আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। বান্দার তাওবা আল্লাহর কাছে খুব প্রিয়। আল্লাহ তাআলা বলেন- إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُوْلَئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ‘অবশ্যই আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করবেন যারা ভুলবশতঃ মন্দ কাজ করে, এরপর অনতিবিলম্বে তওবা করে, এরাই হলো সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা নিসা: ১৭)
আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বান্দার সব তওবা গ্রহণ করবেন। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ ‘রুহ কন্ঠায় না পৌঁছা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা বান্দার তওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি: ৩৫৩৭)
বিজ্ঞাপন
তবে, বান্দা যখন মালাকুল মাওতের ভয়াবহ চেহারা দেখবে, তার রুহ বক্ষদেশ থেকে বের হয়ে কন্ঠণালীতে পৌঁছে যাবে এবং প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে, তখন তওবা কবুল করা হবে না এবং মৃত্যু হতে তখন পালানোর সুযোগও থাকবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন- وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الآنَ ‘আর তাদের জন্য ক্ষমা নেই, যারা ওই পর্যন্ত পাপ করতে থাকে যখন তাদের কারো কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমি এখন তাওবা করছি।’ (সুরা নিসা: ১৮)
আরও পড়ুন: তওবার নামাজ পড়ার নিয়ম
ক্ষমা প্রার্থনাকারী বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা বর্ণনা করতে গিয়ে নবীজি (স.) বলেছেন– ‘সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা পাপ না করো, আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম: ২৭৪৮)
বারবার তওবার কথা বলেছেন রাসুলুল্লাহ (স.)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে নবী (স.) স্বীয় রব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘জনৈক বান্দা পাপ করে বলল, হে আমার রব! আমার পাপ মার্জনা করে দাও। তারপর আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে, যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে ধরেন। এ কথা বলার পর সে আবার পাপ করল এবং বলল, হে আমার রব! আমার পাপ ক্ষমা করে দাও। তারপর আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার এক বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে শাস্তি দিতে পারেন। তারপর সে পুনরায় পাপ করে বলল, হে আমার রব! আমার পাপ মাফ করে দাও। এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলা পুনরায় বলেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন প্রভু আছে, যিনি বান্দার পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে পাকড়াও করেন। তারপর আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বান্দা! এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল করো। আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দিয়েছি। বর্ণনাকারী আবদুল আ’লা বলেন, “এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল করো” কথাটি আল্লাহ তাআলা তৃতীয়বারের পর বলেছেন, না চতুর্থবারের পর বলেছেন, তা আমি জানি না।’ (সহিহ মুসলিম: ২৭৫৮)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: কাজা নামাজের জন্য কি তাওবা যথেষ্ট?
আল্লাহর কাছে তওবা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো হলো- ১. পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে। ২. পাপের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। ৩. ওই পাপ আগামীতে না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে। ৪. কারো হক নষ্ট করার গুনাহ হলে আগে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। শর্তগুলো না মানলে সেই তাওবার গুরুত্ব নেই। তাই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা।’ (সুরা তাহরিম: ৮)
তাওবার কারণে শুধু গুনাহ মাফ হয় না। অনেক সময় গুনাহগুলো সওয়াবে পরিণত হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন।’ (সুরা ফুরকান: ৭০)
মনে রাখা জরুরি, তাওবা বান্দার জন্য দয়াময় আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ ছাড়। বান্দার জন্য মহান আল্লাহর এ বিশেষ ছাড়কে কাজে লাগানো প্রত্যেক বুদ্ধিমান ঈমানদারের কাজ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহর উপদেশ অনুযায়ী তাওবার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।