হেদায়াত দেওয়ার মালিক আল্লাহ তাআলা। মানুষ মানুষকে আল্লাহর পথে আনার প্রাণপণ চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু হেদায়াত দিতে পারে না। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা নবীজির উদ্দেশে বলেছেন- إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ ‘আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে হেদায়াত করতে পারবেন না, বরং আল্লাহ তাআলাই যাকে ইচ্ছা হেদায়াতের পথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই অধিক অবগত আছেন।’ (সুরা কাসাস: ৫৬)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন- وَلَوْ شِئْنَا لَآتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا ‘‘আমি যদি ইচ্ছা করতাম তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সৎপথে আনয়ন করতাম।’ (সুরা সাজদাহ: ১৩) আরও ইরশাদ হয়েছে- يُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হেদায়াত দান করেন।’ (সুরা মুদ্দসসির: ৩১)
বিজ্ঞাপন
আয়াতে প্রতিয়মান হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা চাইলে সবাইকে হেদায়াত করতে পারতেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো- সেটা করলে পরীক্ষার কিছু রইলো না। দুনিয়ার পরীক্ষার জায়গা এখানে কাউকে বাধ্য করে হেদায়াত দান করা হয় না, তবে আল্লাহর পথে চলার আগ্রহ ও আল্লাহর পথকে সুগম করার কাজে যারা এগিয়ে যায়, তাদেরকেই আল্লাহ তাআলা কাছে টেনে নেন এবং হেদায়াত দান করেন।
পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে- وَالَّذِیۡنَ جَاهَدُوۡا فِیۡنَا لَنَهۡدِیَنَّهُمۡ سُبُلَنَا وَاِنَّ اللّٰهَ لَمَعَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ والذین جاهدوا فینا لنهدینهم سبلنا وان الله لمع المحسنین ‘আর যারা আমার পথে জিহাদ করে তথা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।’ (সুরা আনকাবুত: ৬৯)
আরও পড়ুন: আল্লাহ ‘সফল’ ঘোষণা করেছেন যাদের
অর্থাৎ, যারা একনিষ্ঠ মনে আল্লাহর পথে চলতে চায় তাদেরকে মহান আল্লাহ তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দেন না। বরং তিনি তাদেরকে পথ দেখান এবং তার দিকে যাওয়ার পথ তাদের জন্য খুলে দেন। তারা তার সন্তুষ্টি কিভাবে লাভ করতে পারে তা তিনি পদে পদে তাদেরকে জানিয়ে দেন। এজন্য মানুষের চেষ্টা করতে হয়।
বিজ্ঞাপন
কারণ, আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করে তার মাঝে ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘শপথ প্রাণের এবং তার, যিনি তাকে সুঠাম করেছেন। তারপর তাকে তার সৎকাজের এবং তার অসৎ-কাজের জ্ঞান দান করেছেন। সেই সফলকাম হয়েছে যে নিজ আত্মাকে পবিত্র করেছে। আর সে-ই ব্যর্থ হয়েছে, যে নিজেকে কলুষিত করেছে। (সুরা শামস: ৭-৯)
ভালোমন্দ দুই পথই মানুষের সামনে স্পষ্ট। তবে ভালো ও আলোর পথ পেতে মানুষকে নিজের থেকে চেষ্টা করতে হবে। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর আমি ভালো ও মন্দ উভয় পথ তার জন্য সুস্পষ্ট করে রেখে দিয়েছি।’ (সুরা বালাদ: ১০) আরও বলা হয়েছে, ‘আমি তাদেরকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, চাইলে তারা কৃতজ্ঞ হতে পারে আবার চাইলে হতে পারে অস্বীকারকারী।’ (সুরা ইনসান: ৩)
আরও পড়ুন: মুমিনদের জন্যে আল্লাহর ২৫ প্রতিশ্রুতি
এই আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায়, যারা সৎপথের সন্ধান করবে, তাদেরকে সৎপথের সন্ধান দেয়াই আল্লাহ তাআলার নীতি। আয়াত থেকে এটাও বোঝা যায় যে, যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে সে হেদায়াত লাভ করবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিন্তু তারা যখন বাঁকা পথ ধরল, তখন আল্লাহও তাদের অন্তরকে বাঁকা করে দিলেন।’ (সুরা সফ: ৫) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমি তাদেরকে অভিসম্পাত দিয়েছি এবং তাদের অন্তরসমূহ কঠিন করেছি। তারা শব্দসমূহের সঠিক অর্থ বিকৃত করে। তাদেরকে যা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তারা ভুলে গিয়েছে।’ (সুরা মায়েদা:১৩)
আল্লাহ তাআলা এখানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি যে বান্দাকে পথভ্রষ্ট করেছেন তাকে পথভ্রষ্ট করার কারণ সে বান্দার পক্ষ থেকেই।’ আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের পথে আন্তরীক ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টাকারী হিসেবে কবুল করুন এবং হেদায়াত নসিব করে আমাদের দুনিয়া আখেরাত মর্যাদাপূর্ণ করুন। আমিন।