রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কোরআনের যে দোয়া রাতে বিশেষভাবে পড়তে বলেছেন নবীজি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

কোরআনের যে দোয়া রাতে বিশেষভাবে পড়তে বলেছেন নবীজি

একজন মুসলমানের জন্য প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমানো পর্যন্ত পদে পদে দোয়ার শিক্ষা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতকে অনেক দোয়া শিখিয়েছেন। এর মধ্যে কিছু দোয়া বিশেষভাবে পড়তে উৎসাহিত করেছেন। একটি দোয়ার ব্যাপারে বলেছেন, কেউ রাতের বেলায় পড়লে সেটিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। কোন সেই দোয়া? তা হলো মূলত সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত।

এই দুই আয়াতের অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, কেউ রাতের বেলায় আয়াত দুটি পাঠ করলে তা তার জন্য যথেষ্ট। অর্থাৎ রাতে কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতের যে হক রয়েছে, কমপক্ষে সুরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত তেলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট। (বুখারি: ৪০০৮, ৫০০৮, মুসলিম: ৮০৮) 


বিজ্ঞাপন


অন্য হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন জিবরাইল (আ.) নবীজির (স.) কাছে বসা ছিলেন। হঠাৎ প্রচণ্ড একটি শব্দ শোনা গেলো। জিবরাইল (আ.) নিজের মাথা উঁচু করে বললেন, এটা আকাশের সেই দরজা খোলার শব্দ, যা আজকের আগে খোলা হয়নি। অতঃপর ওই দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে আসলেন, যিনি আগে কখনও পৃথিবীতে আসেননি। তিনি নবীজির কাছে এসে সালাম দিয়ে বললেন, ‘দুটি নুর বা আলোর সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনার আগে অন্য কোনো নবীকে প্রদান করা হয়নি। ১. সুরা ফাতিহা ও ২. সুরা বাকারার শেষাংশ। এর একটি অক্ষরও যদি পড়েন, তবে তার মধ্যকার প্রার্থিত বিষয় আপনাকে প্রদান করা হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৮০৬)

আরও পড়ুন: অসুস্থতায় কোরআনের এই ৬ আয়াত যে নিয়মে পড়বেন

অপর একটি হাদিসে হজরত জুবাইর ইবনে নুফাইর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন— ‘সুরা আল-বাকারাকে আল্লাহ তাআলা এমন দুটি আয়াত দিয়ে শেষ করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নিচের ভাণ্ডার হতে দান করা হয়েছে। তাই তোমরা এ আয়াতগুলো শিখবে। তোমাদের স্ত্রীদেরকেও শেখাবে। কারণ, এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্যলাভের উপায়; (দ্বীন দুনিয়ার সকল) কল্যাণলাভের দোয়া। (মেশকাত: ২১৭৩)

সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
২৮৫ নম্বর আয়াত: اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِ مِنۡ رَّبِّهٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ کُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِهٖ ۟ وَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا ٭۫ غُفۡرَانَکَ رَبَّنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ উচ্চারণ: ‘আমানুর-রাসুলু বিমা উংজিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি, লা নুফাররিকু বাইনা আহা’দিম-মির রুসুলিহি। ওয়া ক্বালু সামি’না, ওয়া আত্বা’না, গুফরা নাকা, রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির।’


বিজ্ঞাপন


অর্থ: ‘আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তাতে রাসুল ঈমান এনেছে এবং মুমিনগণও। প্রত্যেকেই ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপর, তার ফেরেশতাগণের ওপর, তার কিতাবসমূহের ওপর এবং তার রাসুলগণের ওপর। (তারা বলে) আমরা তাঁর রাসূলগণের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে—আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব! আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।’ (সুরা বাকারা: ২৮৫)

আরও পড়ুন: রাতে ১০০ আয়াত তেলাওয়াত করলে যে প্রতিদান পাবেন

২৮৬ নম্বর আয়াত: لَا یُکَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا ؕ لَهَا مَا کَسَبَتۡ وَ عَلَیۡهَا مَا اکۡتَسَبَتۡ ؕ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَهٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِهٖ ۚ وَ اعۡفُ عَنَّا ٝ وَ اغۡفِرۡ لَنَا ٝ وَ ارۡحَمۡنَا ٝ اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ উচ্চারণ: ‘লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উস-আ’হা লাহা মা কাসাবাত ওয়া আ’লাইহা মাক তাসাবাত। রব্বানা লা তুআখজিনা ইন্নাসীনা আও আখত্বা’না। রাব্বানা ওয়ালা তাহ’মিল আ’লাইনা ইসরান কামা হা’মালতাহু আ’লাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিনা। রব্বানা ওয়ালা তুহা’ম্মিলনা মা-লা ত্বাকাতালানা বিহ। ওয়াআ’ফু আ’ন্না, ওয়াগ ফিরলানা, ওয়ার হা’মনা। আংতা মাওলানা, ফানছুরনা আ’লাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’

অর্থ: ‘আল্লাহ কারো উপর এমন কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না, যা তার সাধ্যাতীত। সে ভালো যা উপার্জন করে, তার প্রতিফল তারই, আর মন্দ যা কামাই করে, তার প্রতিফল তার উপরই বার্তায়। (হে মুসলিমগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে এই দোয়া করো যে,) হে আমাদের রব! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব! আমাদের পূর্ববর্তীগণের ওপর যেমন বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন, আমাদের ওপর তেমন বোঝা চাপিয়ে দেবেন না। হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক। অতএব কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। (সুরা বাকারা: ২৮৬)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে অশেষ ফজিলতপূর্ণ উপরোক্ত দুই আয়াত বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর