সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নতুন এক আলোকিত জীবন শুরু করবেন যেভাবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

নতুন এক আলোকিত জীবন শুরু করবেন যেভাবে

ইসলাম মানুষকে পুরোনো গ্লানি, পাপ-পঙ্খিলতাকে মাড়িয়ে আলোকিত জীবন গড়ার রাস্তা দেখায়। যে পথে হাঁটলে রহমতের ফেরেশতারা সঙ্গী হয়ে পথচারীকে সোজা জান্নাতে নিয়ে চলে। এখানে আমরা দেখে নেব কীভাবে অতীতের সব গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে পবিত্র জীবন শুরু করা যায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির সঙ্গে পুরো জীবন অতিবাহিত করা যায়।

১. আত্মসমালোচনা করা
আরবিতে বলা হয় محاسبة النفس তথা স্বীয় আত্মার হিসাব গ্রহণ করা। এটি মুমিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিগত জীবনে কী ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে, কীভাবে জীবনকে সুন্দর করা যেতো তা ভালোভাবে চিন্তা গবেষণা করা মুমিনের কর্তব্য। আত্মসমালোচনাকে প্রত্যেক মুমিনের জন্য অপরিহার্য ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিত আগামীকালের জন্য (অর্থাৎ আখেরাতের জন্য) সে কি প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তারা ফাসিক।’ (সুরা হাশর: ১৮) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর নির্বোধ ও অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে মনোবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অলীক কল্পনায় ডুবে থাকে।’ (তিরমিজি: ২৪৫৯) 


বিজ্ঞাপন


২. তাওবা-ইস্তেগফার করা
অতীতের ভুল-ভ্রান্তি থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেওয়ার জন্য তাওবা-ইস্তেগফারের চেয়ে ভালো কোনো পদ্ধতি নেই। তাই নতুনভাবে জীবনকে সাহাজে প্রথমেই মহান আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তেগফার করে নিতে হবে। আসলে এটি জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা) যারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে, (সঙ্গে সঙ্গেই) তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং গুনাহের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (তদুপরি) এরা জেনে বুঝে নিজেদের গুনাহের ওপর কখনও অটল হয়ে বসে থাকে না। এই মানুষগুলোর প্রতিদান হবে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। আর (তাদের) এমন এক জান্নাত (দেবেন) যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে, সেখানে (নেককার) লোকেরা অনন্তকাল অবস্থান করবে। সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কত সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।' (সুরা আল ইমরান: ১৩৫-১৩৬)

আরও পড়ুন: ইস্তেগফার সৌভাগ্যবানদের আমল 

৩. খারাপ সঙ্গ ও পরিবেশ বদলানো
আপনি গুনাহ ছেড়ে দিয়ে একটি আলোকিত জীবন চান, আবার খারাপ সঙ্গ ও পরিবেশ বদলাতে চান না, এটা হয় না। তাই আপনাকে খারাপ সঙ্গ ও পরিবেশ বদলাতে হবে। তা না হলে আবারও গুনাহে জড়ানোর সম্ভাবনা থেকে যাবে। তাই যে পরিবেশে গুনাহের যত্রতত্র সুযোগ রয়েছে, তাতে পরিবর্তন আনতে হবে। যে সঙ্গ আপনাকে গুনাহের দিকে নিয়ে যেতে পারে সে সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে হবে। মূলত এগুলোই হচ্ছে গুনাহের পথ। কোরআন-হাদিসে গুনাহের এই পথগুলো আগে বন্ধ করার নির্দেশ এসেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জেনা তথা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩২) 

৪. আল্লাহ ওয়ালাদের সোহবতে থাকা
আলোকিত জীবন গঠনে আল্লাহওয়ালাদের সোহবতে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের মজলিসে আসা যাওয়া করলে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হয়। নেককার মানুষের সোহবতে থাকার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক। (সুরা তাওবা: ১১৯)


বিজ্ঞাপন


৫. নেক আমলের পরিমাণ বাড়ানো
সংক্ষিপ্ত দুনিয়ার আমলের বিনিময়ে চিরস্থায়ী আখেরাতে প্রতিফল দেওয়া হবে, তাই মুমিনের উচিত হবে নিজের ঈমান-আমলকে সমৃদ্ধ করা। এক্ষেত্রে কোরআন-হাদিস অধ্যয়ন, দান-সদকা, আল্লাহর রাস্তায় অংশগ্রহণ বাড়ানো, ফরজের পাশাপাশি নফল ইবাদতের পরিমাণ বাড়ানো ইত্যাদি চেষ্টা নেককার বান্দার বৈশিষ্ট্য। আর এতেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে আপনি তাদের সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ...।’ (সুরা বাকারা: ২৪)

আরও পড়ুন: অন্তরে নেক আমলের ঝোঁক সৃষ্টি হওয়া কীসের আলামত?

৬. বিশুদ্ধ নিয়ত ও সুন্নতে নববীর অনুসরণ
যেকোনো কাজ, যেকোনো বিষয় ইবাদতে পরিণত করার জন্য মুমিনদের দুটি দিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। সেগুলো হলো- ১. নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া ২. সুন্নত অনুযায়ী হওয়া। এই দুটির একটিরও ব্যত্যয় হলে কোনো লাভ হবে না। তাই জীবনের পরতে পরতে নিয়ত ও সুন্নত যেন সঠিক হয় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। 

৭. আল্লাহর সাহায্য চেয়ে দোয়া করা
একটি পবিত্র জীবনের জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আল্লাহ বান্দার কল্যাণকর দোয়াগুলো কবুল না করে পারেন না। এক্ষেত্রে এই দোয়াটি করতে পারেন- رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ উচ্চারণ: ‘রব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’ অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাদের দুনিয়াতে সুখ-কল্যাণ দান করুন, আখেরাতেও সুখ-সমৃদ্ধি দান করুন এবং জাহান্নাম থেকে আমাদের রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১)
পাশাপাশি এই দোয়াও করুন— اللَّهُمَّ إِنِي أَسْأَلُكَ الهُدَى، وَالتُّقَى، وَالعفَافَ، والغنَى উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াততুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সুপথ, আল্লাহ ভীতি, চরিত্রের নির্মলতা ও অভাব মুক্তির প্রার্থনা করছি।’ (তিরমিজি, রিয়াজুস সালেহিন: ৭২) এই দোয়াটিও করতে পারেন—اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي، وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আলহিমনী রুশদী, ওয়া আয়িজনী মিন শাররি নাফসী।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়েত দান করো এবং নফসের অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করো।’ (তিরমিজি: ৩৪৮৩)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর