মাজলুম বলা হয় এমন ব্যক্তিকে যার ওপর জুলুম করা হয়। একজন মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে জুলুমের শিকার বা নির্যাতিত হতে দেখেও নির্লিপ্ততা অবলম্বনের সুযোগ রাখেনি ইসলাম। কারণ ইসলামে সকল মুসলমান এক দেহের মতো। দেহের কোনো অঙ্গ আক্রান্ত হলে গোটা দেহই ব্যথা ও বিনিদ্রায় শরিক থাকে। প্রতিরোধ প্রচেষ্টায় নিজের মা এবং আরেকজন মুসলিম মা’র মধ্যে পার্থক্য না করাই ইসলামের শিক্ষা।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যে ব্যক্তি এমন স্থানে অপর মুসলিমের সাহায্য পরিত্যাগ করে, যেখানে তার সম্ভ্রম-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করা থেকে বিমুখ থাকবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য কামনা করে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের সম্ভ্রম-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার স্থানে তাকে সাহায্য করে, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য প্রত্যাশা করে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৮৪, মুসনাদে আহমদ:১৬৩৬৮)
বিজ্ঞাপন
মুসলমানরা যদি আল্লাহর কোনো বান্দাকে মাজলুম হতে দেখেও জালিমকে প্রতিহত না করে, তাহলে আল্লাহ তাদের সকলকে আজাবে আক্রান্ত করবেন। হাদিসে এসেছে, মানুষ যদি কোনো অত্যাচারীকে অত্যাচারে লিপ্ত দেখেও তার দু-হাত চেপে ধরে তাকে প্রতিহত না করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা অতি শীঘ্রই তাদের সকলকে তার ব্যাপক শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত করবেন। (তিরমিজি: ২১৬৮; আবু দাউদ: ৪৩৩৮)
আরও পড়ুন: জুলুমের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহর শপথ
কিছু লোক জালেমকে প্রতিরোধ তো করেই না, বরং জালিম ও অত্যাচারীকে সহযোগিতা করে। হাদিস অনুযায়ী, এ ধরনের লোকও জালিমের অন্তর্ভুক্ত এবং এরা ইসলামের গণ্ডি থেকেই বের হয়ে যাবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো জালিমের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তার সঙ্গে চলে অথচ সে জানে যে ওই ব্যক্তি জালিম, তখন সে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেল।’ (মেশকাত: ৪৯০৮)
নবীজি (স.) আরও বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সেই বান্দাই মর্যাদায় নিকৃষ্ট সাব্যস্ত হবে, যে অন্যের পার্থিব কল্যাণে নিজের আখেরাত ধ্বংস করেছে। অর্থাৎ কোনো জালিমের কাজে সাহায্য করেছে।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১০১)
বিজ্ঞাপন
মাজলুমের করুণ আর্তনাদ ও ফরিয়াদ বৃথা যায় না। মজলুম জালেমের বিরুদ্ধে কোনো বদদোয়া করলে, আল্লাহ তা কবুল করে নেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে ইয়ামানে (শাসক নিয়োগ করে পাঠানোর সময় রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে বলেছিলেন, ‘মাজলুমের বদদোয়াকে ভয় করবে। কেননা, তার (বদদোয়া) এবং আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না। (বুখারি: ১৪৯৬)
আরও পড়ুন: ১৪ পাপের শাস্তি দুনিয়ায় দেওয়া হয়
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না; ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ না সে ইফতার করে এবং মাজলুমের দোয়া। (এ শ্রেণির মর্যাদা এই যে) কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তা মেঘমালার ওপর তুলে রাখবেন এবং তার জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে। আর আল্লাহ বলবেন, আমার ইজ্জতের কসম, একটু পরে হলেও আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব। (ইবনে মাজাহ: ১৭৫২)
তাই আসুন, আমরা মাজলুম ভাইদের রক্ষা করতে সচেষ্ট হই। জালেমের হাত চেপে ধরার মাধ্যমে তাকেও সাহায্য করি। কেননা রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তুমি তোমার ভাইকে সাহয্য করো, সে জালেম হোক বা মাজলুম। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, মজলুমকে সাহায্য করব, তা তো বুঝলাম। কিন্তু জালেমকে কীভাবে সাহায্য করব? তিনি বলেন, তুমি তার হাত ধরে তাকে জুলুম থেকে বিরত রাখবে। (বুখারি: ২৪৪৪)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মাজলুমের বদদোয়া থেকে হেফাজত করুন। মাজলুমের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

