বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ঈদযাত্রার সুন্নতগুলো জেনে রাখুন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০২:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ইসলামে ঈদযাত্রায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। এই সফরের শুরুতে, মাঝখানে এবং শেষে এমন কিছু আমল রয়েছে, যা পালন করলে আপনার ঈদযাত্রা হবে মঙ্গলজনক। মূলত সুন্নত অনুসরণেই কল্যাণ এবং সুন্নত মেনে ভ্রমণ করলে তা ইবাদতেও পরিণত হবে। নিচে ঈদযাত্রায় ৯টি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত তুলে ধরা হলো।

১. সফরের আগে যাত্রাপথ ও যানবাহন সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া
যাত্রা শুরুর আগে যানবাহন, আসবাবপত্র ও যাত্রাপথ সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব খোঁজখবর নেওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা (মুসলমানরা) পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে।’ (সুরা আশ-শুরা: ৩৮) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। অতঃপর আপনি যখন (কোনো বিষয়ে) মনস্থির করবেন, তখন আল্লাহর ওপর নির্ভর করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)


বিজ্ঞাপন


২. দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে বের হওয়া
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সফরকারী তার পরিবারের জন্য দুই রাকাত নামাজের চেয়ে ভালো কিছু রেখে যায় না। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা: ৪৯১২)

আরও পড়ুন: নিজের বাড়িতে বেড়াতে গেলে নামাজ কসর করতে হবে?

৩. সম্ভব হলে একাকী সফর পরিহার করা
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সঙ্গীহীনতায় কত কী সমস্যা আমি যেমন জানি, তোমরাও জানলে রাতে একাকী কখনো সফর করার সাহস পেতে না। (বুখারি: ২৯৯৮)

৪. সম্মিলিত সফরে আমির নির্বাচন করা
একাধিক সফরকারীর ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে গ্রুপ লিডার নির্বাচন করা উত্তম। যাতে পরামর্শের ভিত্তিতে সফরের দায়িত্বগুলো তিনি সম্পন্ন করতে পারেন। অন্যদের কাজ হবে তার নির্দেশনা মেনে চলা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সফরে তোমরা যদি তিনজন হও, একজনকে আমির নিযুক্ত করো। (আবু দাউদ: ২৬০৯)


বিজ্ঞাপন


৫. সম্ভব হলে ভোরবেলায় যাত্রা করা
যেকোনো সফর ভোরবেলা হওয়া উত্তম। কারণ ভোরবেলায় বরকত রয়েছে। সাহাবি সাখর আল গামিদি ব্যবসায়ী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে বলেন, ‘ভোরবেলাকে আমার উম্মতের জন্য বরকতে পূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে।’ এরপর থেকে সাখর গামিদি (রা.) সকাল সকাল ব্যবসায় নেমে পড়তেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। (ইবনু হিব্বান: ৪৭৫৪)

আরও পড়ুন: সকালে যে দোয়াগুলো বাদ দিতেন না নবীজি

৬. পরিচিতজনদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়া
আপনজন ও পরিচিত জনদের থেকে বিদায় নিয়ে যাত্রা করা। বিদায় দানকারী বলবেন, আল্লাহ তোমাকে তাকওয়া-পরহেজগারি দান করুন, তোমার গুনাহ ক্ষমা করুন আর যেখানেই থাকো তোমাকে তিনি কল্যাণ দিন। (তিরমিজি: ৩৪৪৪) আর সফরকারী বলবেন, আল্লাহর নিরাপত্তায় তোমাকে অর্পণ করছি, তিনি অনন্য আস্থাভাজন। (মুসনাদে আহমদ: ৯২১৯)

৭. সফরের জিকির এবং দোয়াগুলো পড়া
ভ্রমণের সময় হাদিসে বর্ণিত জিকির এবং দোয়াগুলো পড়া যেমন—উঁচু জায়াগায় উঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলা এবং নীচু জায়গায় নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা, সমতলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা। ‘তকবির’ ইত্যাদি উচু আউয়াজে বলা যাবে না। গাড়িতে উঠে এই দোয়াটি পড়া— سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ ‘সুবহানাল্লাজি সাখখরা লানা হাজা ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনিন।’ অর্থ: ‘পবিত্র ওই সত্তা, যিনি এটিকে আমাদের আয়ত্তাধীন করেছেন, অথচ আমরা একে নিজেরা আয়ত্তাধীন করতে পারতাম না।’ আর সফর শেষে পড়বেন, آيِبُونَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ উচ্চারণ: ‘আ-ইবুনা ইনশাআল্লাহ, তা-ইবুনা, আবিদুনা, লি রাব্বিনা হামিদুন।’ অর্থ: ‘আমরা ফিরে এসেছি, পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে, আনুগত্যের প্রত্যয় নিয়ে এবং আল্লাহর প্রশংসায় মুখর হয়ে।’ (মুসলিম: ১৩৪২)

আরও পড়ুন: আপনাকে প্রাণবন্ত রাখবে যেসব জিকির

৮. যাত্রাপথে মুসাফিরের বিধান কার্যকর থাকবে
৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার বা এর অধিক দূরের সফরের নিয়তে বের হলে এলাকা ত্যাগ করার পর থেকে মুসাফির গণ্য হবেন। ফলে পথে নামাজ কসর করতে হবে। নিজের বাড়িতে গেলে বাড়িতে পৌঁছার পর মুকিম হয়ে যাবেন। কিন্তু পথে মুসাফির থাকবেন। তাই যাত্রাপথে চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো দুই রাকাত পড়তে হবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত চার রাকাতের নামাজগুলো চার রাকাতই পড়ে তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং তাকে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। যানবাহন চলন্ত অবস্থায় বা তাড়াহুড়া থাকলে ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্যান্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা না পড়ার সুযোগ আছে। তবে স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়তে হবে। (আহসানুল ফতোয়া: ৪/১০৫; বাদায়েউস সানায়ে: ১/৯১; বাহরুর রায়েক: ২/২৩০, ২/২৩৬; রদ্দুল মুহতার: ২/১৩১, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৪/২৮৩,৩২৮ ইলাউস সুনান: ৭/১৯১)

৯. বাড়িতে পৌঁছলে দু’রাকাত শুকরিয়ার নামাজ পড়া
যাত্রা সুন্দরভাবে শেষ হওয়ার পর নিজ এলাকার মসজিদে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। (বুখারি: ২৬) আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঈদযাত্রাসহ যেকোনো সফরে উল্লেখিত সুন্নতগুলো পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর