আল্লাহ ক্ষমাশীল। তওবা করলে তিনি সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী ও অতিশয় দয়ালু।’ (সুরা নিসা: ১০৬) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার বান্দাদের জানিয়ে দিন, আমি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা হিজর: ৪৯)
নামাজ গুনাহ মাফের অনন্য মাধ্যম
তওবা করার একটি সুন্দর পদ্ধতি হলো নামাজ। তওবার নিয়তে নামাজ পড়াকে তওবার নামাজ বলে। গুনাহ সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ নামাজ পড়া উচিত। গুনাহের পর তওবা করতে সময় ক্ষেপণ করলে অন্তর কঠিন হয়ে যায়। আর যাদের অন্তর কঠিন ও আল্লাহর ভয়শূন্য, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার হুঁশিয়ারি- ‘দুর্ভোগ ওই লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর। তারা সুস্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে।’ (সুরা জুমার: ২২)
বিজ্ঞাপন
তাওবার নামাজের ফজিলত
তাই গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তওবা করা উচিত। বিজ্ঞ আলেমদের মতে, তওবার নামাজ পড়া মোস্তাহাব। এই নামাজ বিগত জীবনের গুনাহ থেকে তওবার নিয়তেও পড়া যায়। হাদিসে তওবার নামাজের নানা ফজিলত এবং সাহাবায়ে কেরাম তওবার নামাজ পড়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। আসমা ইবনুল হাকাম (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি আলী (রা.)-কে বলতে শুনেছি, ...তিনি বলেন, আবু বকর (রা.) আমাকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি সত্যই বলেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যখন কোনো বান্দা কোনো ধরনের গুনাহ করে উত্তমরূপে অজু করে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।’ (আবু দাউদ: ১৫২১)
আরও পড়ুন: বান্দার তাওবায় আল্লাহ যেরকম খুশি হন
তওবার নামাজের পদ্ধতি
তওবার নামাজের নিয়ম ওপরের হাদিসেই বলা আছে। প্রথমে উত্তমরূপে অজু করতে হবে। তারপর একাগ্রচিত্তে নফল নামাজের মতো দুই রাকাত নামাজ পড়বে। তওবার নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা নেই। তাই যেকোনো সুরা দিয়েই এই নামাজ পড়া যায়। এই নামাজের অজু ও নামাজের মাঝখানে কোনো দুনিয়াবি কাজ বা কথা না বলা উত্তম। কারণ হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মতো এভাবে অজু করবে, অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং এর মাঝখানে দুনিয়ার কোনো খেয়াল করবে না, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ১৫৯)
নামাজ শেষে আল্লাহর তাসবিহ পড়বে, আল্লাহর প্রশংসা করবে, দরুদ পড়বে এবং ইস্তেগফার পড়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।
তওবার দোয়া
তওবার শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো, সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার। এখানে সাইয়েদুল ইস্তেগফার উচ্চারণ ও অর্থসহ তুলে ধরা হলো— اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ ‘আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খলাকতানি, ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা, ওয়া ওয়াদিক মাসতাতাতু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু, আবু-উ লাকা বিনি মাতিকা আলাইয়া ওয়া আবু-উ বিজাম্বি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: আল্লাহ তাওবা কতবার কবুল করেন
অর্থ, হে আল্লাহ, আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আমাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার বান্দা। আমি যথাসাধ্য আপনার সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকব। আমি আমার নিকৃষ্ট আমল থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই, আপনার যে অসংখ্য নিয়ামত ভোগ করছি এ জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। আমি আমার কৃত অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি ছাড়া অপরাধ ক্ষমা করার কেউ নেই। (আবু দাউদ: ৫০৭০)
উল্লেখ্য, কারো এই দোয়া মুখস্থ করা সম্ভব না হলে সে হাদিসে বর্ণিত গুনাহ মাফের অন্য যেকোনো দোয়া করতে পারেন। এমনকি নিজের ভাষায়ও মহান আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে তওবা করা যাবে। ইনশাআল্লাহ, মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আন্তরিক তওবা করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের তওবা তিনি কবুল করুন। আমিন।

