রোববার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

রোজা পরিপূর্ণ হয় যেভাবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

পবিত্র রমজান কোরআন নাজিলের মাস, রহমত ও বরকতের মাস, ক্ষমালাভের মাস, নাজাতের মাস। আল্লাহ তাআলার কাছে রোজাদারের মর্যাদা অনেক। এক হাদিসে প্রিয়নবী (স.) ইরশাদ করেন- ‏إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِين ‘যখন রমজান মাস প্রবেশ করে, বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়।’ হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম: ২৭৬০) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও সুগন্ধিময়...।’ (বুখারি: ১৯০৪, মুসলিম: ২৭৬২)

তাই রোজা যেন সুন্দর হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে নেক আমল করা ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থেকে রোজা সম্পন্ন করতে হবে। এক কথায় তাকওয়া অর্জনে সহায়ক হয়—এমন কাজ করা এবং কোরআন-সুন্নাহয় নিষিদ্ধ সবরকম কাজ থেকে দূরে থাকলেই আপনার রোজা সুন্দর ও পরিপূর্ণ হবে। কেননা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার মূল উদ্দেশ্যই হলো তাকওয়া অর্জন।  আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীরুতা) অবলম্বন করতে পারো। (সুরা বাকারা: ১৮৩)


বিজ্ঞাপন


প্রত্যেকটি বিষয়ে আল্লাহ তাআলাকে যথাযথ ভয় করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত তেমনি ভয় করতে থাকো।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০২)

যারা রোজা রেখে নিজের খাহেশাতে ডুবে থাকে, তাদের রোজা কোনো কাজে আসবে না। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখেও অশ্লীল কাজ ও পাপাচার ত্যাগ করতে পারল না, তার পানাহার ত্যাগ করার কোনো মূল্য নেই।’ (বুখারি: ৬০৫৭, ইবনে মাজাহ: ১৬৮৯)

আরও পড়ুন: রোজা রেখে গান শোনা জায়েজ?

অন্য হাদিসে বলা হয়েছে- الصّومُ جُنّةٌ مَا لَمْ يَخْرِقْهَا ‘রোজা ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না তা বিদীর্ণ করে ফেলা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৬৯০) এই হাদিস আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে- শুধু উপোস থাকলেই রোজা পূর্ণতা পায় না। পাশাপাশি রোজার আদব রক্ষা কিংবা রোজা রেখে কিছু গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা চাই। যাতে এ ঢাল (রোজা) অক্ষুণ্ন থাকে; বিদীর্ণ না হয়।


বিজ্ঞাপন


আরেক বর্ণনায় এসেছে, নবীজিকে জিজ্ঞেস করা হলো- কীভাবে তা বিদীর্ণ হয়? নবীজি বললেন- بِكَذِبٍ، أَوْ غِيبَةٍ ‘মিথ্যা অথবা গীবতের মাধ্যমে।’ (আলমুজামুল আওসাত, তবারানি: ৪৫৩৬)

হাদিস শরিফে নবীজি আরও বলেছেন, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে যে, তাদের রোজা থেকে উপোস ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হয় না। আর অনেক রাত জেগে ইবাদতকারী এমন আছে যে, তাদের সে ইবাদত থেকে রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছুই থাকে না।’ (মেশকাত: ১১৭)

বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা ও তা আমল করা পরিহার করল না, তার পানাহার বর্জন আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই’ (বুখারি: ১৯০৩)

রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ পরিত্যাগ না করলে তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই—এর ব্যাখ্যা হলো- রোজার উদ্দেশ্য হচ্ছে মনোবাসনাকে পরিত্যাগ এবং কুমন্ত্রণাদানকারী আত্মাকে বশে আনা। অতএব রোজা রেখে যখন এর উদ্দেশ্য অর্জন করা যায়নি তখন সেই রোজার পরোয়া আল্লাহ করেন না। অতএব আল্লাহর প্রয়োজন না হওয়ার অর্থ দাঁড়াল, আল্লাহ তাআলা তার রোজার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেন না এবং কবুল করেন না। (ফয়জুল কালাম: ৩৯৮)

আরও পড়ুন: রোজা রেখে নামাজ না পড়ার ক্ষতি

তাই রোজা পালনের সময় খুব সতর্কতার সঙ্গে অতিবাহিত করতে হবে। রোজার হকগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। অযথা কথা-কাজ, গিবত, বিভিন্ন পাপাচার, মিথ্যা কথা, নাচ-গান করা, ধোঁকা দেওয়া, ব্যবসায় অধিক মুনাফা অর্জনের চেষ্টা, অপরের সম্পদ হরণের চেষ্টা, আল্লাহ ও বান্দার হক নষ্ট করা, হারাম উপার্জন, অপচয়-অপব্যয়, মা-বাবার সঙ্গে অসদাচরণ, প্রতিবেশীর খোঁজ না রাখা ইত্যাদি তাকওয়া পরিপন্থী কাজ। এসব থেকে দূরে থাকতে হবে।

পাশাপাশি বেশি বেশি দান-সদকা, কোরআন তেলাওয়াত ও তাফসির অধ্যয়ন, তারাবি-তাহাজ্জুদ পড়া, ইস্তেগফার করা, জামাতে নামাজ আদায় করা, রমজানের শেষ দশকে ইবাদত বাড়িয়ে দেওয়া, লাইলাতুল কদরের সন্ধান করা ইত্যাদি আমলগুলোর প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

পবিত্র রমজানে ক্ষমালাভের মাধ্যমে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার সুযোগ লাভ হয়। যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও তার পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না, মহানবী (স.) তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক, যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি।’ (জামেউল উসুল: ১৪১০) আরেক বর্ণনায় মহানবী (স.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলোধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৪৫)

মাহে রমজানে বর্ষিত হয় রহমতের বারিধারা। গুনাহ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য রমজান একটি চমৎকার সময়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত (নামাজ) আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৮৭)

আরও পড়ুন: যে নামাজে সব গুনাহ মাফ

এমন মাস পেয়েও যে তা কাজে লাগাতে পারেনি সে বড়ই হতভাগা। জিব্রাইল (আ.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। তার কথার সাথে একমত পোষণ করে নবীজি (স.) আমিন বলেছেন। (বায়হাকি: ১৫৭২) 

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজানের হক আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং নবীজি (স.)-এর অভিশাপ থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub