বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যেসব লক্ষণে প্রকাশ পাবে আপনি আল্লাহকে ভালোবাসেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

যেসব লক্ষণে প্রকাশ পাবে আপনি আল্লাহকে ভালোবাসেন

মহান আল্লাহর প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা তারাই লালন করে, যারা তাঁর অনুগত। আপনি আল্লাহকে ভালোবাসতে পারবেন না যতক্ষণ না তাঁর আনুগত্য করতে ভালোবাসবেন। মূলত আল্লাহর কাছে সে বান্দার ভালোবাসাই ভালোবাসা হিসেবে গণ্য, যে নিজের নফসের চাহিদা, প্রিয়বস্ত্ত, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি সবকিছুর ওপর আল্লাহর পছন্দনীয় আমলকে প্রাধান্য দেয় এবং অবশ্যই তাঁর রাসুলের সুন্নতের অনুসরণ করে। 

কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাকো তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের অনুগত হও। কিন্তু তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা আলে-ইমরান: ৩১-৩২)


বিজ্ঞাপন


উক্ত আয়াতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, নবীজির অনুসরণ ছাড়া আল্লাহকে ভালোবাসা যায় না এবং আল্লাহর ভালোবাসা লাভও হয় না। বরং নবীজির অনুসরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি করলে পরিণাম খারাপ হবে।

আল্লাহ প্রেমিকদের বৈশিষ্ট্য

আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসার দাবি কতটা সত্য তা এই আয়াত দিয়েও পরিমাপ করতে পারেন- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি তার দ্বীন থেকে ফিরে যায়, তাহলে আল্লাহ আরো এমন বহু লোক সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে আল্লাহ ভালোবাসবেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালোবাসবে, যারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও কাফেরদের ব্যাপারে কঠোর হবে, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি সেটা দান করেন। বস্তুত আল্লাহ প্রাচুর্যময় এবং সর্ববিষয়ে অবগত।’ (সুরা মায়েদা: ৫৪)

আরও পড়ুন: আল্লাহ বান্দার সঙ্গে থাকেন যেভাবে


বিজ্ঞাপন


এ আয়াতে আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসেন—এমন বান্দাদের চারটি বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। ১. তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও দয়ালু হবেন। ২. কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর হবেন। ৩. জান-মাল, শক্তি ও জবান দিয়ে আল্লাহর দ্বীনকে শক্তিশালী করার কাজ করবেন এবং ৪. সত্যের বিজয় আনতে গিয়ে জান-মাল খরচ করার পথে কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবেন না।

উক্ত আয়াতের আলোকে আমরা পরখ করে দেখতে পারি যে, আসলেই আল্লাহর প্রতি আমাদের ভালোবাসার দাবি কতটা সত্য। আমরা কি মুমিনদের প্রতি কোমল ও দয়ালু? আমরা কি মুসলিম জাতির শত্রুদের প্রতি কঠোর? আমরা কি আসলেই আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করতে জান-মাল দিতে প্রস্তুত? আমরা কি দ্বীনি বিষয়ে বিজাতীয় সমালোচনা কিংবা জাতীয়-আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে ভয় করি?

এই একটি আয়াতই যথেষ্ট আল্লাহর প্রতি আমাদের অন্তরে কতটা ভালোবাসা আছে বা আমরা কতটা তাঁর অনুগত তা প্রমাণের জন্য। আল্লাহর প্রেমিকরা কখনও আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সিদ্ধান্তের ওপর কোনোকিছুকে প্রাধান্য দেবেন না। আর তাদেরকেই আল্লাহ তাআলা দুনিয়া-আখেরাতে সফল ঘোষণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের উক্তি তো এই—যখন তাদের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের দিকে ডাকা হয়, তখন তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং আনুগত্য করলাম। আর তারাই সফলকাম। আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তাহলে তারাই কৃতকার্য। (সুরা নূর: ৫১-৫২)

আরও পড়ুন: নামাজে আল্লাহ যেভাবে বান্দার সঙ্গে কথা বলেন

মহান আল্লাহকে ভালোবাসার লক্ষণ

মহান আল্লাহকে যারা ভালোবাসেন তারা জিকির-আজকার, কোরআন মজিদ বুঝে পড়া, মুখস্থ করা ও তার আমলের মাধ্যমে নিশ্চয়ই তাঁর সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করবেন। প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি কাজে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করবেন। দান করবেন আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে, কোনো দ্বীনদারকে ভালোবাসবেন তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। শিরক-বিদআত থেকে বেঁচে থাকবেন তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য। একইভাবে ন্যায়বিচার, মা-বাবার সেবা, দরিদ্রের সহায়তা, মুমিনের পাশে থাকা, সরল জীবনযাপন, দ্বীনি কাজে অংশগ্রহণ, নফল আমল সবকিছু করবেন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এসবকিছু আল্লাহকে ভালোবাসার প্রমাণ বহন করে।

অনুগত হওয়া ছাড়া আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি অর্থহীন

যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুগত নয়, শিরক-বিদআতে লিপ্ত এবং আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে ভিন্ন মতের অনুসারী, তাদের মুখে আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি অর্থহীন। তারা যেহেতু কুফুরিকে বেছে নিয়েছে, তাই তারা আল্লাহওয়ালাদের তালিকাভুক্ত নয়। নিজের মা-বাবা হলেও তারা আল্লাহ প্রেমিকদের আপন হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরিকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই জালিম’ (সুরা তাওবা: ২৩)

আরও পড়ুন: আল্লাহ পছন্দের বান্দাদের পবিত্র করেন যেভাবে

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যাতে তিনি জেনে নেন মুনাফিকদেরকে। আর তাদেরকে বলা হয়েছিল, ‘এসো, আল্লাহর পথে লড়াই করো অথবা প্রতিরোধ করো’। তারা বলেছিল, ‘যদি আমরা লড়াই হবে জানতাম তবে অবশ্যই তোমাদেরকে অনুসরণ করতাম’। সেদিন তারা কুফরির বেশি কাছাকাছি ছিল ঈমানের তুলনায়। তারা তাদের মুখে বলে, যা তাদের অন্তরসমূহে নেই। আর তারা যা গোপন করে সে সম্পর্কে আল্লাহ অধিক অবগত। (সুরা আলে ইমরান: ১৬৭)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর