মানুষের অন্তর গুনাহপ্রবণ। তাই মানুষ গুনাহ করবে এটি স্বাভাবিক। আল্লাহ তাআলা ভালো করেই জানেন যে, বান্দা গুনাহ করবে। কেউ তাওবা-ইস্তেগফার করবে, আর কেউ করবে না। যারা গুনাহ হয়ে গেলে আফসোস করেন, তাওবা-ইস্তেগফার করেন, তাদের আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। বান্দার তাওবায় আল্লাহ অনেক খুশি হন।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হও, আল্লাহ তাআলা তার বান্দার তাওবাতে এরচেয়েও বেশি খুশি হন।’ (সহিহ বুখারি: ৬৭০৯)
বিজ্ঞাপন
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তায়ালা তার মুমিন বান্দার তওবায় ওই ব্যক্তির থেকেও বেশি আনন্দিত হন, যে ব্যক্তি খাবার, পানীয় ও সওয়ারীসহ ছায়াপানিহীন আশঙ্কাপূর্ণ বিজন মাঠে ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর ঘুম থেকে সজাগ হয়ে দেখে যে, সওয়ারী কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারপর সে সেটি খুঁজতে খুঁজতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ল এবং বললো, আমি আমার পূর্বের জায়গায় গিয়ে চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে মারা যাব। (এ কথা বলে) সে মৃত্যুর জন্য বাহুতে মাথা রাখল। কিছুক্ষণ পর জাগ্রত হয়ে সে দেখল, পানাহার সামগ্রী বহনকারী সওয়ারীটি তার কাছে। (সওয়ারী এবং পানাহার সামগ্ৰী পেয়ে) লোকটি যে পরিমাণ আনন্দিত হয়, মুমিন বান্দার তওবার কারণে আল্লাহ তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। (সহিহ মুসলি: ২৭৪৪)
আরও পড়ুন: আল্লাহ যেভাবে বান্দার ডাকে সাড়া দেন
সুবহানাল্লাহ! বান্দা যখন অন্তর থেকে গুনাহ মাফ চায়, গুনাহ না করার ওয়াদা করে, তখন তিনি ক্ষমা না করে পারেন না। আমরা অনেকে মনে করি, আমরা পাপের সাগরে ডুবে গেছি, আল্লাহ আমাদের হয়তো ক্ষমা করবেন না; এগুলো ভুল ধারণা। তিনি দয়ার সাগর। বান্দার এক বিন্দু অনুশোচনার অশ্রু তিনি সহ্য করতে পারেন না। কখনও এক ফোঁটা অশ্রুতেই তিনি বান্দার জীবনের সকল গুনাহ ধুয়ে সাফ করে দেন; জাহান্নামকে হারাম করে দেন চিরতরে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে লোক কাঁদে, তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার ওলানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তাআলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না (আল্লাহ তাআলার পথের পথিক জাহান্নামে যাবে না)। (তিরমিজি: ১৬৩৩)
এটাই হলো বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা বাকারা: ১৪৩)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘আমার দয়া তো প্রত্যেক বস্তুকে ঘিরে রয়েছে।’ (সুরা আরাফ: ১৫৬)
বিজ্ঞাপন
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘মা তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর তদাপেক্ষা অধিক দয়ালু।’ (সহিহ বুখারি: ৭/৭৫, কিতাবুল আদাব: ৫৯৯৯; সহিহ মুসলিম, ৪/২১০৯, কিতাবুত তাওবা: ২৭৫৪)
আরও পড়ুন: বান্দা যেভাবে চাইলে আল্লাহ খুশি হন
আর আল্লাহ তাআলার ভালোবাসার শান ও মর্যাদা আলাদা। তাঁর ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই। তাই গুনাহ হয়ে গেলে তাঁর পছন্দের আমলটি করতে হবে। অর্থাৎ দ্রুত তাওবা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’ (সুরা নিসা: ১১০)
গুনাহের পর অন্তরে আফসোস সৃষ্টি না হওয়া এবং তাওবা-ইস্তেগফার না করা মহান আল্লাহর অপছন্দের বিষয়। তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আল্লাহ বলেছেন- ‘দুর্ভোগ ওই লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর। তারা সুস্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে।’ (সুরা জুমার: ২২)
শেষ বয়সে তাওবা করব—এরকম চিন্তা করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব মানুষের তাওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তাওবা করে। এরাই তারা, যাদের তাওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলো; সে বলে, আমি এখন তাওবা করছি। এবং তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফের অবস্থায়। এরা তারাই, যাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তির ব্যবস্থা।’ (সুরা নিসা: ১৭-১৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাকওয়া দান করুন। গুনাহ থেকে ক্ষমা পেতে একনিষ্ঠভাবে অশ্রুসিক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।