শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফরজ গোসলের ক্ষেত্রে তায়াম্মুমের নিয়ম কি আলাদা?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

ফরজ গোসলের ক্ষেত্রে তায়াম্মুমের নিয়ম কি আলাদা?

অজু বা গোসলের পরিবর্তে মাটি দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের নাম তায়াম্মুম। কখনো যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়- কোনো স্থানে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত পানি নেই, কিংবা পানি ব্যবহার ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর—এমন পরিস্থিতিতে ইসলাম কিছু নিয়ম অসনুসরণের মাধ্যমে তায়াম্মুম করার অনুমতি দিয়েছে। 

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাকো কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে, কিংবা নারীগমন করে থাকো, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তির সম্ভাবনা না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল।’ (সুরা নিসা: ৪৩)


বিজ্ঞাপন


মূলত ইসলামি বিধিবিধান সহজ, যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। মানবকল্যাণই ইসলামি বিধানের উদ্দেশ্য। মানুষের ক্ষতি বা কষ্ট আল্লাহ চান না। কোরআনের ভাষায়, ‘আল্লাহ কারও ওপর এমন কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না, যা তার সাধ্যাতীত।’ (সুরা বাকারা: ২৮৬)

আরও পড়ুন: তায়াম্মুম করার নিয়ম কী, কখন করতে হবে?

অজু ও গোসলের পরিবর্তে এক নিয়মেই তায়াম্মুম করতে হয়। অর্থাৎ অজুর ক্ষেত্রে যে-ই তায়াম্মুম, গোসলের ক্ষেত্রেও একই তায়াম্মুম। তায়াম্মুমের নিয়ম হলো- তায়াম্মুমের নিয়ত করে মাটি বা মাটিজাতীয় বস্তু যেমন বালু, পাথর, চুন ও সুরমা ইত্যাদি কোনো কিছুতে দুবার হাত লাগানো, একবার হাত দিয়ে মুখ মাসাহ করা, আরেকবার কুনুই পর্যন্ত উভয় হাত মাসেহ করা। আরেকটু পরিষ্কারভাবে বললে- প্রথমে উভয় হাতের কাপড়গুলো কনুইয়ের উপরে উঠিয়ে নেবে। তায়াম্মুমের নিয়ত করে বিসমিল্লাহ পাঠ করবে। নিজের উভয় হাতের তালুকে আঙুলগুলো খোলা রেখে মাটি বা মাটিজাতীয় বস্তুর উপর রাখবে। হাতকে মাটির ওপর সামান্য ঘষবে। তারপর উভয় হাত উঠিয়ে ঝেড়ে ফেলবে। এরপর পুরো মুখমণ্ডল মাসেহ করবে। অতঃপর আগের মতো উভয় হাতের তালু আঙুল খোলা রেখে মাটির ওপর রেখে সামান্য ঘষবে। এরপর নিজের বাঁ হাত দ্বারা ডান হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। এরপর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। তাতে তায়াম্মুম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর ফরজ, নফল সব ধরনের ইবাদত আদায় করতে পারবে। (কিতাবুল আসার লি আবি ইউসুফ: ৭৭; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৬০)

অজু গোসল যে সব কারণে ভাঙে, সেসব কারণে তায়াম্মুমও ভাঙে। এ ছাড়া যে সমস্যার কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছিল, সেই সমস্যা দূর হয়ে গেলেও তায়াম্মুম ভেঙে যায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৬০, ১/১৯২) 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: কনকনে শীতে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যায়?

এক তায়াম্মুমই গোসল ও অজুর জন্য যথেষ্ট। আর এই তায়াম্মুম দ্বারা তেলাওয়াত, নামাজ ইত্যাদি পড়তে পারবেন। অবশ্য এরপর অজু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন অজু করতে হবে। আর পরবর্তীতে যখন গোসল করার সামর্থ্য হবে তখন গোসল করে নিতে হবে। (কিতাবুল আসল: ১/১০৭; মাবসুত, সারাখসি: ১/১১৪; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/৩৮; আলবাহরুর রায়েক: ১/১৫২)

মনে রাখতে হবে, গোসল ফরজ হওয়া সত্ত্বেও বিনা ওজরে গোসল না করে নামাজ কাজা করা যাবে না। অপবিত্র অবস্থায় এক ওয়াক্ত নামাজের সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়াও মারাত্মক গুনাহ। এক্ষেত্রে তীব্র লজ্জা কিংবা গোসলের পরিবেশ নাই মনে করা শরিয়তসম্মত ওজর নয়। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৫১)

রাসুল (স.) বলেছেন, যার নামাজ কাজা হয়ে গেল, যেন তার পরিবার ও সম্পদ সবই ধ্বংস হয়ে গেল। (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৬৪২) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর