রমজানের রোজা ফরজ ইবাদত এবং ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)
সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও রোজা না রাখা বা ভেঙে ফেলা বড় গুনাহের কাজ। কেননা আল্লাহর নির্দেশ হলো- ‘তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)
বিজ্ঞাপন
কেউ ইচ্ছাকৃত রোজা ভেঙে ফেললে কাজা বা কাফফারা (শরিয়তের বিচারে যেটি তার ওপর বর্তায়) আদায় না করা পর্যন্ত সে দায়মুক্ত হবে না। উপরন্তু ওই রোজার ঘাটতি জীবনেও পূরণ হবে না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শরয়ি কোনো ওজর ছাড়া রমজানের কোনো রোজা ভেঙ্গে ফেলবে, সারাজীবন রোজা রাখলেও সেই রমজানের রোজার সমপরিমাণ হবে না।’ (সহিহ বুখারি, শামেলা-৩/৪৩)
তবে কিছু কারণে ইসলামি শরিয়ত রোজা না রাখা বা ভেঙে ফেলার অনুমতি দিয়েছে। বিশেষত জীবনের ঝুঁকি থাকলে আল্লাহর কোনো বিধান মানা আর ওয়াজিব থাকে না। ওই অবস্থায় রোজা না রাখলে গুনাহ হবে না। যেমন- ক্ষুধা বা পিপাসার কারণে প্রাণ চলে যাওয়ার উপক্রম হলে রোজা ভেঙে দেওয়া জায়েজ এবং এতে কাফফারা নয়, কাজা করলেই যথেষ্ট হবে। (আলমগিরি: খণ্ড. ১, পৃষ্ঠা-২০৭)
আরও পড়ুন: যেসব কারণে রোজা ভাঙলে কাফফারা দিতে হয় না
ইমাম নববি (রহ) বলেন, ‘আমাদের মাজহাবের আলেমগণ ও অন্যান্য আলেমগণ বলেন, যে ব্যক্তি ক্ষুধা ও পিপাসার শিকার হয়ে মৃত্যুর আশংকা করছে তার উপর রোজা ভেঙ্গে ফেলা অনিবার্য; এমনকি সে যদি সুস্থ-সবল ও গৃহবাসী (মুকিম) মানুষ হয় তবুও। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াবান।’ (সুরা নিসা: ২৯) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা বাকারা: ১৯৫) তবে, অসুস্থ ব্যক্তির মতো এ ব্যক্তির উপরও কাজা আদায় করে দেওয়া আবশ্যক হবে। (আলমাজমু: ৬/২৫৮)
বিজ্ঞাপন
সফররত অবস্থায় রোজা রাখলে ভেঙে ফেলা সাধারণত জায়েজ নয়। কিন্তু যদি পিপাসার কারণে প্রাণনাশের আশঙ্কা হয়, তাহলে রোজা ভাঙতে পারবে, পরে তা কাজা আদায় করবে। উল্লেখ্য, মুসাফিরের জন্য রোজা রাখা জরুরি নয়। তাই চাইলে সে রোজা না রেখেই দিন শুরু করতে পারে। (ফতোয়া তাতারখানিয়া: ৩/৪০৩; রদ্দুল মুখতার: ২/৪৩১)
আরও পড়ুন: রোজা মাকরুহ হওয়ার ১৯ কারণ
আরও কিছু কারণে রোজা ভেঙে ফেলা যাবে, তবে পরে কাজা আদায় করতে হবে। যেমন- ১. অসুস্থতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকলে। ২. এমন দুর্বল যার রোজা রাখার শক্তি নেই। ৩. কঠিন শ্রমের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপার্জন সম্ভব না হলে। ৪. গর্ভধারিণী বা স্তন্যদানকারিণী নারী যদি নিজের বা বাচ্চার প্রাণনাশের আশঙ্কা করেন। ৫. যেকোনো বিপদ-মসিবতে যদি রোজা ভেঙে ফেলা জরুরি হয়ে পড়ে। (আপকে মাসায়েল: খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ২০২-২০৩; শামি: খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা-৪০০; আলমগিরি: খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা-২০৭; সহিহ মুসলিম: ১১২০)
তবে, ঠুনকো কোনো কারণে রোজা ভেঙে দেওয়া যায় না। যেমন পরীক্ষার সময় ছাত্রদের জন্য রোজা না রাখা বা ভেঙে দেওয়া বৈধ নয়। কারণ এটা শরয়ি ওজর নয়, যার জন্য রোজা কাজা করা বৈধ হতে পারে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজার যাবতীয় বিধান যথাযথ মেনে রমজানের বরকত ও কল্যাণ লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।