারণে গর্ভপাত করা জায়েজ আছে। যেমন মায়ের জীবন শঙ্কার মধ্যে পড়া। বিষয়টি যদি নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে নির্দেশিত হয়, তাহলে গর্ভস্থ সন্তানের বয়স চার মাস হওয়ার আগে গর্ভপাত বৈধ।
বিজ্ঞাপন
সেক্ষেত্রেও পেটের বাচ্চার বয়স চার মাস হয়ে গেলে নিষিদ্ধ। ফিকহ শাস্ত্রের সব ইমাম একমত যে মানব ভ্রূণের বয়স ১২০ দিন পার হলে গর্ভপাত করা একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হত্যার সমান অপরাধ।
হাদিসের ভাষ্য থেকে জানা যায়, গর্ভস্থ সন্তানের বয়স চার মাস পূর্ণ হলে তার দেহে রূহ বা আত্মা ফুঁকে দেওয়া হয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের সকলের সৃষ্টি নিজের মায়ের পেটে ৪০ দিন যাবত শুক্ররূপে জমা হওয়ার মাধ্যমে শুরু হতে থাকে, পরবর্তী ৪০ দিন জমাট বাঁধা রক্তরূপে থাকে, পরবর্তী ৪০ দিন গোশতপিণ্ড রূপে থাকে, তারপর তার কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয়। অতঃপর সে তার মধ্যে রূহ প্রবেশ করায় এবং তাকে চারটি বিষয় লিখে দেওয়ার জন্য হুকুম দেওয়া হয়- তার রুজি, বয়স, কাজ এবং সে কি সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান।’ (বুখারি: ৩২০৮)
আরও পড়ুন: গর্ভের সন্তান জীবিত অবস্থায় মায়ের মৃত্যু হলে দাফন কীভাবে?
উম্মতে মুসলিমার সকল ফকিহ এ ব্যাপারে একমত, রূহ আসার পর গর্ভপাত করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। কারণ এটা শিশুহত্যার অন্তর্ভুক্ত; যে ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ – بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ ‘যখন (কেয়ামতের দিন) জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে...।’ (সুরা তাকবির: ৮-৯) (ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া: ৪/২১৭ ফতোয়া দারুল ইফতা; মিশর)
বিজ্ঞাপন
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য- বর্তমান যুগে ভ্রূণ হত্যা স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়ালেখার অসুবিধা হবে—এমন ঠুনকো অজুহাতেও ভ্রুণ হত্যা করা হয়। মূলত এটি কোনো শরয়ি ওজর নয়। তাই পড়ালেখার প্রয়োজনে সন্তান হত্যা করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যথার্থ কারণ ছাড়া আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন তোমরা তাকে হত্যা করো না।’ (সুরা আনআম: ১৫১; আল-কাওয়ানিন আল-ফিকহিয়্যা, পৃষ্ঠা-১৪১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভ্রূণ হত্যার মতো জঘন্য পাপ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

