কোরবানি ইসলামের একটি মহান নিদর্শন। শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন— ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)
কোরবানির পশু নিখুঁত, সুন্দর, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও মধ্যবয়সী হওয়া উত্তম। তবে, যেকোনো রঙের পশু যেমন কোরবানি করা যাবে, তেমনি চাষাবাদে ব্যবহৃত হওয়ার পরও যদি পশু ত্রুটিমুক্ত থাকে তাহলেও কোরবানি করা যাবে।
বিজ্ঞাপন
কোরবানির পশুর ধরণ ও বয়স
ছয় প্রকার পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা ও উট। অন্যান্য পশু দিয়ে কোরবানি নাজায়েজ। কোরবানি করার জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর পূর্ণ হতে হবে। অবশ্য ছয় মাসের ভেড়া যদি দেখতে মোটাতাজা হয় এবং এক বছর বয়সের মতো মনে হয়— তাহলে তা দিয়েই কোরবানি করা বৈধ। গরু-মহিষের হতে হবে পূর্ণ দুই বছর। আর উটের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে। (হেদায়া, খণ্ড: ০৪, পৃষ্ঠা-১০৩)

কোরবানির পশুতে যেসব ত্রুটি গ্রহণযোগ্য নয়
যেসব ত্রুটিযুক্ত পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া যাবে না সেগুলো হলো— ১. দৃষ্টিশক্তি না থাকা, ২. শ্রবণশক্তি না থাকা, ৩. অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া, ৪. এই পরিমাণ লেংড়া যে জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে অক্ষম, ৫. লেজের বেশির ভাগ অংশ কাটা, ৬. জন্মগতভাবে কান না থাকা, ৭. কানের বেশির ভাগ কাটা, ৮. গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া, ৯. পাগল হওয়ার কারণে ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া, ১০. বেশির ভাগ দাঁত না থাকা, ১১. রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া, ১২. ছাগলের দুটি দুধের যেকোনো একটি কাটা, ১৩. গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোনো দুটি কাটা।
বিজ্ঞাপন
কোরবানির পশুর দাঁত ও শিং সংক্রান্ত মাসয়ালা
যে পশুর দাঁত নেই, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ নয়। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২১৫)। যে পশুর শিং গোড়া থেকে ভেঙে গেছে সেটাও জায়েজ নয়। আর যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু অংশ শিং ভেঙে গেছে অথবা শিং একেবারে ওঠেনি সে পশু কোরবানি করা জায়েজ। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২১৬)
কোরবানির পশুর কান বা লেজ কাটা সংক্রান্ত মাসয়ালা
পশুর কান বা লেজ এক-তৃতীয়াংশের বেশি কাটা থাকলে কোরবানি হবে না। যদি জন্মগতভাবে কান ছোট হয় তবে সমস্যা নেই। হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন ভালো করে পশুর চোখ ও কান পরীক্ষা করে নিই। আর আমরা যেন কানের পেছন থেকে কেটে ঝুলে থাকা এবং পশুর পেছনের কোনো অংশ কেটে ঝুলে থাকা পশু কোরবানি না করি।’ (ফতোয়া আলমগিরি: ৫/২৯৭)

অন্তঃসত্ত্বা পশুর কোরবানি
অন্তঃসত্ত্বা পশু কোরবানি করা জায়েজ। জবেহ করার পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তবে সেটাও জবেহ করতে হবে, উত্তম হলো বাচ্চাটিকে জীবিত সদকা করে দেওয়া। কিন্তু বাচ্চা প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কোরবানি করা মাকরুহ। তবে মৃত বাচ্চা পেলে তার গোশত খাওয়া বৈধ হবে না। (হেদায়া: ৪/৪৩২; ফতোয়ায়ে শামি: ৫/২৮১, ৫/২২৭)
আরও পড়ুন: কোরবানির সঙ্গে আকিকা, ছেলে সন্তানের জন্য কত অংশ জরুরি?
আর কোরবানির পশু কেনার পর জবাইয়ের আগে বাচ্চা হলে ওই বাচ্চাটিকে জীবিত সদকা করে দিতে হবে। কিন্তু যদি জবাই করে তার গোশত খেয়ে ফেলে, বাচ্চাটির মূল্য সদকা করে দিতে হবে। (খুলাসাতুল ফতোয়া: ৪/৩২২, আল মুহিতুল বুরহানি: ৮/৪৭১, হিন্দিয়া: ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার: ৬/৬২২; তাতারখানিয়া: ১৭/৪৪৩)
যেসব ত্রুটি থাকলেও কোরবানি দেওয়া যাবে
১. পশু পাগল, তবে ঘাস-পানি ঠিকমতো খায়; ২. লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা, তবে বেশির ভাগ অংশ আছে; ৩. জন্মগতভাবে শিং নেই, ৪. শিং আছে, তবে ভাঙা; ৫. কান আছে, তবে ছোট; ৬. পশুর একটি পা ভাঙা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে; ৭. পশুর গায়ে চর্মরোগ, ৮. কিছু দাঁত নেই, তবে বেশির ভাগ আছে। স্বভাবগত এক অণ্ডকোষের পশু; ৯. পশু বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম, ১০. পুরুষাঙ্গ কেটে যাওয়ার কারণে সঙ্গমে অক্ষম। তবে উত্তম হচ্ছে ত্রুটিমুক্ত পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া, ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কোরবানি দেওয়া অনুচিত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর নৈকট্যলাভের উদ্দেশ্যে ত্রুটিমুক্ত ও সুন্দর পশু কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

