পুরুষের জন্য একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের সুযোগ রেখেছে ইসলাম। একসঙ্গে একই দিনে হোক বা সময়ের ব্যবধানে হোক। কিন্তু একাধিক বিয়ে করার অনুমতি শর্তহীন নয়। ভরণপোষণ, আবাসন ও শয্যাযাপনের ক্ষেত্রে শতভাগ সমতাবিধান নিশ্চিত করা না গেলে একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘...তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে—দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)...।’ (সুরা নিসা: ৩)
মুসলিম উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি, নারীর সংখ্যাধিক্য বিচারে নারীকে স্ত্রী মর্যাদা দিয়ে সমাজকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করা, হায়েজ-নেফাস ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতায় জৈবিক চাহিদার হারাম পথ বন্ধ করা, সম্পর্ক বাড়ানোর বৃহত্তর স্বার্থ ইত্যাদি হেকমতে একাধিক স্ত্রী রাখার এই বৈধতা রেখেছে ইসলামি শরিয়ত।
বিজ্ঞাপন
তবে, একাধিক স্ত্রী রাখার ব্যাপারে ইসলাম মোটেও উৎসাহিত করেনি। বরং বারেবারে সতর্ক করেছে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা যতই ইচ্ছে করো না কেন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনই পারবে না, তবে তোমরা কোনো একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না...।’ (সুরা নিসা: ১২৯)
আরও পড়ুন: দুইবার বিয়ে হওয়া নারী জান্নাতে কোন স্বামীর কাছে থাকবে?
এই আয়াতের তাফসিরে এসেছে, ভালোবাসা ও স্বাভাবিক মনের টান একজনের প্রতি অবশ্যই বেশি থাকবে। তাই বলে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে উনিশ-বিশ করা যাবে না। শরিয়ত নির্ধারিত অধিকার যেমন, রাত্রীযাপন, সহবাস, খোরপোষ ইত্যাদির ব্যাপারে অবশ্যই ন্যায়বিচার করতে হবে। সেটা না করতে পারলে তার একাধিক বিয়ের সুযোগ নেই, বরং একটি বিয়েই করতে হবে। যার কথা অন্য আয়াতে বলা হয়েছে যে- فَاِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تَعۡدِلُوۡا فَوَاحِدَۃً ‘আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনে সীমাবদ্ধ থাকো’ (সুরা নিসা: ৩)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তির দুইজন স্ত্রী আছে, কিন্তু তার মধ্যে একজনের দিকে ঝুঁকে যায়, তবে কেয়ামতের ময়দানে সে এমনভাবে উঠবে যে, তার শরীরের এক পার্শ্ব অবশ হয়ে থাকবে।’ (আবু দাউদ: ২১৩৩; তিরমিজি: ১১৪১; ইবনে মাজাহ: ১৯৬৯; আহমদ: ২/৪৭১)
বিজ্ঞাপন
ইসলামপূর্ব যুগে কারও কারও ১০টি পর্যন্ত স্ত্রী থাকত। ইসলাম এটাকে চারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। কায়েস ইবন হারেস বলেন, ‘আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন আমার স্ত্রী সংখ্যা ছিল আট। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে এলে তিনি আমাকে বললেন, ‘এর মধ্য থেকে চারটি গ্রহণ করে নাও’। (ইবনে মাজাহ: ১৯৫২, ১৯৫৩)
আরও পড়ুন: ৪ আমলেই নারীর জান্নাত
উল্লেখ্য, দুই বোনকে একসঙ্গে বিয়ে করা জায়েজ নেই। আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘আর দুই বোনকে একত্র (বিয়ে) করা (তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা নিসা: ২৩)
স্ত্রী মারা গেলে কিংবা তালাকপ্রাপ্ত হলে ইদ্দতের পর স্ত্রীর বোনকে বিয়ে করতে পারবে। ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, ‘মাহরাম দুজনকে একত্রে বিবাহ করা হারাম। এ ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, একজনকে পুরুষ ধরলে অন্যজনের সাথে বিয়ে শুদ্ধ হয় না এমন কাউকেও বিয়ে করা বা বিবাহে একত্র করা হারাম। চাই উভয়ের মাঝে বংশের আত্মীয়তা হোক বা দুগ্ধ সম্পর্কের। উভয়ে একত্রে বিয়ে করা জায়েজ নেই। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৭৭)
প্রসঙ্গত, একাধিক স্ত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে ঘুমানোর ব্যাপারেও শরিয়তের বিধি-নিষেধ আছে। বৈরিতা ও ঈর্ষার কারণে এতে উভয়ের ক্ষতি হতে পারে।’ (আলমুগনি: ৭/৩০০) তাছাড়া নবীজি বলেছেন, ‘পুরুষ পুরুষের এবং নারী নারীর সতর দেখবে না।’ (মুসলিম ৩৩৮) আর নারীর সামনে নারীর সতর হচ্ছে, নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত।’ (হেদায়া: ২/৪৪৫; হিন্দিয়া: ৫/৩২৭; বাহারুর রায়েক: ৯/৩৫৪) এক স্ত্রীর সামনে আরেক স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করাও ইসলামে নিষেধ। হাসান বসরি (রহ) বলেন. ‘সাহাবায়ে কেরাম ও শীর্ষ তাবিঈগণ ‘ওয়াজাস’-কে ঘৃণা করতেন। আর ওয়াজাস মানে এক স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করার সময় অপর স্ত্রী আওয়াজ শুনতে পাওয়া। আর ঘৃণা করা দ্বারা পূর্ববর্তীগণ উদ্দেশ নিতেন, হারাম মনে করা।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা: ৪/৩৮৮)

