সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

রমজানে শয়তানকে বন্দি করা হয় কীভাবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

রমজানে শয়তানকে বন্দি করা হয় কীভাবে

অভিশপ্ত শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা রমজান মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন রমজান উপস্থিত হয়, জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুষ্ট শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়।’ (মুসলিম: ১০৭৯)

কিন্তু প্রশ্ন জাগে, রমজান মাসে শয়তানকে শেকলে আবদ্ধ করা হয় কীভাবে? আর শয়তান শৃঙ্খলিত হলে মানুষ পাপ করে কেন? এর একাধিক জবাব পাওয়া যায় হাদিস বিশারদদের লিখনিতে।


বিজ্ঞাপন


কাজি ইয়াজ (রহ.) বলেন, শয়তান শেকলে আবদ্ধ থাকার অর্থ আক্ষরিক ও রূপক উভয় অর্থেই হতে পারে। রূপক অর্থে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- রমজানে শয়তানের ধোঁকা-প্রবঞ্চনার হার কমে যায়, অন্যায় কাজ কম হয় এবং মানুষের মধ্যে আল্লাহর বিধান পালনের প্রতি আগ্রহ প্রবল থাকে। এ অর্থে উল্লিখিত হাদিসে বাস্তব জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যার বাস্তবতা আমরা সবাই স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে থাকি। (ইকমালুল মুলিম: ৪/৬)

আরও পড়ুন: যে আওয়াজ শুনলেই শয়তান পালাতে থাকে

আর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা হলে হাদিসের অর্থ হলো- মানুষ পাপ করে দুই কারণে—১. তার কুপ্রবৃত্তি ও বদ-অভ্যাসের কারণে; ২. শয়তানের প্ররোচনায়। রমজানে শয়তান বন্দি থাকলেও কুপ্রবৃত্তির কারণে মানুষ পাপ করে থাকে। (ফাতহুল বারি: ৪/১১৪)

আল্লামা আইনি (রহ.) বলেন, শয়তানকে ওই সব রোজাদার থেকে দূরে আবদ্ধ রাখা হয়, যারা রোজার আদব ও শর্ত সঠিকভাবে পালন করে। কিন্তু যারা সেসবের ধার ধারে না, তাদের থেকে শয়তানকে আবদ্ধ না-ও রাখা হতে পারে। (উমদাতুল কারি: ১০/২৭০)


বিজ্ঞাপন


আলেমরা এর আরেকটি ব্যাখ্যা করেন এভাবে—রমজানের আগে কৃত পাপের প্রভাবে মানুষ পাপ করে থাকে। যেমন একটি লোহা দীর্ঘক্ষণ আগুনে রাখার পর তা থেকে বের করা হলেও বেশ কিছুক্ষণ তার প্রভাব বাকি থাকে, একইভাবে গাড়ির চাকা দীর্ঘ সময় চলার পর থামানো হলেও কিছুদূর পর্যন্ত চলতে থাকে; ঠিক তেমনি ১১ মাসের পাপের প্রভাবে রমজানেও কারো কারো কাছ থেকে পাপ হয়ে থাকে।

কোনো কোনো হাদিস ব্যাখ্যাকারী বলেছেন, রমজানে সব শয়তানকে বন্দি করা হয় না, অতিরিক্ত দুষ্ট শয়তানকে বন্দি করা হয়। তাই অন্য শয়তানদের প্ররোচনায় মানুষ পাপ করে। (ফাতহুল বারি: ৪/১১৪)

আরও পড়ুন: স্বামী-স্ত্রীর যে বিষয় শয়তানকে বেশি আনন্দ দেয়

এর আরেকটি ব্যাখ্যা হলো- রমজানে জ্বিন শয়তানকে বন্দি রাখা হলেও মানুষরূপী শয়তানদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ কোরআনের সুরা নাসে বান্দাদের মানুষ শয়তান ও জ্বিন শয়তান উভয় থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, যারা মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে মানুষের মধ্যেও এক ধরনের শয়তান রয়েছে, যারা মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। 

কারো কারো মতে, রমজানে বন্দি থাকার কারণে শয়তানের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকলেও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকে না। তাই মানুষ পাপ করে। (আরও দেখুন: শরহুন নববী আলা মুসলিম: ৭/১৮৭, শরহুস সুয়ুতি আলা মুসলিম: ৩/১৮৩, মিরকাতুল মাফাতিহ: ৪/১৩৪১, ফয়জুল বারি: ৪/৩২৭)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর