গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে। এবারের ইজতেমা ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেজামের অধীনে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
ইজতেমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো- মুসলমানদের শতভাগ দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে দুনিয়ার বুকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তারা মৌলিকভাবে তিনটি পন্থা গ্রহণ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
১. নবীওয়ালা দাওয়াতের পন্থা অবলম্বন
যে পন্থা অবলম্বন করেছিলেন নবী কারিম (স.) এবং সব নবী ও রাসুল। দাওয়াতের মাধ্যমে নবী কারিম (স.) শিক্ষা বঞ্চিত, আদর্শ বিবর্জিত ও শতধা বিভক্ত জাতিকে আমূল পরিবর্তন করে মানব ইতিহাসে সবচেয়ে শিক্ষিত, উন্নত, আদর্শ ও ঐক্যবদ্ধ জাতিতে রূপান্তরিত করেছিলেন।
নবী-রাসুলরা দুনিয়ায় এই গুরু দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করেন। দ্বীনের খুঁটিনাটি যাবতীয় বিষয় শিক্ষা দিয়ে দ্বীনের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী করে মহান আল্লাহর খাঁটি বান্দা এবং প্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলেন। নবী-রাসুলের আগমনের ধারা শেষ হয়ে গেছে। তাই তাদের উত্তরসূরি আলেমদের তত্ত্বাবধানে এই গুরুদায়িত্ব পালন উম্মতের প্রতিটি সদস্যের ওপর আবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি তোমাদের মানুষের কল্যাণের তরে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎকাজে আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে বাধা প্রদান করবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১১০)
আরও পড়ুন: নবীদের দাওয়াত ছিল ৬ বিষয়কে কেন্দ্র করে
২. দ্বীনের দাঈদের জামাত তৈরি
বিশ্ব ইজতেমার আরেকটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলোউম্মতকে আল্লাহমুখী করার জন্য দাঈদের এমন একটি জামাত তৈরি করা, যারা আলেমদের তত্ত্বাবধানে দিবানিশি উম্মতের হেদায়েতের জন্য চিন্তা ও কঠোর সাধনা করবেন। রাতের নির্জনতায় উম্মতের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করবেন। আল্লাহর দেওয়া জান-মাল ও সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করবেন। এজন্য কারও কাছে কোনো বিনিময় চাইবেন না। তারা দুনিয়ার চাকচিক্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না। তাদের দৃষ্টি সর্বদা মহান স্রষ্টার প্রতি নিবদ্ধ থাকবে। তারা তাদের রবের কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবে। তারা আপাদমস্তক সুন্নতের অনুসারী হবে। বিপদ-মসিবতে সহনশীলতা, ধৈর্যশীলতা, সহমর্মিতা, ত্যাগ ও তিতিক্ষার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করবে। পারস্পরিক হৃদ্যতা-ভালোবাসা ও ঐক্যের বন্ধনে সিসাঢালা প্রাচীরের মতো সুদৃঢ় থাকবে। তাদের প্রতিটি আচার-আচরণ, চলন-বলন ও কাজকর্মে থাকবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ব্যাকুলতা।
৩. আল্লাহর রাস্তায় জামাত বের করা
আল্লাহর রাস্তায় বেশি পরিমাণে জামাত বের করার প্রচেষ্টা ইজতেমার অন্যতম লক্ষ্য। বিশ্ব ইজতেমায় দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিদে উৎসাহ দেওয়া হয় দাওয়াতের মিশনকে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে। তারা মানুষকে মসজিদমুখী করবেন এবং দ্বীনি আলোচনা শোনাবেন। এর কারণ হলো, মানুষ যখন দীর্ঘসময় মসজিদের পরিবেশের থেকে দ্বীনি আলোচনা শুনে, কিতাবি তালিমে বসার মাধ্য আমলগুলো হৃদয়ঙ্গম করে তার মধ্যে পরিবর্তন আসে। প্রত্যেক কাজ নবীজির সুন্নত অনুযায়ী করার চেষ্টা তৈরি হয় এবং অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও দ্বীন অনুযায়ী নিজের জীবন পরিচালনার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ঈমান মজবুত করার উপায়
মৌলিকভাবে এই তিনটি পন্থায় দ্বীনের প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ইজতেমা চলমান রয়েছে। জামাতের মুরব্বিরা বলেন, ব্যক্তি জীবনের কাজ-কর্ম, অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য, অন্য সবকিছুর সঙ্গে মিলিয়ে ইসলামি বিধান ও রাসুলের নির্দেশ পালন করা যে কষ্টসাধ্য বিষয় নয়—তা শেখাতে চায় তাবলিগ জামাত। তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস (রহ.) বলেন, ‘আমি এই তাহরিকের (ঈমানি আন্দোলন) মাধ্যমে প্রত্যেক জায়গায় ওলামায়ে কেরাম ও বুজুর্গানে দ্বীন এবং দুনিয়াদারদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন, মিল-মহব্বত ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি সৃষ্টি করতে চাই।’ (মালফুজাত: মালফুজ নম্বর ১০২)