শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

যে কারণে দোয়া মুখস্থ করা উচিত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

যে কারণে দোয়া মুখস্থ করা উচিত

ইসলামে দোয়ার গুরুত্ব অনেক। এটি আলাদা একটি ইবাদত। সাহাবি নোমান বিন বাশির (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (আবু দাউদ: ১৪৮১) হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮২৯)

রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতকে দোয়া করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং প্রতিটি বিষয়ে স্বতন্ত্র দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। কিছু দোয়া নবীজি কোরআনের সুরা মুখস্থ করার মতোই মুখস্থ করাতেন। এর মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। মানুষ যেমন অফিসিয়ালি কোনো আবেদন করেন, নির্দিষ্ট ফরমেটে করলেই তা গ্রহণ করা হয়। তদ্রূপ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শেখানো বাক্যের মাধ্যমে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।


বিজ্ঞাপন


যেমন আল্লাহ তাআলা প্রথম মানব আদম (আ.)-কে দোয়া শিখিয়েছেন। তার বিবরণ কোরআনের মাধ্যমে বর্ণনা করে সব আদমসন্তানকে তা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আদম তার রবের পক্ষ থেকে কিছু বাণী শিখে নিল, ফলে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করলেন। নিশ্চয়ই তিনি তাওবা কবুলকারী, অতি দয়ালু।’ (সুরা বাকারা: ৩৭)

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে জান্নাত ওয়াজিব

এরকম অনেক দোয়া পবিত্র কোরআনেই আল্লাহ তাআলা তুলে ধরেছেন, যেন বান্দা ওখান থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করে এবং দোয়াগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আবেদন করতে পারে। যেমন গুনাহ মাফের দোয়া, মা-বাবার জন্য দোয়া, জান্নাত কামনা করে দোয়া, দুনিয়া আখেরাতের কল্যাণ কামনায় দোয়া ইত্যাদি। একইভাবে নবীজি (স.)-ও অনেক দোয়া শিখিয়েছেন, যেগুলো মুখস্থ করা উচিত, যেন প্রত্যেকটা বিষয়ে যথাযথ বাক্যের মাধ্যমে দোয়া করা যায়। সাহাবিদের মাতৃভাষা ছিল আরবি। তাঁরা চাইলে আরবিতে নিজের মতো করে দোয়া করতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা সেটার চেয়ে নবীজির শেখানো এবং আল্লাহ তাআলার শেখানো দোয়াগুলোর প্রতি জোর দিতেন এবং মুখস্থ করে রাখতেন। আমাদেরও সেটাই করা উচিত।

দোয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করা। মূলত রাসুলুল্লাহ (স.) চেয়েছেন উম্মতের যেন সর্বদা আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক থাকে। সেটি যেন মাসনুন পদ্ধতিতেই হয়। আর দোয়া তো আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্কেরই একটি মাধ্যম। কোরআনে কারিমে এসেছে, ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ (সুরা গাফির: ৬০)


বিজ্ঞাপন


অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয়ই নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে।’ (সুরা বাকারা:  ১৮৬) বান্দা কিছু চাইলেই আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন। না চাইলে তিনি নারাজ হন। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে না চায়, তার ওপর তিনি অসন্তুষ্ট হন। (সুনানে তিরমিজি: ৩৩৭৩)

আরও পড়ুন: সেজদাতে বাংলায় দোয়া করা যাবে?

এমনকি ছোট-বড় সব কিছুতেই আল্লাহ তাঁর কাছে চাওয়া পছন্দ করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, তোমরা আল্লাহর কাছে সবকিছু চাও, এমনকি জুতার ফিতার প্রয়োজন হলেও, কেননা আল্লাহ তাআলা ব্যবস্থা না করলে তোমার জন্য তা সহজে ব্যবস্থা হবে না। (মুসনাদে আবি ইয়ালা: ৪৫৬০)

কোরআন হাদিসে বর্ণিত দোয়া জানা না থাকলে বাংলায় কিংবা অন্য ভাষায় নেক দোয়া করতে নিষেধাজ্ঞা নেই। আরবি ছাড়াও বান্দা নিজের ভাষায় দোয়া করার অনুমতি আছে। এখানে যেটা বলা হচ্ছে, সেটি হলো- কোরআন হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোই উত্তম ও নির্ভেজাল। তবে, নামাজের ভেতরে দোয়া করলে তা অবশ্যই আরবিতেই করতে হবে। কেননা নামাজে যা কিছু করা হয় তা শরিয়ত নির্ধারিত এবং সবকিছু ইবাদতের অংশ। সুতরাং নামাজে অন্য ভাষায় দোয়া করলে নামাজ হবে না। (আদদুররুল মুখতার: ২/২৩৩-২৩৪,  ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ২/৩, বাহরুর রায়েক: ১/৫৭৬; ফতোয়ায়ে শামি: ১/৫২১)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রতিদিনের মাসনুন দোয়াগুলো পাঠ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর