রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মেরাজ কত সালে সংঘটিত হয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

মেরাজ কত সালে সংঘটিত হয়

মেরাজ রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবনের অন্যতম মোজেজা। মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন। বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে মেরাজের যাত্রা শুরু হয়। মহান আল্লাহ তাঁর বন্ধু মুহাম্মদ (স.)-কে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় আকাশে আরোহণ করিয়ে প্রথম আকাশ থেকে শুরু করে সপ্তাকাশ ভেদ করে সিদরাতুল মুনতাহা পেরিয়ে তাঁর নিজের কাছে ডেকে নিয়েছিলেন। সেটাকেই মিরাজ বলা হয়।

মিরাজ কবে সংঘটিত হয় এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। মুসা ইবনে ওকবা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে মেরাজের ঘটনা হিজরতের ছয় মাস আগে সংঘটিত হয়। ইমাম নববি ও কুরতুবির মতে, মেরাজের ঘটনা মহানবী (স.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির পাঁচ বছর পর ঘটেছে। ইবনে ইসহাক বলেন, মিরাজের  ঘটনা তখন ঘটেছিল, যখন ইসলাম আরবের সব গোত্রে ছড়িয়ে পড়েছিল।


বিজ্ঞাপন


ইমাম হরবি বলেন, ইসরা ও মেরাজের ঘটনা রবিউসসানি মাসের ২৭ তারিখ রাতে হিজরতের এক বছর আগে ঘটেছিল। ইবনে কাসেম সাহাবি বলেন, নবুয়তপ্রাপ্তির ১৮ মাস পর এ ঘটনা ঘটেছে। তিবরানি (রহ.) বলেছেন, যে বছর মহানবী (স.)-কে নবুয়ত দেওয়া হয়, সে বছরই মেরাজ  সংঘটিত হয়। কারো মতে হিজরতের ১৬ মাস আগে রমজান মাসে মেরাজ সংঘটিত হয়। অধিকাংশের মতে, নবুয়তের দশম বর্ষে রজব মাসের ২৭ তারিখ (৬২০ খ্রিস্টাব্দের এক রজনীতে) মেরাজ সংঘটিত হয়। (আর রাহিকুল মাখতুম)

এ বিষয়ে যে মতটি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে, সেটি হলো- ২৭ রজব রাতে মেরাজ সংঘঠিত হয়েছে। তবে, এ কথাটিও প্রমাণিত নয়। ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, ২৭ রজব তারিখটি শুধু এমন একটি রেওয়ায়েতে পাওয়া যায়, যার সনদ সহিহ নয়। কোনো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা এটি প্রমাণিত নয়। মেরাজ কখন হয়েছিল সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সনদে শুধু এটুকু পাওয়া যায় যে, তা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু কোন দিন, কোন মাস বা তারিখে সংঘটিত হয়েছে এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কিছুই নেই। তাই এই তারিখকে মেরাজের রাত ধরে নেওয়া যেমন ভুল তেমনি তা উদযাপন করাও ভুল। সাহাবা, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন কেউ কখনো মেরাজ রজনি উদযাপন করেছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। এটি একটি কুসংস্কারও বিদআত। (আলমাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ ও শরহুল মাওয়াহিব: ৮/১৮-১৯; আলবিদায়া ওয়াননিহায়া: ২/৪৭১; লাতায়িফুল মাআরিফ: পৃ. ১৩৪)

আরও পড়ুন: শবে মেরাজের ঘটনা কোন সুরায় আছে, হাদিসে কী আছে

হাদিসের ভাষ্য মতে, মেরাজের সূচনা হয় মসজিদে হারাম থেকে। এক রাতে নবীজি আল্লাহর ঘরের হিজরের মাঝে শায়িত ছিলেন, এমন সময় হজরত  জিবরাইল (আ.) এসে জাগ্রত করে তাঁর বক্ষ মুবারক বিদীর্ণ করেন। বের করে আনলেন নবীজির হৃদয়। জমজমের পানি দিয়ে তা ধুয়ে আবার প্রতিস্থাপন করে দিলেন জায়গামতো। ঈমান ও হিকমতে পূর্ণ করে দেওয়া হলো নবীজির কলব। অতঃপর বোরাক নামের বাহনে করে সশরীরে বায়তুল মাকদাসে নিয়ে যান। বোরাকের প্রতিটি পদক্ষেপ দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত। প্রিয়নবী (স.) বায়তুল মাকদাসের দরজায় খুঁটির সঙ্গে বোরাকটি বেঁধে যাত্রাবিরতি করেন এবং সব নবীর ইমাম হয়ে নামাজ আদায় করেন। (আর রাহিকুল মাখতুম)


বিজ্ঞাপন


বায়তুল মাকদাসে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ আদায় করার পর বিশেষ সিঁড়ির সাহায্যে নবীজি সশরীরে প্রথম আকাশে, অতঃপর অবশিষ্ট আকাশগুলোয় গমন করেন। এ সিঁড়িটি কী এবং কেমন ছিল, তার প্রকৃত স্বরূপ আল্লাহ তাআলাই জানেন। প্রতিটি আকাশে সেখানকার ফেরেশতারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান এবং প্রত্যেক আকাশে অবস্থানরত পয়গম্বরদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। এরপর মহান আল্লাহর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ হয় নবীজির। মেরাজের রাতে নবীজির সামনে বায়তুল মামুর, সিদরাতুল মুনতাহা, হাউজে কাউসার, জান্নাত, জাহান্নাম ও সৃষ্টিকূলের অপার রহস্য উন্মোচন করা হয়।

এই মোবারক সফরে নবীজিকে আল্লাহ তাআলা তিনটি উপহার দেন। ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ২. সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং ৩. এই উম্মতের যারা শিরক থেকে বেঁচে থেকে মৃত্যুবরণ করবে— তাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়ার ঘোষণা। (মুসলিম: ১৭৩)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর