মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববি পৃথিবীর শীর্ষ মর্যাদাসম্পন্ন দুই মসজিদ। এর পরের অবস্থানে ফিলিস্তিনের মসজিদে আকসা। মর্যাদার দিক দিয়ে চার নম্বরে আছে মদিনার মসজিদে কুবা। এই চার মসজিদে নামাজ আদায়ের আলাদা ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে।
মসজিদে হারামে নামাজ পড়ার ফজিলত
পৃথিবীর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মসজিদ হলো মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম। আর এটি মুসলমানদের কিবলা। প্রত্যেক মুসলমানকে সালাতের সময় মসজিদে হারামের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব, তুমি মসজিদুল হারামের (কাবাগৃহের) দিকে তোমার চেহারা ফিরিয়ে দাও। আর তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের চেহারাকে সেদিকেই (কাবার দিকে) ফিরিয়ে দাও।’ (সুরা বাকারা: ১৪৪)
মসজিদুল হারামে সালাত আদায় করলে অন্যান্য মসজিদের চেয়ে এক লাখ গুণ বেশি সওয়াব হয়। আবুদ্দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, মসজিদুল হারামে সালাত আদায় করার ফজিলত অন্য মসজিদে সালাত আদায়ের চেয়ে এক লাখ গুণ বেশি। (সহিহুল জামি: ৪২১১)
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্থাপনা মসজিদে হারাম
মসজিদে নববিতে নামাজ পড়ার ফজিলত
মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাতে প্রতিষ্ঠিত। এই মসজিদও হারামের অন্তর্ভুক্ত। বায়তুল্লাহ ও মসজিদে নববিকে একত্রে ‘হারামাইন’ বলা হয়। এই মসজিদের বিশেষ ফজিলত আছে। মসজিদে নববিতে সালাত আদায়ে হাজার গুণ বেশি সওয়াব। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, মসজিদুল হারাম (কাবা) ছাড়া আমার এ মসজিদে সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদের তুলনায় এক হাজার গুণ বেশি সওয়াব। (বুখারি: ১১৯০)
বিজ্ঞাপন
মসজিদে আকসায় নামাজ পড়ার ফজিলত
মসজিদে আকসা বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন। সালাত ফরজ হওয়ার পর থেকে প্রথম ১৬/১৭ মাস ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ ছিল মুসলমানদের কিবলা। তাছাড়া নবীজির মেরাজ শুরু হয় এই মসজিদ থেকে। এই মসজিদে নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু দারদা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মসজিদুল হারামে একটি নামাজ একলাখ নামাজের সমতুল্য এবং আমার মসজিদে একটি নামাজ এক হাজার নামাজের সমতুল্য এবং মসজিদুল আকসায় একটি নামাজ পাঁচশত নামাজের সমতুল্য। (ইবনে খুজাইমা: ২৬৮) হাদিসের অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘মসজিদুল আকসায় নামাজ আদায় জীবনের সব গুনাহ মাফের মাধ্যম।’ (ইবনু মাজাহ: ১৪০৮, আত-তারগিব: ১৭৭৮)
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন নিয়ে নবীজির ৭ ভবিষ্যদ্বাণী
মসজিদে কুবায় নামাজ পড়ার ফজিলত
হিজরতের সময় নবীজি মদিনায় পৌঁছার আগে কুবা নামক স্থানে সওয়ারি থেকে অবতরণ করেন ও কিছুদিন অবস্থান করেন এবং সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। সেটাই মসজিদে কুবা। যে মসজিদ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর প্রথম দিন থেকে তা বেশি হকদার যে তুমি সেখানে সালাত আদায় করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তাওবা: ১০৮) মসজিদে কুবায় নামাজের ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের বাড়িতে পবিত্রতা অর্জন করলো অর্থাৎ অজু করলো, এরপর মসজিদে কুবায় এসে নামাজ আদায় করলো, তার জন্য একটি ওমরার সমান সওয়াব রয়েছে।’ (ইবনু মাজাহ: ১৪১২; নাসায়ি: ৬৯৯, আত-তারগিব: ১১৮১) অপর এক বর্ণনায় ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবীজি (স.) প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় আসতেন। কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও সাওয়ারিতে চড়ে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.)-ও ওইরূপ করতেন। (বুখারি: ১১৯৩) অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) (মসজিদে কুবায়) এসে দু’রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (বুখারি: ১১৯৪)
অন্যান্য মসজিদ নামাজ পড়ার ফজিলত
পৃথিবীর সব মসজিদ আল্লাহর ঘর। একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে আল্লাহর ঘরে জামাতে সালাত আদায় করা বেশি ফজিলতপূর্ণ। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, জামাতে সালাত আদায়ের ফজিলত একাকী সালাত আদায় অপেক্ষা ২৫ গুণ বেশি। যদি লোকসংখ্যা বেশি হয়, তাহলে মসজিদে যে পরিমাণ লোক থাকবে ততগুণ বেশি সওয়াব পাবে। একজন লোক জিজ্ঞেস করল, যদি লোকসংখ্যা ১০ হাজার হয়? তিনি বলেন, হ্যাঁ, ৪০ হাজার হলেও। (ইবনু আবি শায়বা: ৮৪৮৫) অন্য হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘জামাতে সালাতের ফজিলত একাকী আদায়কৃত সালাতের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।’ (বুখারি: ৬৪৫)

