সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গুনাহ ছেড়ে দেয়ার সহজ উপায়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

গুনাহ ছেড়ে দেয়ার সহজ উপায়

গুনাহের শাস্তি শুধু পরকালে নয়, দুনিয়ার জীবনেও এর তিক্ত পরিণাম ভোগ করতে হয়। সার্বক্ষণিক যন্ত্রণা ও পেরেশানিমূখর জীবন অতিবাহিত করাও শাস্তি হিসেবে কম নয়। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গুনাহের কাজ ছেড়ে দেওয়ার বিকল্প নেই। অনেকে গুনাহের পথ ছেড়ে দিতে চান, কিন্তু উপায় জানা না থাকার কারণে তা সহজ হয় না। এখানে গুনাহ ছেড়ে দেয়ার কিছু সহজ উপায় তুলে ধরা হলো।

১. প্রথমেই খারাপ সঙ্গ ও পরিবেশ বদলান
আপনি গুনাহ ছেড়ে দিতে চান, আবার খারাপ সঙ্গ ও পরিবেশ বদলাতে চান না, এটা হয় না। তাই আপনাকে সবকিছুর আগে খারাপ সঙ্গ ও পরিবেশ বদলাতে হবে। তা না হলে আবারও গুনাহে জড়ানোর সম্ভাবনা থেকে যাবে। যেই পরিবেশে ইন্টারনেট মোবাইল কম্পিউটার ব্যবহারের যত্রতত্র সুযোগ রয়েছে, তাতে পরিবর্তন আনতে হবে। প্রয়োজনীয় নেট-কম্পিউটার ইত্যাদি যেন সবার নজরে পড়ে, এমনভাবে স্থাপন করতে হবে। এছাড়াও যে পরিবেশে অনাত্মীয় নারী, মাদক ইত্যাদি চোখের সামনে পড়ে, তা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে অথবা সেই পরিবেশ ছেড়ে আপনাকে অন্য পরিবেশে চলে যেতে হবে। কেননা এগুলোই হচ্ছে গুনাহের পথ। কোরআন-হাদিসে আগে গুনাহের এই পথগুলো বন্ধ করার নির্দেশ এসেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জেনা তথা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩২) 


বিজ্ঞাপন


খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন– ‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের ওপর থাকে, অতঃপর কার সাথে বন্ধুত্ব করছ তা বিবেচনা করে নাও’। (সুনান তিরমিজি: ২৩৭৮)

২. তাওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেওয়া
অতীত গুনাহের জন্য তাওবা করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নিতে হবে। তাওবা কবুলের শর্তগুলো মাথায় রাখুন। শর্তগুলো হলো— ১) কৃত গুনাহের ওপর অনুতপ্ত হওয়া ২) গুনাহ সম্পূর্ণ পরিহার করা ৩) ভবিষ্যতে না করার দৃঢ় সংকল্প করা ৪) বান্দার হক নষ্ট করে থাকলে তা আদায় করা। (তিরমিজি: ৪০২, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ২/২৩৯-২৪০)

আরও পড়ুন: তাওবার পর আবারও গুনাহ করলে করণীয়

৩. সম্ভব হলে দ্রুত বিয়ে করুন
যৌবন যদি গুনাহের কারণ হয়, তাহলে দ্রুত বিয়ের চিন্তা করুন। প্রয়োজনে অভিভাবককে খোলাখুলি বিয়ের আগ্রহ ব্যক্ত করুন। এ ব্যাপারে দারিদ্র্যকে ভয় পাবেন না; আল্লাহ তার করুণায় অভাবমুক্ত করে দেবেন। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন–وَأَنكِحُوا الْأَيَامَى مِنكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِن يَكُونُوا فُقَرَاء يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যবান ও মহাজ্ঞানী।’ (সুরা নুর: ৩২)


বিজ্ঞাপন


৪. আল্লাহ ওয়ালাদের সোহবতে থাকুন
গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার অন্যতম উপায় আল্লাহওয়ালাদের সোহবতে থাকা। তাদের মজলিসে আসা যাওয়া করলে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হয়। নেককার মানুষের সোহবতে থাকার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক। (সুরা তাওবা: ১১৯) রাসুলুল্লাহ (স.) জানিয়েছেন, ‘সৎ উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি বিয়ে করল আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ১৬৫৫)

আরও পড়ুন: পুণ্যবানদের সঙ্গে থাকার ফজিলত

৫. রোজায় অভ্যস্ত হোন
বিয়ে করা সম্ভব না হলে রোজা রাখার অভ্যাস করা যায়। যেমন কমপক্ষে আরবি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ রোজা রাখা এবং প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার অভ্যাস করা যায়। এতে পরকালীন বড় প্রতিদান ছাড়াও ইচ্ছার ওপর দৃঢ় থাকা, ধৈর্য, সহনশীলতা, নফসের খাহেশাত ও আনন্দদায়ক বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার শক্তি অর্জন হয়। অবিবাহিতদের রোজা রাখার এই উপদেশ নবীজি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিবাহ করে। কেননা, বিবাহ তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে এবং যাদের বিবাহ করার সামর্থ্য নাই, সে যেন রোজা পালন করে। কেননা, রোযা তার যৌনতাকে দমন করে। (বুখারি: ৪৯৯৬)

৬. নির্জনে থাকবেন না
একাকী না থাকার চেষ্টা করা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার অন্যতম উপায়। গোপন পাপের শাস্তি সম্পর্কে নবীজি (স.) কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আমি আমার উম্মতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা কেয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালা সমতুল্য নেক আমল নিয়ে উপস্থিত হবে, কিন্তু মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই। তিনি বললেন, তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতোই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক, যারা একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত কর্মে লিপ্ত হবে।’ (ইবনে মাজা: ২/১৪১৮)

আরও পড়ুন: যে পাপ করলে তাকওয়া হারিয়ে যাবে

৭. আল্লাহর সাহায্য চেয়ে দোয়া করুন
গুনাহমুক্ত জীবনের জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আল্লাহ বান্দার কল্যাণের দোয়াগুলো কবুল না করে পারেন না। এক্ষেত্রে এই দোয়াটি করতে পারেন- اللَّهُمَّ إِنِي أَسْأَلُكَ الهُدَى، وَالتُّقَى، وَالعفَافَ، والغنَى উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াততুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সুপথ, আল্লাহ ভীতি, চরিত্রের নির্মলতা ও অভাব মুক্তির প্রার্থনা করছি।’ (তিরমিজি, রিয়াজুস সালেহিন: ৭২) এই সুন্দর দোয়াটিও করতে পারেন—اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي، وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আলহিমনী রুশদী, ওয়া আয়িজনী মিন শাররি নাফসী।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়েত দান করো এবং নফসের অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করো।’ (তিরমিজি: ৩৪৮৩)

উল্লেখিত কাজগুলোর পাশাপাশি অন্তরে আল্লাহর ভয় বাড়ান এবং পরকালীন শাস্তির কথা বেশি বেশি স্মরণ করুন। ইনশাআল্লাহ গুনাহ ছেড়ে দিতে পারবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর